আমার বন্ধু রুবি (ছোট গল্প) সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমার বন্ধু রুবি (ছোট গল্প)

এক
অনেক বছর কেটে গেছে! ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য বিখ্যাত, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষ করে, আমি সুবোধ বালকের মত দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, এদেশে একটা ভাল অফার পায়ে দলে।  আমার এমন সিদ্ধান্তে বন্ধু, এমন কি শিক্ষক মহলও খুবই বিস্মিত এবং ব্যথিত!  সবাই বলছেন, "তুমি একজন 'হোপলেস'-এর মত কাজ করতে যাচ্ছ! যখন বুঝতে পারবে তুমি ভুল করেছিলে, তখন তোমার আর শোধরানোর সময় আর সুযোগ কোনটিই পাবে না!' 
 
মানুষের জীবনে কতই তো এমন হয়! তাই কি মানুষের জীবন-জীবিকা থেমে থাকে? আমার বিশ্বাস বেঁচে থাকলে আমি আরও এমন সুযোগ করে নিতে পারব। সুযোগ কেউ কাউকে দেয় না, কাজ করে, শ্রম দিয়ে, ঘাম ঝরিয়ে সুযোগ তৈরি করে নিতে হয়। আর ভাগ্য? "বোকারাই ভাগ্যে বিশ্বাস করে কিন্তু তারা ভাগ্য গড়তে জানে না ।" 

আমাদের ক্লাশে ২১ টা দেশের ৩৩ জন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। তাঁদের ২১ জনই ফুল ব্রাইট স্কলার! তাঁদের মধ্যে একজন পরীর মত সুন্দর মেয়ে! সুন্দর বলতে আমি কেবল বাহ্যিক সুন্দরের কথা বলছি না, বলছি মনের আর হৃদয়ের কথাও! বাহ্যিক চেহারার যে সৌন্দর্য তা কেবল চোখে কিছুদিন লেগে থাকে, হৃদয় আর মনকে স্পর্শ করে না! আর তাই মানুষ কেবল বাহ্যিক সুন্দরের জন্য আরেক জন মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হয় না, সে নিজের চেয়ে অন্য কাউকে মূল্যবান মনে করে, যখন তাঁর মধ্যে ভেতরের অন্যরকম সৌন্দর্য আবিস্কার করে! আমি এমন বিরল ব্যক্তিত্বের একজন মেয়ের দেখা পেয়েছি এখানে, যার ভেতর টা বাইরের চেয়েও অন্যরকম সুন্দর! আমি কেবল মুগ্ধ হৃদয় আর মন নিয়ে তাকিয়ে থেকেছি; আর মনে মনে বলেছি, 'এই মানুষ টা যদি আমার বন্ধু হত!'  
এমন পরিপূর্ণ মানুষের বন্ধু হতে পারা টা হবে অতীব সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করত, তুমি পরিপূর্ণ মানুষের বন্ধুত্ব চাও, না স্বর্গ? আমি চোখ বন্ধ করে প্রথম টাই বেঁছে নিতাম। 

পাঠক প্রতিক্রিয়াঃ 
জজং তোমার লেখা গল্প টা পড়ে আমি সত্যি সত্যিই অভিভূত। লেখায় লিখে ভাব প্রকাশ করতে পারছি না। অনেক ভালো লাগে তোমার লেখা গুলো পড়তে।

