জলময়ূরী (ছোট গল্প) সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জলময়ূরী (ছোট গল্প)

তাহসান আমার কলেজজীবনের বন্ধু। দীর্ঘ দিন যোগাযোগ নেই আমাদের। এক শহরে থাকি। কিন্তু দেখা-সাক্ষাৎ তো দূরের কথা, টেলি যোগাযোগ পর্যন্ত নেই গত কয়েক বছর। 

বন্ধু তাহসানের মেয়ে পুতুলের প্রতীকী ছবি 

হঠাৎ করেই সেই তাহসান ফোন করল আজ।

-হ্যাঁ, তাহসান! কেমন আছিস?

-দোস্ত, খুব খারাপ, ভয়