আমাদের ক্যাম্পাস টা অন্যরকম মুগ্ধতা ছড়ায়। অসম্ভব রকমের সুন্দর! ক্যাম্পাসে বার বার যেতে ইচ্ছে করে কারণে অকারণে। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে ছাড়িয়ে যে আমার মত অনেক ছাত্রের হৃদয়কে স্পর্শ করতে পেরেছে সে ঐ এক মেয়েই।  
     আমাদের ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস! আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর ক্যাম্পাস! 
দুই
মানুষের ভাল সময় গুলো রকেটের চেয়েও দ্রুত শূন্যে উড়ে মুহূর্তে মিলিয়ে যায়! মনে হয় ছোট বেলার খাওয়া 'হাওয়াই মিঠাই'-এর মত, বুঝে উঠার আগেই কোথায় নিমিষে অদৃশ্য হয়ে  যায়। ঐ মেয়েটি কোন এক শীতের বিকেলে আমাকে "আমরা কি একে অপরের ভাল বন্ধু হতে পারি না?" যখন বলল, তখন আমাদের কোর্স প্রায় অর্ধেক শেষ! 
              প্রফেসর রজিতা লেইক এর সাথে,  টিচিং মেন্টর     
দেখতে দেখতেই আমাদের কোর্স শেষ! রেজাল্টও হয়ে গেছে। এখন শুধু যার যার দেশে ফিরে যাবার পালা! বিখ্যাত গল্পকার সমারসেট মম এর 'দ্য লাঞ্চন' গল্পের বিখ্যাত লাইনের মত দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে কেবল বলা, "How does time fly?" এছাড়া আর করার কিছু নেই। কিন্তু মনে হয় এই ত সেদিন, এই ত সেদিন এলাম। হ্যাঁ, সময় কত দ্রুত বয়ে যায়! 
              অধ্যাপক যশুয়া পিএইচডি, আমেরিকান ট্রাডিশান এন্ড কালচার, এবং বন্ধুদের সাথে 
আমি দেশে ফিরে যাব এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত! শিক্ষকদের উপদেশ, অনুরোধ, আদেশ কোনটাই শুনলাম না। তাই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ একজন চৌকস মেয়েকে দায়িত্ব দিয়েছেন আমাকে বুঝানোর জন্য, কেন আমার আমেরিকায় পিএইচডি'র স্কলারশিপটা খুব গুরুত্বপূর্ণ! বোধ করি তাঁরাও ভেবেই নিয়েছিলেন যদি কাজ হয় এই 'দাবার চালেই বাজিমাত' হবে!  
নর্থ - ইস্ট হাই স্কুল -এর ইংলিশ শিক্ষক, কলিগ, মিস এলি স্টিল। এত হাসি-খশির মানুষ দেখি নি! 
দায়িত্বপ্রাপ্ত এই মেয়েটি দুর্দান্ত মেধাবী। একজন সব্যসাচী মেয়ে। কথায়, কাজে, কবিতার আড্ডায়, গল্পে, গানে, নাচে, বক্তৃতায়, উপস্থাপনায়, খেলাধূলায়, নেটওয়ারকিং-এ এক কথায় অলরাউন্ডার! তার তুলনা শুধুই সে নিজেই, অন্য কারোর সাথে সে অতুলনীয়। ও তুলনাহীনা! 
অধ্যাপক লইস ম্যাকগি, পিএইচ ডি ! আমেরিকায় আসার আগে গল্পে পড়েছি, "আমেরিকান রা মানুষ মারা গেলে কাঁদে না, ওরা কুকুর বিড়াল মারা গেলে কাঁদে!" কিন্তু অধ্যাপক লইস - এর মা যেদিন মারা গেলেন, তিনি কয়েক ঘণ্টা দেরীতে ক্লাসে এলেন, ক্লাসের শুরুতে ৩০ মিনিট শুধুই কাঁদলেন মায়ের জন্য ! আমাদের দেশে আমেরিকান মানুষ নিয়ে গল্প গুলো ভুল ভাবে উপস্থাপনা করে থাকে! 
সব থেকে তাঁর যে গুণ টা আমাকে মুগ্ধ করেছে, সে হলো সব মানুষকে মন থেকে 'রেস্পেক্ট' করতে পারার অসীম ক্ষমতা! আমাদের অনেকেই পরস্পরকে 'সম্মান' দেখাই না! কিন্তু সে ভীষণ রকম সম্মান করে প্রত্যেককেই! মানুষের ভাষা,  সাহিত্য, সংস্কৃতি, পছন্দ, অপছন্দ, তাঁর মুল্যবোধ, সর্বোপরি মানুষের অসম্ভব সব ভেতরের স্বপ্নকে জাগিয়ে তোলা, অনুপ্রাণিত করা, সম্মান করা - এটা আমি একজন মানুষের ভেতর এতটা গভীরভাবে প্রোথিত হতে দেখি নি!  
  সহযোগী অধ্যাপক মারা ব্লেইক ওয়ার্ড এর সাথে। তাঁর সাথে মান-অভিমান-ঝগড়া কোন টাই বাদ যায় নি । এখনও তাঁর সাথেই আমার যোগাযোগ বেশী হয় । প্রথমে নাক উঁচু মনে হলেও পরে বুঝলাম তাঁর মত সহজ - সরল মানুষ কম হয় । 
ওর মা ইটালিয়ান, বাবা আমেরিকান। সে অসম্ভব 'অরূপ রূপের সন্ধানে' যাওয়া নাবিকের না দেখা দ্বীপের মতন  সুন্দর। এ যেন বিখ্যাত কবি জন  কীটস-এর লাইনের মত, "Heard melodies are sweet, but those unheard are sweeter!" সে আমার কাছে ঠিক এই কীটসের 'Unheard- না শুনা' গানের মতোন সুন্দর! যতই ওকে দেখছি ততই মনে হয়েছে আরও কত কিছু দেখা হয় নি তার 'সুন্দরের ঝাঁপি' থেকে!  
  'লিবার্টি বেল'-এর সামনে সহযোগী অধ্যাপক মারা ব্লেইক ওয়ার্ড এর সাথে ক্লাসের কিছু বন্ধুদের সাথে 
আমাদের ক্লাশে আমাদের দু'জনের মধ্যে অসম্ভব রকমের পড়াশুনায় কম্পিটিশান। প্রথম সেমিস্টারে প্রথম পরীক্ষায় আমি ডবল জিরো পেয়েছিলাম! ঐ সেমিস্টারে সেই প্রথম হয়েছিল। আমার ডাবল জিরো পাওয়া  নিয়ে সবাই হাসাহাসি করলেও সে একদম হাসে নি। বরং ও আমাকে একদিন আলাদা ডেকে বলেছিল, "তোমার কি ব্রিটিশ আর আমেরিকান ইংলিশ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে? আমেরিকান ভাষা, সংস্কৃতি, 'আমেরিকান ড্রীম' বুঝার সমস্যা থাকলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি! আমরা আলোচনা করে যে কোন প্রব্লেম সল্ভ করতে পারি! " 
   ড্রেক্সেল ড্রাগন 
ক্ষণে ক্ষণে আমার মধ্যে যে 'কালচারাল শক' ভয়াবহ হয়ে উঠছিল, তা এই সহপাঠি আমাকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। সে আমাকে বলেছিল, "আমি আছি, আমরা আরও ৩২ জন তোমার সাথে আছি, তুমি হতাশ হয়ো না, তুমি অবশ্যই ভাল করবে। তোমার যখনই কিছু লাগবে, আমাকে জানাবে। তুমি আমার রুমেও চলে আসতে পার যে কোন সময়! ইতস্তত করো না যেন। মনে করো আমি তোমার একজন বন্ধু।"  
ওয়াশিংটন ডিসি তে ক্যাপিটল হিল এর সামনে ক্লাস-মেট ও কলিগদের সাথে 
আমরা এখানে একই ইন্টারন্যাশনাল হলে থাকি। আমেরিকায় একই হলে ছেলে মেয়ে থাকে এক সাথে, শুধু রুমগুলো আলাদা! এতে কোন সমস্যা হয় না । আর আমাদের দেশে আলাদা বিদ্যালয়, আলাদা হল, আলাদা দেয়াল তুলে দিলেও সমস্যার অন্ত নেই! আসলে আমাদের সমস্যা চিন্তায়, চেতনায়, হৃদয়ে, মননে, মগজে। সে সমস্যা বই পড়লে কেটে যাওয়ার কথা! আসলে বাঙ্গালি জাতি বই পড়েন, জ্ঞান অর্জনও করেন, তারপর  নিজের ভেতর বাক্স তৈরি করে, সে বাক্সে সব জ্ঞান বন্দি করে রাখেন। ফলে অর্জিত জ্ঞানগুলো দেশ - জাতির তো নয়ই, নিজের জন্যও প্রয়োজনে কাজে লাগে না! একবার ভাবুন তো, সেবা প্রকাশনীর লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন প্রায় অর্ধ শতাব্দী কত কত বিদেশী থ্রিলার আর গোয়েন্দা গল্প বই অনুবাদ করে সবাইকে পড়ালেন; জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ কত কত বই লিখে পাঠকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখলেন ৫০ বছরেরও বেশী সময় কাল! কিন্তু পুরো দেশে কয়জন সত্যিকারের মানুষ হয়েছেন? কয়জন মানুষকে আমরা আমাদের দুর্দিনে পাশে পাই? চালে-তেলে-ডালে, মাছে-মাংসে-ডিমে সবখানেই তো ভেজাল! শিশু খাদ্যে ভেজাল, বাচ্চাদের দুধে ভেজাল। স্কুল ভেজাল, কলেজ ভেজাল, ভেজাল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় সরকারী অফিস পাড়ায় ঘুষের পসরা সবখানে! বই পড়ে পড়ে সত্যি মানুষ হচ্ছে কোথায়? 
পাঠক প্রতিক্রিয়াঃ 
"সহজ সাবলীল ভাষায় লেখা তোর গল্পটি ভালো লেগেছে। দেশপ্রেম ও বন্ধুত্ব এ বিষয় দুটি আমাকে বেশি আকৃষ্ট করেছে। বর্ণনার মাঝে কিন্তু যেসব মানবীয় গুণাবলীও এনেছিস, সেগুলোও দৃষ্টি এড়ায়নি। একটা বিষয় খুব ভালো লেগেছে, একজন মেয়েকে তুই শুধুমাত্র নারী নয়, একজন মানুষ হিসেবে দেখিয়েছিস। কমিটমেন্টের বিষয়টাও এসেছে। " বিনয়ী হওয়া এত সহজ নয়" এই কথার গভীরতা টা কিন্তু অনেক! মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সমসাময়িক অনেক কিছুই এসেছে তোর গল্পে। অন্যরা কে কি বলবে জানি না তবে আমার মনে হয়েছে ছোট গল্পকার হিসেবে তুই সার্থক।
দোয়া করি পৃথিবীর যে প্রান্তে, যেখানেই থাকুক না কেন আমাদের বন্ধুরা, সবাই ভাল থাকুক।"
- সালমা জেসমিন, সহপাঠী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের-এর জন্য দুঃখ হয়! তিনি সারা টা জীবন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র করে গ্রামে-গঞ্জে, স্কুল-কলেজে বই পৌঁছে দিয়েছেন প্রায় ৪০ টি বছর! কিন্তু দৃশ্যতঃ ফলাফল শূন্য! আফসোস! বড় বড় ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-সচিব ছাড়া কিছুই বানাতে পারেন নি তিনি!  বাইরে কোথাও কোন মেয়ে একা বেরুলে চতুর্দিক থেকে 'শিষ' তীরের মত ছুটে আসে! বই পড়ে পড়ে কি আমাদের ছেলেরা বখাটে হয়ে গেল সব? এসব নিয়ে ভাববার কোন মানুষ কি আমাদের সত্যি আছে দেশে? কিন্তু এই দেশ টা 'সোনার বাংলা' হওয়ার কথা ছিল!  
শুধু ছেলেদের কথা বলছি! বই পড়ে পড়ে মেয়েরা সব নারী হয়ে উঠলেন! তারপর মা হয়ে গেলেন আর ছেলেদের শেখালেন, "কারো ঝামেলার মধ্যে যাবি না! সোজা স্কুলে যাবি, ভাল রেজাল্ট করবি, চাকুরী করবি, ফ্যামিলি দেখবি!  তোর বৈজ্ঞানিক হতে হবে না, দার্শনিক হবে হবে না, গবেষক হতে হবে না, রাজনিতিক হতে হবে না, তুই খালি সফল মানুষ হবি; তোর সার্থক মানুষ হতে হবে না! মিছিল-মিটিং-এ যাবি না। বাইরে গণ্ডগোল হলে শাড়ি-চুড়ি পড়ে বাসায় থাকবি!" শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, সমালোচক ড সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন এই দেশে, "কোন বিজ্ঞানী নেই, গবেষক নেই, দার্শনিক নেই, যেদিকে তাকাবেন, শুধুই প্রশাসক।" 
তবে আমার কাছে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি'দের বেশ সাহসী মনে হয় আমার কাছে। ছাত্র - ছাত্রীদের উপর মস্তানি টা প্রায় সবাই ভাল দেখাতে পারেন! বোধ করি উনারা মিছিল-মিটিং করা ছেলে-পেলে! সন্তানতুল্য ছাত্র-ছাত্রীদের পুলিশ বাহিনী দিয়ে বেধড়ক পিঠিয়ে, সাউন্ড গ্র্যানেড ছুঁড়েও, এই অমানবিক, বিবেকহীন অধ্যাপকগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থেকে যান, কি হীরক রাজার দেশে বাস করি আমরা! কি নির্লজ্জ এক জাতি আমরা সবাই তামাশা দেখি চুপচাপ!  ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি গণ সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়া ভিসি'র পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থন করেন। আহা আমাদের সাত রাজার ধন ভিসি মহোদয়গণ! শাবাশ! 'ধন্য তাঁহারা যাহারা নিজের চেয়ার বাঁচানোর জন্য সন্তানতুল্য ছাত্র-ছাত্রীদের উপর গ্রেনেড ছুঁড়িয়া মারে!' এই দেশ সেরা সন্তান ভিসি গণকে বেতন দিয়ে পুষছি আমাদের প্রিয় সন্তানদের বেধড়ক পিটান আর গ্রেনেড ছুঁড়ে মারার জন্য!  
আহা! এই ছাত্র-ছাত্রীদের বুঝি কেউ নেই, না বাপ, না মা! ওদের "কোথাও কেউ নেই।" ওরা 'হাফুরু' থেকে বেরিয়ে এসেছে! 
আমাদের দেশে বুঝি "সেই ছেলে" আর আসবে না, যে "কথায় না বড় হয়ে, কাজে বড় হবে!" সেই ছেলে এসেছিলেন, তাঁকে আমরা ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট খুন করে ফেলেছি! আমরা হয়ত এখন আবৃত্তি করব অনেক বছর, "রাত পোহাতে কত দেরী, পাঞ্জেরী?" 
মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে! আমিও স্বপ্ন দেখি, একদিন 'সেই ছেলে' আবারও জন্ম নিবে এই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায়। তাঁর জাদুর ছোঁয়ায় বদলে যাবে বাংলাদেশ। সে বাংলাদেশ কেবল রাস্তা-ঘাট করবে না, শুধু  বড় বড় অধ্যাপক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সচিব, আইনজীবী,  লেখক - বুদ্ধিজীবী তৈরী করবে না, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত অমানবিক দানব ভিসি তৈরি করবে না; তৈরী করবে সত্যি ভাল মানুষ। তৈরী করবে গবেষক, বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, রাজনিতিক। সাথে সাথে তৈরী করবে মানবিক এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক 'সিস্টেম' যা দানব হওয়া রোধ করবে! 'দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন' করবে! অসম্ভব কি এই স্বপ্ন! 
  
  মিস আমিরা মাটি, ইউ এস ডিপার্টমেন্ট অব স্ট্যাট, IREX- এর সিনিয়র কর্মকর্তা  
সে যাই হোক, পরের পরীক্ষায় আমি ১০০ থেকে ১১০ পেলাম! আমি ভাবলাম এবারও হয় তো ১০ নয় তো ১১ পেয়েছি! ড নানা ডিয়েনা হয় তো ভুল করে ১১০ লিখে ফেলেছেন! ১০০ থেকে ১১০ হওয়ার তো কোনই সুযোগ নাই। আর রাতারাতি ডাবল জিরো থেকে এত ইম্প্রুভ করার সম্ভাবনাও নাই! আমি ভয়ে, লজ্জায়, অপমানে কুঁকড়ে গিয়েছিলাম! একজন  স্কলারশিপ প্রাপ্ত ছাত্রের জন্য ব্যাপার টা কতটা লজ্জার, কতটা অপমানের তা কাউকে বলে বুঝাতে পারব না। কাউ কে এই পোড়া মুখ দেখাতেই পারছি না! আমাদের ক্যাম্পাসের নিচে, মাটির ভেতর দিয়ে সাবওয়ে ট্রেন যায়। আমি ভাবছি ফেরার পথে সে সাবওয়ে ট্রেনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইহজগতের সব লজ্জা আর অপমানের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাব কি না?   
  মিঃ বেন্টন, সিনিয়র কর্মকর্তা, ইউ এস ডিপার্টমেন্ট অব স্ট্যাট 
এই সুন্দর পৃথিবীতে কে না বাঁচতে চায়? আমিও চাই! রবি ঠাকুরের 'মরিতে চাহি না আমি এই সুন্দর ভূবনে, মানবেরই মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই!' এর মতোন করে বাঁচতে চাই। 
তাই খানিক টা সাহস করে অধ্যাপকের কক্ষে গিয়ে বললাম, 'ড ডিয়েনা, তুমি আমাকে ১১০ দিয়েছ! নাকি এটা ১১ কিংবা ১০ হবে? 
তিনি বললেন, 'মিস্টার মেঘ, তুমি ১০০ থেকে ১০০ পেয়েছ, প্লাস ১০ বোনাস মার্ক দিয়েছি কারণ তুমি আমার ধারণার বাইরে ভাল করেছ! তুমি 'আউট অব দ্য বক্স' চিন্তা করতে শুরু করেছ! গত ৫-৭ বছরে এত টা শ্রম, সময় আর যত্ন দিয়ে লেখা এসাইন্মেন্ট আর পরীক্ষার খাতায় উত্তর গুলো গুছিয়ে লেখা ছাত্র আমি আমাদের ডিপার্টমেন্ট - এ পাই নি! অভিনন্দন মেঘ! গ্রেট জব! কীপ ইট আপ মাই সান !' 
    বন্ধুদের সাথে হোটেলে লাঞ্চের আড্ডায়  
'ধন্যবাদ' বলে ড ডিয়েনার রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। মন চাইছিল এই মুহূর্তে রিক্সায় করে ফিলাডেলফিয়ার পুরোটা  শহর টা ঘুরে বেড়াই। কিন্তু আমেরিকার ফিলাডেলফিয়া শহরে কোথায় পাব ৩ চাকার রিক্সা? 'মন চাই উড়তে উড়তে, মন চায় উড়তে উড়তে' করে কেটে গেল সারাটা সকাল। জীবনে এই প্রথম জানলাম ১০০ থেকে ১১০ নম্বরও পাওয়া যায়! 
আমাদের দেশের মাষ্টার আর অধ্যাপক মশাইগণ মনে হয়  হার কিপটে! যত ভাল লিখি ৬০ নম্বর দিতেই যেন তাঁদের জান বের হওয়ে যায়! মনে হয় উনারা উনাদের ব্যাংক থেকে টাকা গুনে গুনে আমাদের নম্বর দিচ্ছেন। অথচ এখানে কেউ ৮০-৯০ নম্বর এর নিচে পাচ্ছেই না! যারা আমাদের মত একটু ভাল, তারা ৯৭-১০০ ত পাচ্ছেই, ওদেরকে উৎসাহ দিতে ১০৫-১১০ দিয়ে দিচ্ছেন বোনাস মার্ক দিয়ে! ভাবা যায়? 
বাংলাদেশের কত ছেলে-মেয়েকে দেখেছি এই নম্বরে গ্যাঁড়াকলে পড়ে স্কলারশিপ হারাতে! আর ইংরেজি বিভাগ থেকে যারা পাশ করেছেন, তাঁদের অবস্থা ত গুরুচরণ। ওদের মার্কস থাকে ৪৫-৫৭%। এই নাম্বার নিয়ে কোথাও কোন ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দাঁড়ান যায় না। কে বুঝবেন আমাদের কস্টের কথা? শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ কি এদিকে একটু নজর দিবেন?  
সে যাই হোক, ১১০ নয়, আমি যেন আমার আমিকে আবারও ফিরে পেলাম! প্রকৃত পক্ষে পরের সেমিস্টারেই আমি প্রথম হয়ে অনেকের নজরে পড়লাম!   
   ড বারবারা হকিয়ে, অধ্যাপক এবং পরিচালক, ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার 
এই কৃতিত্ব আসলে আমার একার নয়! আরেক জনের সহযোগিতা না পেলে হয় তো নিজেকে আর নতুন করে আবিস্কার করতেই পারতাম না এই বিদেশ বিভূইয়ে!  

কম বেশি সবাই, সকল দেশেই, ভালো ছাত্রদের প্রতি বেশ দুর্বল! বোকাসোকা হলেও আমিও ভাল ছাত্রদের কাতারে পড়ে গেলাম এবার। এবার আলাদা নজরে পড়ে গেলাম ঐ ইটালিয়ান-আমেরিকান মেয়েটিরও।   
   ক্লাসমেট মাইক, ক্যাট সিসি'র সাথে 
আমরা এখন অসম্ভব রকম ভাল বন্ধু। আমরা আমাদের সব কিছু শেয়ার করতে পারি, মন খুলে কথা বলতে পারি, যে কোন প্রব্লেম আলোচনা করে সমাধান করে ফেলতে পারি। ক্যাম্পাসের অনেকেই ধরেই নিয়েছে আমরা 'একে ওপরের প্রেমে হাবুডুবু' খেতে শুরু করেছি!দিও সে সুযোগ আর সময় জীবনে আর অবশিষ্ট নেই! কেন নেই সে প্রসঙ্গ না বলি, বুঝে নিবেন সবাই ...  
  ওয়াশিংটন-এর ক্যাপিটল হিল এর সামনে আমার বন্ধুদের সাথে 
না, খুলেই বলি, আপনারা আবার কি না কি ভেবে বসে থাকেন!  দেশে আমার এক 'নাটোরের বনলতা সেন' বসে আছে আমার প্রতীক্ষায়! কমিটমেন্ট আছে! তাই 'হাবু ডুবু খাওয়া'র আগে আমাকে এক পা সামনে ফেলি ত দুই পা পেছনে ফেলতে হয়! 
তারপরেও আমি ত আর যিশু নই! 'রক্ত মাংসের মানুষ, বড়ই দুর্বল।' 

তিন
আমাদের ক্যম্পাস লাগোয়া 'সিতার ইন্ডিয়া' রেস্টুরেন্ট। আমার খুব প্রিয়! মাত্র ১০ ডলারে এখানে বুফেই খাওয়া যায়। আমাদের দেশে যাকে আমরা 'পেট চুক্তি' খাওয়া বলি! মেয়ে টি একদিন আমাকে এই রেস্টুরেন্ট-এ বুফেই দাওয়াত দিয়ে খাওয়ার ফাঁকে বলল, "ম্যাগ, তুমি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল টা করতে যাচ্ছ এই সময় দেশে ফিরে গিয়ে! সারাজীবন আফসোস করবে! ফিরে যাওয়ার আগে তোমার আরও ৭ বার ভেবে দেখা উচিৎ! ফুল স্কলারশিপ সবাই পায় না, বুঝার চেষ্টা করো! এই সুযোগ তোমার জীবনে আর সেকেন্ড টাইম আসবে না। আমাকে মাত্র ৮০% স্কলারশিপ দিচ্ছে, আমি থেকে যাচ্ছি! তুমিও থেকে যাও, প্লিজ! পিএইচডি করলেই তোমার জীবন টা আমুল বদলে যাবে, তুমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার হবে। আমরা দু'জন একই ফ্যাকাল্টিতে শিক্ষক হব। বিষয় টা আরেকবার ভেবে দেখো!"  
বসদের সাথে আমি গ্রীষ্মের ছুটিতে। ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটির এত প্রসংশা করেছি যে তারা সেটা না দেখে আর থাকতেই পারে নি ! 
আমি বললাম, 'দেখো, তুমি বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান। তুমি যা খুশি করতে পার। কিন্তু আমি তা পারি না। আমার দেশ গরীব। এই গরীব দেশের সরকার এবং আমার কলেজ,  যেখানে আমি অধ্যাপনা করি, আমাকে অনেক বিশ্বাস করে এখানে পড়াশুনা করতে পাঠিয়েছে। এছাড়া এই দেশের সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের সাথে আমার জেন্টিলম্যান এগ্রিমেন্ট আছে, 'আমাকে পড়াশুনা শেষে দেশে ফিরে মিনিমাম ২ বছর সার্ভিস দিতে হবে।' 
   নর্থ - ইস্ট হাই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষকদের সাথে যাদের সাথে ৩ মাস প্র্যাকটিস টিচিং করেছি । 
'জেন্টিলম্যান এগ্রিমেন্ট' লিখিত কোন চুক্তি নয়! এমন মৌখিক চুক্তি কেউ রাখে না, ম্যাগ। তুমি আবার ভেবে দেখ, প্লিজ! তুমি পিএইচডি না করে ফিরে গেলে আমার খুব কষ্ট লাগবে...' এই বলে দু'হাতে আমার হাত চেপে ধরে ও অনেক কথা বলে চলে।    
    আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন!  
আমি তার হাত না সরিয়ে ওকে বুঝানোর জন্য বললাম, 'আমি আমার দেশের সব চেয়ে ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি আমাদের গরীব কৃষক, শ্রমিক, রিকশাওয়ালাদের ট্যাক্সের টাকায়। এই দেশ স্বাধীন করার জন্য ১৯৭১ সালে পাকিস্তান জানোয়ারদের বিপক্ষে ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছেন, সম্ভ্রম হারিয়েছেন ২ লক্ষ মা-বোন! আমি আমাদের এই দুখিনী দেশে না ফিরে থেকে যাই কী করে? তাঁদের সবার প্রতি ঋণ শোধ করার জন্যই আমাকে দেশে ফিরে যেতে হবে! প্লিজ তুমি আমাকে আর অনুরোধ করে বিব্রত করো না!'  
   মিস দেবরা, এ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর, ইন্টারন্যাশনাল হল, ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয় 
মেয়েটি 'মেঘ' বলতে পারে না, ও বলে 'ম্যাগ'! আমি কতবার বলেছি, 'ম্যাগ' নয়, আমার নাম 'মেঘ'! ও বলত, "হল, আমি তোমার নাম দিলাম 'ম্যাগ'। ইংরেজিতে 'Magi' (ম্যাজাই) মানে পণ্ডিত! অই ম্যাজাই শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ হল   'Mag'! তোমার আপত্তি আছে?" 

আমি বললাম, আমাদের দেশে 'পণ্ডিত' শব্দের আলাদা আরেক টা  অর্থও আছে। যে কম জেনেও বিজ্ঞ সাজতে চায়, তাকেও আমরা পণ্ডিত বলি! যে নামেই ডাকো আমার কোন আপত্তি নেই! 
মেয়ে টি হেসে কুটি কুটি! ও বলল, 'আমি জানি, তুমি তোমার দেশকে অসম্ভব রকম ভালোবাস। আমিও কি আমার দেশকে ভালোবাসি না? ঋণ শোধ কি কেবল পাশে থেকেই করা যায়?' মেয়েটি বলেই চলে, " দেখ, তোর একটা সুযোগ আসছে, তুমি শিক্ষকতার পাশাপাশি ডক্টরেট করার সুন্দর অফার পেয়েছ। তুমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে! এই সুযোগ জীবনে দ্বিতীয়বার আসবে না। একবার জীবনে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল করলে সে ভুল আর শোধরানোর সুযোগ পাবে না। দেশ প্রেম মানে দেশে পড়ে থাকা নয়! দেশপ্রেম মানে যেখানেই থাকি দেশকে ভালোবাসা, দেশের প্রয়োজনে দেশের পাশে দাঁড়ান। ইচ্ছে থাকলে, তুমি পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে থেকেই দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারবে। সদিচ্ছা না থাকলে দেশে পড়ে থেকেও কিছুই করতে পারবে না তুমি!" 

"আমি আমার দেশের প্রয়োজনে তাঁর পাশে দাঁড়াতেই ফিরে যাচ্ছি! আমার দেশে আমাকে যেতে হবে এখনই,' আমি বললাম।   
 
আমি ওর কথা রাখি নি। বার বার অনুরোধ সত্যেও দেশে ফিরে গেছি।  দেশে ফিরে গিয়ে আবার অধ্যাপনা আর সাংবাদিকতা করেছি। 
 
চার  
অনেক বছর কেটে গেল। আমার অধ্যাপক মেরি জো গ্যরডিনা, পিএইচডি, আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তিনি চান আমি যেন খুব শীঘ্র পিএইচডি শুরু করি! কারণ তিনি ছাড়া আমাদের সময়ের আর কোন অধ্যাপক ঐ ডিপার্টমেন্ট আর নেই! হয় মারা গেছেন, নয় অবসরে চলে গেছেন। কেউ কেউ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন! তিনি চান, অবসরে যাওয়ার আগেই আমাকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে যাবেন! তাই ১৪ বছর পর ক্যাম্পাসে আমার প্রিয় শিক্ষকের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।  
   Prof. Mary Joe Gordina, PhD, ১৪ বছর পর যিনি ছিলেন মায়ের মত সবসময় 
আজ ১৪ বছর পর যখন আমাদের প্রিয় ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মেয়েটির সাথে দেখা হল, আমি ওকে একদম চিনতেই পারিনি! চিনব কী করে? তার সমান তো আমার ছেলে-মেয়ে আছে এখন। বয়স বেড়েছে আমাদের কিন্তু পুরোন বন্ধুদের সাথে দেখা হলে লাফাতে ভুলে যাই না আমরা!
   ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটিতে আমার কিছু ক্লাসমেট এর সাথে  

পাঁচ
কী আশ্চর্য! ঐ মেয়ে টি কে ১৪ বছর আগে যেমন দেখেছি, সে তেমনি আছে এখনও! বয়স যেন একটুও বাড়েনি! বয়স শুধু আমার একার বেড়েছে! ১৪ বছর আগে আমার পছন্দে কেনা অবিকল সেই জিন্স প্যান্টের সাথে টিয়া রঙের টি শার্ট, তার উপর জিন্সের জ্যাকেট পড়েছে আজও! কী ভয়াবহ সুন্দর লাগছে ওকে! একেই বোধ করি "হেলেনিক বিউটি" বলে! ওকি ইচ্ছে করেই আজ এই ড্রেস পড়েছে? সে কি জানত আজ আমি আসব এখানে?  ঐ পোশাকগুলো কি আমি কিনে দিয়েছিলাম? মনে পরছে না কিছুতেই!  

সে 'বার্ন এন্ড নোবেলস' এর পাশে আমার প্রিয় 'কফি শপ'-এ কফিতে চুমুক দিতে দিতে আমাকে জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা ম্যাঘ, সত্যি করে বল তো, তুমি বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে ভুল করেছিলে কি না? তোমার আফসোস হয়েছিল কি না কেন দেশে বোকার মত ফিরেছিলাম?"
      বার্নস এন্ড নোবেল যেখানে আমরা পরে থাকতাম 
আমি বললাম, নাহ! আমার কোন আফসোস লাগে নাই! 
- কিন্তু তুমি তো ১৪ বছর পিছিয়ে গেছ! এই দেখো, আমি এখন ড. রুবি! আমি এখন এসোসিয়েট  প্রফেসর! আগামী বছর আমি ফুল প্লেজেড প্রফেসার হতে যাচ্ছি! আর তুমি ১৪ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে পিএইচডি করার জন্য ভর্তি হতে দৌড়াদৌড়ি করছ! তুমি এখন আমার ছাত্র হবে, তাই না? তুমি যতই মুখে বলো ভেতরে ভেতরে আফসোসে তোমার হৃদয় টা পুড়ে যাচ্ছে, আমি অনুভব করছি!" 

- আমি বললাম, "আরে নাহ! আমার কোন আফসোস নেই। ১৪ বছরে হাজার খানেক কবিতা লিখেছি, ৩০০ টির উপরে গান লিখেছি, ৫০ টির উপড়ে ছোট গল্প লিখেছি, ৭ টি বই, আর ৭ টি ই-বুক প্রকাশ করেছি, শ' খানেক প্রবন্ধ লিখেছি, সফটয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর পড়াশুনা শেষ করেছি, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখাচ্ছি প্রতিদিন হাজার খানেক ছেলে-মেয়েকে ইউটিউবে, শ' খানেক কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর উপর ভিডিও তৈরী করেছি, ইন্সট্রাক্টরিতে আমার জাভা এবং পাইথন প্রোগামিং উপর কোর্স রয়েছে, বাংলাদেশের রেডিও, টেলিভিশনে আমার লেখা গান বাজে, ৫০ টির বেশি রিং টোন বাজে আমার দেশের বিভিন্ন কোম্পানির সেলফোনে! তোমার এসবের কী আছে পিএইচডি ছাড়া?

  [আমার লেখা কিছু গান শুনতে এখানে ক্লিক করুন। ] 

সে অসহায়ের মত আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "দুই - চার টা প্রবন্ধ!"

আমি বললাম, কেউ পেয়ে খুশি আর কেউ দিয়ে খুশি! আমি পৃথিবীকে কিছু দিয়েছি আর তুমি শুধু দু'হাতে নিয়েছ। তোমার সাথে আমার পার্থক্য এই! তবে এবার আমি তোমার মত নিতেই আমেরিকা ফিরে এসেছি! আমি খুব সুখি মানুষ! আমার জীবনের সেরা এবং সোনালি সময় টা আমি আমার জন্মভূমি 'বাংলাদেশ' কে দিয়ে আসতে পেরেছি! যদি এটা করতে না পারতাম আমি খুব কষ্টে জীবন পার করতাম ...
"তা এই বার যদি পিএইচডি টা করেই ফেলতে পার, দেশে আগের মত দৃঢ়তার ফিরতে পারবে ত?" রুবির প্রশ্ন টা একটু বাঁকা মনে হল। তাই আমিও একটু ত্যাড়া করে বললাম, "তোমার কি মনে হয়? হুম?" 
"আমার মনে হয় তুমি আগের চেয়ে খানিক টা ম্যাচিউরড,  তাই আগে যে ভুল টা করেছিলে সেই একই ভুল দ্বিতীয়বার করবে না। এসোসিয়েট প্রফেসার হিসেবে অফার পেলে থেকেই যাবে, তাই না?" বলল খানিকটা বিজয়ীর ভঙ্গিতে যেন এবার আমি হারতে বসেছি!  

"নাহ! এই গত ১৪ বছরে একটু একটু করে আমার স্বপ্ন টা বড় হয়েছে। নিজের মধ্যে এটা রাখা যাচ্ছে না। পিএইচডি যদি শেষ করতে পারি, এক মুহূর্তও দেরি করব না আর!" 
"তা তোমার স্বপ্ন টা কি, শুনতে পারি?" চাতক পাখীর মত যেন উত্তরের জন্য অপেক্ষা করল রুবি। আমি ইচ্ছে করেই উত্তর টা না দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলাম কিছু টা সময়। তারপর বললাম, "দেশে ফিরে গিয়ে মধুপুরের শালবনের ভেতর বিশ্ব মানের এক টি আইটি বেইজড স্কুল -কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে চাই যেখানে সুবিধা বঞ্চিত আদিবাসী এবং অনেক গরীব মানুষের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করে এমআইটি এবং হার্ভার্ডের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে কম্পিট করবে! কিন্তু তাঁর আগে ওরা ভাল মানুষ হবে, তোমার মত!"   
'আই স্যালুট ইউ মাই বস! হোয়াট এ গ্রেট ড্রীম! হোয়াট  আ গ্রেট ফ্রেন্ড ফ্রম বাংলাদেশ! দ্যাটস হোয়াই আই রেস্পেক্ট এন্ড লভ ইউ! তুমি পারবে। আমার বিশ্বাস তুমিই পারবে' বলে রুবি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ল। আমি খেয়াল করলাম তার চোখ দু'টো কেমন চিক চিক করে জ্বল জ্বল হয়ে উঠল। ওর চোখের কোণে রুপালি মুক্তোর মত জলে ভরে গেল। সে আমার কাছ থেকে চোখের জল লুকাতে আপ্রাণ চেষ্টা করল ...   

[ দৃষ্টি আকর্ষণঃ  বাবুল ডি' নকরেক - এর ছোট গল্প গুচ্ছের ই-বুক এখন গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে! বইটি ক্রয় করতে এখানে ক্লিক করুন।  ] 

আমিও কিছুটা আবেগাক্রান্ত, তবু না বুঝার ভান করলাম। কি বলব বুঝতে পারলাম না ঠিক ঐ মুহূর্তে। তাঁর কথা শুনে একটু লজ্জিতও হলাম। আমি নিজেকে কত বড় করে ভাবছি, কত দাম্ভিক আর ঔদ্ধত্য দেখিয়ে চলছি শুরু থেকেই; আর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসোসিয়েট প্রফেসর যে আগামী বছর ফুল প্লেজেড প্রফেসার হয়ে যাচ্ছে এই মেয়ে টা কত বিনয়ের সাথে আমাকে সমীহ করে কথা বলছে শুরু থেকেই! আমার আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নের কথা শুনে সে কত অবলীলায় বলছে, "আমার বিশ্বাস তুমি পারবে!" আমার বিশাল স্বপ্নের প্রতি সম্মান জানাতে গিয়ে মনের অজান্তে কেঁদে ফেলছে! কিন্তু আমার বন্ধুদের যাকেই এই স্বপ্নের কথা বলেছি, সবাই হাসা হাসি করেছে! আমাকে পাগল মনে করেছে...  

আসলে বিনয় বিষয় টা গাছে ধরে না, এটা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সময় নিয়ে শিখতে হয়, চর্চা করতে হয়, হৃদয়ে ধারণ করতে হয়। অধ্যাপক, সাংবাদিক, সচিব, পুলিশ অফিসার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, শিল্পপতি, বিজ্ঞানী, এমপি, মিনিস্টার, ফাদার, সিস্টার, বিশপ হওয়াই যায়, কিন্তু বিনয়ী এত সহজেই হয়ে উঠা যায় না।

আমরা মানুষ সবাই জানি, যে যত বিনয়ী হয়, সে তত মানুষের কাছে সম্মানিত হয়। আর যে যত উদ্ধ্যত স্বভাবের হয়, অহংকারী হয়, সে তত অসম্মানিত হয়, তার পতন হয়  - তবুও মানুষ বিনয়ী হতে শেখে না, বিনয়ী হওয়ার প্রয়োজন মনে করে না!  বিনয়ী নই আমিও, হতে শিখিনি এখনো কিন্তু চেষ্টা করে যাই। মেয়ে টি ঠিক এখানেই আমার থেকে এগিয়ে। 
   ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের যে জায়গা টা আমার খুব ভালোলাগে 
আমি তাঁকে স্যরি বললাম! বিনয়ের সাথে বললাম, 'আমি জাস্ট কথার কথা বাজে বকছিলাম। তোমার তুলনা শুধুই তুমি! তোমার মত সব দিক থেকে সুন্দর, পরিণত মানুষ আমি দেখি নি! আমি তোমার বন্ধু হবার যোগ্য নই' বলতেই সে কপাল কুঁচকিয়ে বলছে, 'আমি এগুলো একজন মান্দি ছেলের কাছেই শিখেছি!' 
    ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিখ্যাত ড্রাগন ... 
 
লজ্জায় কি বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না! "নেই 
কাজ  তাই খই ভাঁজ!" তাই তাঁর শারীরিক সৌন্দর্যের কথা তুলতেই সে 'গোল্ডেন শাওয়ার' ফুলের মত লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল! আসলে সে দেখতেও ওরকমই। গোল্ডেন শাওয়ারের পর হয়ত 'রাধাচূড়া' ফুলের সাথে ওকে তুলনা করতে পারি! মনে হয় দুধে-আলতা কিসিমের! ওর মত সুন্দরী মেয়ে আমি পৃথিবীতে খুব কমই দেখেছি! সে কি ভেতরে, কি বাইরে, দ্যুতি ছড়িয়েছে সবখানে! এমন মেয়েকে হিদয়ের এক কোণে না রেখে পারা যায়? 
 
ছয়


   রুবির প্রতীকী ছবি ১৪ বছর আগের! 

আমি রুবির ভেতর আর বাহিরের সৌন্দর্যের বর্ণনা ঠিক করতে পারছি না। সে এক অবর্ণনীয়! তাই আমি তার কাছে তার ছিপছিপে শরীর, সুন্দর, সুশ্রী, আকর্ষণীয়, হাসিখুশি, উচ্ছল, উদ্যাম, কোমল আর বন্ধুবৎসল থাকার গোপন রহস্য জানতে চাইলাম! সে বলল, " আমি সকাল বিকেল খুব বেশি হাটি - ঘণ্টা খানেক, বেশি জল খাই, সবজি খাই প্রতিদিন, মাংস খুব একটা খাই না। ফলমূল ভীষণ প্রিয়। খাওয়ার সময় অর্ধেক পেট খালি রাখি! যদি কখনও ড্রিঙ্ক করি, সেটা ভাল লাগতে শুরু করলেই স্টপ করে দেই!" 

বাংলায় একেই বুঝি আমরা 'পরিমিত' আহার বলে থাকি! ওর কথাগুলো শুনে মনের অজান্তে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল! আর মনে মনে বললাম, ' আহারে! আমার যে গরু, খাসি আর মুরগি ছাড়া চলেই না! আমার কি হবে?'  
রুবি বলল, "তুমি আমার জন্মদিনে যে দকবান্দা, দকশাড়ি আর দমি উপহার দিয়েছিলে, সেটা আমি খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছি। তোমাদের ওখানে যখন ওয়ানগালা হয়, তখন আমি ওগুলো পরি। খুব ভাল লাগে! তোমাদের গারো আদিবাসীদের সংস্কৃতি খুব রিচ! আমার নিজেকে মান্দিদের একজন মনে হয়!" 
আমি বললাম, একদিন আমাদের দেশে বেড়াতে যেও। দেখবে আমাদের দাকবেয়াল কত সমৃদ্ধ, কত সমৃদ্ধ আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি। তুমি আমাদের ওখানে গেলে আমার বন্ধু-স্বজন তোমাকে খুতুপ পড়িয়ে, দমি পরিয়ে, নেচে-গেয়ে  সমমান জানাবে। তুমি আমাদের সংস্কৃতির প্রেমে পরে যাবে! তুমি মুগ্ধ হবে আদিবাসী মানুষের আতিথেয়তায়! তুমি সত্যি যাবে আমাদের সোনার বাংলাদেশে একদিন? 
"অবশ্যই যাব একদিন! তোমার কাছে তোমাদের মানুষের গল্প আর দেশের গল্প শুনেই আমি বাংলাদেশের প্রেমে পরেছি। আমি অবশ্যই বাংলাদেশে বেড়াতে যাব সময় করে!" রুবি বলল উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে। 


সাত
আমার ফিরে যাবার সময় হলে আমি বললাম, 'আজ ফিরে যেতে হবে। আবার দেখা হবে, বন্ধু। রুবি বলল, 'তোমাকে কত্ত মিস করি আমি! কত্ত কত্ত ইমেইল যে লিখেছি তার হিসেব নেই, উত্তর দাওনি কেন?'

আমি বললাম, আমার পুরোন ইমেইল-এর এক্সেস নেই! দুঃখিত আমি, সত্যি সত্যি দুঃখিত। 
   ১৪ বছর পরে ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ... 

রুবি বলল, 'আজ ফিরে না গেলেই কি নয়? থাকো না আমার বাসায় একদিন! তুমি যদি তখন পিএইচডি করতে থেকে যেতে, আমরা আজ দুজনেই এসোসিয়েট প্রফেসার থাকতাম! ইস! আমার খুব আফসোস লাগে! আমি সত্যি ভাবতেই পারছি না তোমার নামের পেছনে এখনও পিএইচডি নেই! তুমি যেদিন পিএইচডি শেষ করবে, তোমার পরিবারের সদস্যদের পর আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হব! বিশ্বাস করলে?'  

আমি বললাম, 'আমি বিশ্বাস করি! ইচ্ছে করলেই যদি থেকে যেতে পারতাম, তাহলে কেবল একদিন না, থেকে যেতাম একেবারেই। আর আমার এখনও পিএইচডি হয় নি, এজন্য আমার আফসোস নেই। তুমিও আর আফসোস কর না! আফসোস হয় শুধু ১৪ বছর তোমার সাথে যোগাযোগ ছিল না বলে! কে জানে, তোমার ইমেইল পড়ে পড়ে আমিও হয়  তো আরও ১২ বছর আগেই ফিরে আসতাম পিএইচডি টা শেষ করতে!' 
[ দৃষ্টি আকর্ষণঃ  বাবুল ডি' নকরেক - এর ছোট গল্প গুচ্ছের ই-বুক এখন গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে! বইটি ক্রয় করতে এখানে ক্লিক করুন।  ] 
 
রুবি কেবল মুচকি হেসে মাথা টা এদিক ওদিক করল কয়েকবার। যার অর্থ অনেক হতে পারে। আমি সেগুলো আর উদ্ধার করতে চাইলাম না! ওকে  বললাম, ' যাবার আগে আমাকে আরেক বার 'হাগ' করবে না?' ও বলল, তুমি যদি  পিএইচডি টা শেষ না করো, ট্রাস্ট মি, আমি তোমাকে আর কোনদিন 'হাগ' তো দূরের কথা, বন্ধু ভাবব না আর!' এই বলে খিল খিল করে হাসতে হাসতে যেন মাটিতে গড়িয়ে পরতে চাইল। আমার মনে হল, 'এই দৃশ্য দেখা স্বর্গ সমান!' 

রুবি বলল, 'আমি এখন বাংলা টা ভাল বলতে পারি! আমি ভাষা টা যত্ন করে শিখেছি কারণ তুমি একবার বলেছিলে, এই মায়ের ভাষার জন্য তোমরা এক মাত্র দেশ, এক মাত্র জাতি  রক্ত দিয়েছ! তোমাদের ভাষা শহীদদের ত্যাগকে সম্মান জানানোর জন্য আমি বাংলা শিখেছি! আর তুমি যে গান টা শিখিয়েছিলে, সেটাও এখন ভাল করে গাইতে পারি, শুনাবো?'
আমি বললাম, কি গান শিখিয়েছিলাম? 
- মনে নেই?  
রুবি গাইতে শুরু করল, "প্রথমত আমি তোমাকে চাই, দ্বিতীয়ত আমি তোমাকে চাই ... শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই ..."
পাঠক প্রতিক্রিয়াঃ 
"হুম পড়েছি । সবার চেয়ে উনি একেবারেই আলাদা। সবসময়ই ভালো লাগে উনার লিখা উনার জাতিত্ববোধ আর সবার জন্য উনার আলাদা একটা মায়া ভালোবাসা সেটা অনুপ্রাণিত করে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দুটোই উনার জন্য ।" 
তপন হাগিদক এর শেয়ার করা গল্পের নিচে লিখেছেন - তন্দ্রা তনু

আমি হা করে শুনলাম, যেন এই প্রথম গান টা শুনছি জীবনে! এত দরদ দিয়ে এই গান আমি কাউকেই গাইতে দেখি নি ! 
    ১৪ বছর পরের প্রতীকী ছবি! 
আমি আমার কম্পিউটারের ব্যাগ হাতে ফিলাডেলফিয়া থেকে নিউ ইয়র্ক শহরে ফিরতে শুরু করলাম। কত দুখ-সুখের স্মৃতি এখানে। কত বন্ধু-ক্লাসমেট, কত প্রিয় শিক্ষক, অধ্যাপক! কত প্রিয় মুখ! মনে পড়লেই হৃদয় টা হু হু করে উঠে! কিন্তু স্মৃতি নিয়ে পড়ে থাকলে জীবন চলে না। তাই মনটা শক্ত করে সামনে পা ফেলে এগিয়ে যেতে হয়। আমেরিকান - ইটালিয়ান মেয়ে, আমার বন্ধু রুবি, হাত নাড়ল। আমি একটু এগিয়ে যেতেই আবার বলল, 'আমি তোমাকে স্টেশান পর্যন্ত এগিয়ে দেই?  যেখানেই থেকো ভাল থেকো বন্ধু, আর তোমার দেশকে ভালোবেসো। আমি তোমাকে খুব মিস করব! আমি তোমাকে শোনাব বলেই অনেকগুলো বাংলা গান শিখেছিলাম। আমাদের ডিপার্টমেন্ট-এ এখন কলকাতার একজন বাঙ্গালি মেয়ে সহকারি অধ্যাপক আছেন। তিনি আমাকে অনেক গান শিখিয়েছেন। আরেক বার এলে তোমায় সব শুনাব!'

আমি বললাম, জোশ তো! যাক, আমার বাস টা চলে যাক, থাকি আরও কিছুক্ষণ তোমার পাশে, পরের বাসে যাই? আরও দুই একটা গান শুনাও না, প্লিজ!

রুবি গাইল আরেক টি গান, "আজ ফিরে না গেলেই কি নয়, সন্ধ্যা নামুক না, জোনাকি জ্বলুক না, নির্জনে বসি আরো কিছুটা সময় ..." 
    ১৪ বছর পরের প্রতীকী ছবি! 
আজ রুবিকে একা ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। থেকে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু যেতে হবে! সব সময় সব ইচ্ছের মূল্য দিতে হয় না, হৃদয়ের কথাও শুনতে হয়। আমাদের স্বপ্নের কাছে কত ইচ্ছে পায়ে চাঁপা পরে মরে যায়। কষ্ট করে স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হয়। যদিও জানি, "Dream never dies." 

আমাদের সমাজ-সংসারে বাস করতে হয়। সব কিছু 'পরিশীলিত' আর 'পরিমার্জিত' এর মধ্যে রাখতে হয়। তা না হলে সমাজ-সংসারে নিজের কিছুই টেকে না। 
গান শেষ হলে আমি রুবিকে বললাম, "তুমি কি জান, তুমি  অসম্ভব রকম ভাল গাইতে পারো, আমি অভিভূত! তোমার গানের প্রেমে পরে গেলাম, সত্যি! আমার গাইতে ইচ্ছে করছে, "তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী?"  

আমি বললাম, "রুবি নামের আমার আরেক জন বন্ধু আছে বাংলাদেশেও। রুবী  আরেং। সেও ভাল গান গায়, ভাল নাচে, তোমার মত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে। তার কথা অনেকদিন পর মনে পড়ে গেল! আমি তাকে রুবী দি ডাকি! কারণ সে দিদিগিরি করে সব সময়!  ইনফেক্ট, রুবী নামের আমার আরেক জন  মামার মেয়ে আছে, আমি বলি 'মানির মেয়ে' রুবী চিসিম, বেশ সুন্দরি, ভাল উদ্যোক্তাও বটে! মামীর মেয়েকে গারোরা 'মানীর মেয়ে' বলে। 
মানির মেয়েরা গারো ছেলেদের কাছে অলয়েজ স্পেশাল! ওর বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েদের নিয়ে ছেলেদের আর কথা বলতে নেই! তারপরও বলি, ও একজন ভাল জামাই পেয়েছে! ছেলে টা কলেজের অধ্যাপনা ছেড়ে আমাদের গ্রামের স্কুলে ইংরেজি পড়ায়। ওর নাম সোহেল আজিম রুদ্র। নিজের এলাকার মানুষের জন্য এত ত্যাগ যে করতে পারে, সে অবশ্যই ভাল মানুষ , নিঃস্বার্থ মানুষ, তাই না?"   

পাঠক প্রতিক্রিয়াঃ
ঘুম থেকে উঠেই গল্পটা পড়ে নিয়েছি। আমি গল্পটি মনোযোগ সহকারে পড়েছি, খুবই শিক্ষণীয়....
আর এত সুন্দর করে লেখা পড়তেও আলসেমি লাগেনি আরো রোমাঞ্চকর লেগেছে। এর পর যেন কি হয়, কি হয় এরকম মনোভাব নিয়ে পড়তে হয়েছে। 
🙂🙂🙂🙂
আমার ভীষণ ভালো লেগেছে । 


রুবি বলল, 'তাই নাকি! কোনদিন শুনি নি তো ওদের কথা  তোমার মুখে? তাহলে একদিন বাংলাদেশে যেতেই হয়! ছেলে বন্ধুর মন না পাই, এবার মেয়ে বান্ধবীদের তো আপন হতে পারব! মেঘ, তোমার গাড়ি ছাড়ার সময় হয়ে যাচ্ছে! তোমাকে পৌঁছে দিই?...'  

আমি বললাম, তুমি এখন কত সুন্দর করে আমার নাম টা উচ্চারণ কর 'ম্যাঘ'! তোমার মুখে মেঘ নাম টা শুনলে মনে হয় ঠিক স্বর্গের কাছাকাছি আছি!  

এগিয়ে দিতে দিতে সে গুণ গুণ করে গাইল, 'এক গোছা রজনীগন্ধা হাতে দিয়ে বললাম, চললাম ...' 

গান টা অ-নে-ক প্রিয় আমার। আমাকে মল্লিকা দি এই গান টা শুনিয়েছিল একবার। কে এই মল্লিকা দিদি জানতে মন চাইছে সবার?

   আফফা - আচ্চু  এবং চ্রা'দের সাথে ... 
না থাক, মল্লিকা দিদির গল্প বলে এই বুড়ো বয়সে চ্রা'দের হাতে 'হাবল গান্টং' এর মাইর খাইতে চাই না,  হাহাহা ... 

রুবির গান শেষ না হতেই আমি হু হু করা তপ্ত হৃদয় নিয়ে নিউ ইয়র্ক শহরগামী 'গ্রেহন্ড বাসে' চেপে বসলাম। রুবি হাত নেড়ে বিদায় বলছে। আর আমি তাকিয়ে থাকলাম রুবির দিকে যতক্ষণ না সে আড়াল হয়। হাত টা নাড়তেও ভুলে গেলাম...   
পুনশ্চঃ গল্পে কিছু গারো শব্দ এসেছে। এগুলোর অর্থ নিচে দিলাম ।
১। চ্রা - মামার দল , মায়ের ভাই, মায়ের খালাত ভাই 
২। দাকবেয়াল - গারো রীতিনীতি, সংস্কৃতি 
৩। হাবল গানটং - রান্নার লাকড়ি, শাসনের জন্য ব্যবহৃত কাঠ!  
৪। দকমান্দা, দকশাড়ি  - গারোদের তাঁতে বোনা মেয়েদের পরার জন্য মনমুগ্ধকর পোশাক 
৫। দমি - গারোদের মাথায় পাগড়ির সাথে পরার জন্য মোরগের পালক দিয়ে তৈরী 
৬। খুথুপ - কাউকে সর্বোচ্চ সম্মান দেখানোর জন্য গারোদের তৈরী বিশেষ পাগড়ি 
৭। হাপুরু - উই পোকার ডিবি। গারোরা কাউকে তিরস্কার করার জন্য এই শব্দ ব্যবহার করেন। যেমনঃ সে ছোট বড় কাউকে মানে না! তার বাপ মা নাই? সেকি 'হাপুরু' থেকে (মাটি ফুঁড়ে বের হয়ে) আসছে? বদমাইশ! 

[ দৃষ্টি আকর্ষণঃ  
১। বাবুল ডি' নকরেক - এর ছোট গল্প গুচ্ছের ই-বুক এখন গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে! বইটি ক্রয় করতে এখানে ক্লিক করুন। 
২। বাবুল ডি' নকরেক -এর লেখা 'Web Development & Dream Career' অডিও সহ ইবুক পাওয়া এখন গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে! বইটি ক্রয় করতে এখানে ক্লিক করুন
 ৩। বাবুল ডি' নকরেক এর "সবার জন্য পাইথন প্রোগ্রামিং" কোর্সে ভর্তি হতে এখানে ক্লিক করুন। 
৪।  বাবুল ডি' নকরেক এর "জাভা প্রোগ্রামিং ফর নন-প্রোগ্রামার্স" কোর্সে ভর্তি হতে এখানে ক্লিক করুন  ] 
কবিতা পাঠ ইউটিউবে 

পুনশ্চঃ ছোট গল্পটি কাল্পনিক! বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই! কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে তা কাকতালীয় মাত্র!   

গল্পটি ভালো লাগলে শেয়ার করে বন্ধুদের পড়ার সুযোগ করে দিন ।
 
মন্তব্য লিখুন প্রাণ খুলে ...
 



মন্তব্যসমূহ

  1. সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই অসাধারণ এই ছোট গল্পটি পড়ে নিলাম। প্রতিটি লাইন আমাকে গল্পের শেষ পর্যন্ত নিয়ে গেছে অসাধারণ লেখনীর মাধ্যমে।

    নিজ অবস্থান থেকে দেশের জন্য তথা জাতির জন্য আমাদের সবারই কিছু হলেও অবদান রাখা উচিৎ। যা এই গল্পে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

    প্রিয় লাইন___ "আসলে বিনয় বিষয় টা গাছে ধরে না, এটা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সময় নিয়ে শিখতে হয়, হৃদয়ে ধারণ করতে হয়। অধ্যাপক, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, বিজ্ঞানী, এমপি, মিনিস্টার, ফাদার, সিস্টার, বিশপ হওয়াই যায়, কিন্তু বিনয়ী এত সহজেই হয়ে উঠা যায় না।"

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. হোয়াট আ বিউটিফুল কমেন্ট! ইউ মেইড মায় ডেই! ধন্যবাদ মিঃ ডেভেলপার! এমন পাঠক পেলে প্রতিমাসে এমন ২-১ টা গল্প লিখতাম!
      সময় করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ আবার।

      মুছুন
  2. সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই অসাধারণ এই ছোট গল্পটি পড়ে নিলাম। প্রতিটি লাইন আমাকে গল্পের শেষ পর্যন্ত নিয়ে গেছে অসাধারণ লেখনীর মাধ্যমে।

    নিজ অবস্থান থেকে দেশের জন্য তথা জাতির জন্য আমাদের সবারই কিছু হলেও অবদান রাখা উচিৎ। যা এই গল্পে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

    প্রিয় লাইন___ "আসলে বিনয় বিষয় টা গাছে ধরে না, এটা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সময় নিয়ে শিখতে হয়, হৃদয়ে ধারণ করতে হয়। অধ্যাপক, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, বিজ্ঞানী, এমপি, মিনিস্টার, ফাদার, সিস্টার, বিশপ হওয়াই যায়, কিন্তু বিনয়ী এত সহজেই হয়ে উঠা যায় না।"

    উত্তরমুছুন
  3. খুব সুন্দর হয়েছে দা, আরও এমন গল্প চাই🙏🙏🙏

    উত্তরমুছুন
  4. আমি পড়ছিলাম.... কোথাও যেনো গল্পের চরিত্রে হারিয়ে গেলাম। 😊

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. ধন্যবাদ। কোথাও তোমার হারিয়ে যেতে নেই মানা। তোমার লেখার হাত খুব ভাল। যত্ন নিও বেটা ...

      মুছুন
  5. সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম আমার পরম শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় দাদার ( শ্রদ্ধাভাজন বাবুল ডি' নকরেক) ম্যাসেব্জারে একটা লিঙ্ক! লিঙ্কটাতে ঢুকেই দেখতে পেলাম উনার লেখা একটি ছোট্ট গল্প। আমি গল্পটা তৎক্ষনাৎ পড়তে শুরু করলাম। পড়তে পড়তে লেখটায় এতোই নিমগ্ন হয়ে গেলাম যে, আমি ভূলেই গিয়েছিলাম প্রায় ৫০ কি.মি দূরে গিয়ে আজকে একটা ট্রেনিং করাতে হবে আমাকে। আবার লেখাটা শেষ না করেও উঠতে ইচ্ছে করছিলোনা একদমই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে রেডি হয়ে নাস্তা করে গাড়ীতে বসে বসে গল্পটা পড়ে শেষ করলাম। আমি বাবুল'দার লেখার একনিষ্ঠ একজন পাঠক এবং ভক্ত। উনার সব লেখাই আমার খুব প্রিয় এবং খুব ভালো লাগে। তবে আজকের এই গল্পটা ( আমার বন্ধু রুবি) পড়ে সত্যিই আমি আবেগপ্লুত হয়ে গেছি! লেখাটা সত্যিই খুব চমৎকার ও অসাধারণ হয়েছে। যা লিখে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব হবেনা আমার! বারবার পড়তে ইচ্ছে করছে! হয়তো বারবার পড়বো লেখাটা। আপনি ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন সবসময়। আপনার জন্য শুভকামনা সবসময়ই।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. ঘুম থেকে উঠেই তোমার ফিডব্যাক টা পড়ে আমি 'রাইসংফা' হওয়ে গেলাম। মনে হল সত্যি "রাসং ফংগিনিং চা'আ" করল! অনেক উৎসাহিত হলাম। মনে হচ্ছে জব ছেড়ে দিয়ে খালি গল্প লিখি।

      অনেক অনেক ধন্যবাদ জজং গালিভার। বিশ্ববিদ্যালয় পরার সময় তোমার 'গালিভার' নাম টাই আমার জন্য একটা অনুপ্রেরণা ছিল। নাম টা মুখে নিলেই নিজেকে একটু বড় মনে হত। তোমার নাম টা চোখের সামনে দেখলেও কেন যেন সমুদ্রের বিশালতা দেখতে পাই।

      ভাল থাক, সুস্থ্য থাক সব সময়। শুভ কামনা প্রিয় গালিভার জজং

      মুছুন
  6. অনেক ভাল লাগলো পড়ে। এত বড় লেখা এ যুগে বেশিরভাগ লোক পড়তে আগ্রহী না তাই বোধ হয় তোমার লেখায় কমেন্ট অনেক কম। যাই হোক, তাতে কিছু যায় আসে না। যারা লেখে তাঁরা প্রথমে নিজের জন্য লেখে তারপর আশা করে যে অন্যরা পড়বে প্রশংসা করবে।
    আমেরিকাতে আরো ভাল কিছু করার সুযোগ পেয়েও দেশে ফিরে আসার তোমার এই আকাঙ্ক্ষা অনেক প্রশংসনীয়। আশা করি একদিন দেশ তোমার থেকে অনেক ভাল কিছু পাবে।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. অপু দা,
      ধন্যবাদ।
      আপনি ঠিক বলেছেন।
      আপনাকে এত দিন মনে মনে খুঁজেছি! কিন্তু আপনার নাম যে রাজীব আহমেদ আমি জানতামই না! অপু ছাড়াও আপনার আলাদা একটা নাম আছে, থাকতে পারে মনেও হয় নাই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আমাদের সেই অপু দা আজকের রাজীব আহমেদ জেনে আরও অনুপ্রাণিত হচ্ছি।
      দেশের জন্য আপনার কাজ দেখে ভরসা পাচ্ছি। এখন মনে হচ্ছে স্কুল-কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয় না খুলতে পারলেও কাজ করতে পারব। আপনি যেমন নিজের একটা জগত তৈরী করে নিয়েছেন!
      দেশে ফিরতে চাই। ফিরে যেতে পারব কি না শেষ পর্যন্ত জানি না । কিন্তু ফেরার তাগিদ অনুভব করি ।

      ধন্যবাদ সময় করে ফিডব্যাক দেয়ার জন্য ।

      মুছুন
  7. একদম পড়ে ফেললাম..
    পড়তে গিয়ে দুজনের জন্য দুজনার অনুচ্চারিত ভালোবাসা অনুভব করলাম.. ☺️
    ভাল লিখেছ দাদা.. 👍
    শুভেচ্ছা আর শুভকামনা থাকলো..

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for supporting

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'মধুপুর সরকারী কলেজঃ অবসরকালে যেমন কেউ বিদায় দেন না,তেমনি কেউ বিদায় পান না' - এমনই হৃদয় বিদারক স্ট্যাটাস অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক ও সিনিয়র সাংবাদিক জয়নাল আবেদীনের, নেট দুনিয়ায় তোলপাড়

জেফিরাজ দোলন কুবি, ময়মনসিংহ থেকে 'মধুপুর সরকারী কলেজঃ অবসরকালে যেমন কেউ বিদায় দেন না, তেমনি কেউ বিদায় পান না' - এমনই হৃদয় বিদারক ফেইসবুক স্ট্যাটাস ঝড় তুলেছে নেট দুনিয়ায়! মধুপুর সরকারী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন-এর স্ট্যাটাসে ঐ কলেজের কিছু বর্তমান, প্রাক্তন কলেজ শিক্ষক এবং ছাত্র - ছাত্রীরা কমেন্ট করেছেন। কেউ কেউ দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সেখানে কিছু অভিভাবকগণও তাঁদের অভিমত প্রকাশ করেছেন। সব মিলিয়ে ঠিক মোক্ষম সময়ে স্ট্যাটাসটি সবার মনে এবং হৃদয়ে দাগ কাটতে পেরেছে মনে করছেন সবাই। অনেকে একে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন। যিনি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তিনি ঐ কলেজের সহকারী অধ্যাপক (অবসর প্রাপ্ত), ইতিহাস বিভাগ। তিনি ৪০ বছরেরও অধিক সময় ধরে কাজ করছেন দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র করেস্পন্ডেন্ট হিসেবে। লেখাটি গুরুত্ব পেয়েছে এই কারণেও। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, " টাঙ্গাইলের মধুপুর সরকারি কলেজ (বর্তমানে) এমন একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানকার শিক্ষক এবং স্টাফরা অবসরে গেলে কেউ কাউকে কখনো বিদায় সংবর্ধনা দেন না এবং প্রতিদানে কেউ সংবর্ধনা পান না! এজন্য অধ্যক্ষদের ভাগ্য...

নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিলেন সিমব্রি অর্ণি সাংমা

জেফিরাজ দোলন কুবি ময়মনসিংহ থেকে,  বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিয়েছেন সিবব্রি অর্ণি সাংমা। তিনি ৫ জানুয়ারী, ২০২২ ঢাকার নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে যোগদান নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে সাংমা গত ৮ জানুয়ারী পতেঙ্গা নাভাল একাডেমীতে ৩ বছর মেয়াদী দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণে যোগ দেন। অর্ণি গারো আদিবাসীদের মধ্যে সর্বপ্রথম নৌবাহিনীর কমিশন্ড র‍্যাংক-এ সুযোগ পেলেন।      বাবা-মা ও বোনদের সাথে  অর্ণি  নৌবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী নৌবাহিনীর নেভাল একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ১৮ মাস ও মিভশিপম্যান হিসেবে ১৮ মাস আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সাব-লেফটেন্যান্ট পদে নিয়মিত কমিশন প্রদান করা হয়ে থাকে।     গারোদে র পোশাক পরতে ভালোবাসেন  অর্ণি সাইমন স্বর্ণেন্দু সাংমা ও সুচরিতা রেমার জেষ্ঠ সন্তান সিমব্রি অর্ণি সাংমা ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী। অর্ণি ময়মনসিংহের ভিক্টোরিয়া মিশন প্রাইমারী স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে কৃতিত্বের সাথে মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি ও মুমিনুননেসা সরকারী মহিলা কলেজে হতে এইচএসসি...

আমার দেখা একজন সাদা মানুষ

  In Memory of Hon'ble State Minister for Social Welfare Affairs, late Pa Advt Promod Mankin MP. Rest in peace Sir... প্রাক কথন কলেজ জীবন শুরু করার আগে আমার শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনে দেখা একজন অসাধারণ মানুষকে নিয়ে কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম! সে লেখা আজও শেষ করতে পারি নি। ইচ্ছে করত একটা সাদামাঠা সে কবিতা হবে, হয় নি। আজ আবার সেই মানুষটাকেই নিয়ে লিখছি। একদম সাদা - রঙহীন, গন্ধহীন, রসহীন হবে সে লেখা। লেখায় রঙ চং রাখতে চাই না। আমার কাছে থেকে, দূরে থেকে দেখা না দেখা কিছু কথা। একান্ত ব্যক্তিগত কিছু নিরীক্ষণ থেকে। এক তখন দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি। জীবনে প্রথম তাঁকে দেখেছি! বাবা বললেন, "তোমার ফাজং (জ্যাঠা), সালাম করো।" যে লোকটাকে কখনো দেখিই নি, তাঁকে ঝুপ করে সালাম করাটা কিছুটা কষ্টেরই ছিল বটে আমার জন্য। তাই আমি "নমস্কার আংকেল, কেমন আছেন?" বলে কেটে পড়তে চাইলাম। "ভাল, তুমি কেমন আছ? তুমি তো খুব সুন্দর করে নমস্কার দিতে পারো বাবা। কি নাম তোমার?" আরও কিছু কথা চলল। তারপর তিনি বললেন, "তুমি তো খুব সুন্দর করে বাংলা বল! তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। দেখো, আমা...

সর্বাধিক পাঠ করা লেখা

নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিলেন সিমব্রি অর্ণি সাংমা

জেফিরাজ দোলন কুবি ময়মনসিংহ থেকে,  বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিয়েছেন সিবব্রি অর্ণি সাংমা। তিনি ৫ জানুয়ারী, ২০২২ ঢাকার নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে যোগদান নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে সাংমা গত ৮ জানুয়ারী পতেঙ্গা নাভাল একাডেমীতে ৩ বছর মেয়াদী দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণে যোগ দেন। অর্ণি গারো আদিবাসীদের মধ্যে সর্বপ্রথম নৌবাহিনীর কমিশন্ড র‍্যাংক-এ সুযোগ পেলেন।      বাবা-মা ও বোনদের সাথে  অর্ণি  নৌবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী নৌবাহিনীর নেভাল একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ১৮ মাস ও মিভশিপম্যান হিসেবে ১৮ মাস আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সাব-লেফটেন্যান্ট পদে নিয়মিত কমিশন প্রদান করা হয়ে থাকে।     গারোদে র পোশাক পরতে ভালোবাসেন  অর্ণি সাইমন স্বর্ণেন্দু সাংমা ও সুচরিতা রেমার জেষ্ঠ সন্তান সিমব্রি অর্ণি সাংমা ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী। অর্ণি ময়মনসিংহের ভিক্টোরিয়া মিশন প্রাইমারী স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে কৃতিত্বের সাথে মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি ও মুমিনুননেসা সরকারী মহিলা কলেজে হতে এইচএসসি...

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নিলেন ১১ মেধাবী গারো শিক্ষার্থী

ফৈবি কুবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জায়গা করে নিয়েছেন ১১ জন গারো কৃতি শিক্ষার্থী। তাঁরা ২০২০-২০২১ সেশনে ভর্তি হবেন। ডেলা চিরান দৃষ্টি মানখিন যারা বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করলেন তারা হলেন : দৃষ্টি মানখিন (নৃবিজ্ঞান), জেসিকা নকরেক স্বস্তি(আইন), পাপিয়া চিছাম(আইন), ডেলা চিরান (ফিন্যান্স), রিংচি মৃঃ (একাউন্টিং), স্পন্দন রেমা( কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), ইফ্রোইম রেমা (কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), নিঃস্ব রংদী( অর্থনীতি), রুদ্র ম্রং( সমাজবিজ্ঞান), ইসুদুর পল রংদী(পপুলেসন সাইন্স) এবং সাগাল সিমসাং(দর্শন)। পুনশ্চঃ সবার ছবি পাওয়া যায় নি। পাওয়া মাত্র আমরা সবার ছবি দিয়ে দিব ... সংবাদ টি শেয়ার করে বন্ধু - স্বজনদের জানিয়ে দিন

ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাটে ২ গারো আদিবাসী ছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকারঃ ধর্ষকেরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে

ময়মনসিংহ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক,  গত ৩০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটের গাজিরভিটা ইউনিয়নে দুইজন গারো আদিবাসী ছাত্রী গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছে।  ধর্ষিতা ছাত্রীদের বয়স ১৩-১৪ হবে।  জানা গেছে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে রাতের বেলা বাড়ি ফেরার পথে ঐ দুই জন স্কুল ছাত্রী ছয় বখাটে যুবকদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়।  ধর্ষকদের একজনের নাম মোঃ রিয়াদ বলে জানা গেছে। রিয়াদ কচুয়াকুড়া গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল মান্নানের পুত্র এবং বাকী ৫ জন ধর্ষক রিয়াদের বন্ধু বলে জানা গেছে।  এদের বয়স ২০-২৫ এর মধ্যে হবে বলে জানা গেছে।  হালুয়াঘাট থানার ওসি জানিয়েছেন, তাঁরা আসামীদের খুব শীঘ্রই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনবেন।  তবে এলাকাবাসী বলছেন, বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সামাজিক এবং ছাত্র সংগঠনগুলো এখনও অনেক টা নীরব। এই সংগঠনগুলো প্রতিবাদ করলেই কেবল ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন।  বাগাছাস-গাসু-টিডব্লিওএ এর নেতাদের নীরবতায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন এলাকাবাসী। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সেরেজিং সাংমা(ছদ্মনাম) তাঁর ক্ষোভ এবং হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, "বাগাছাস...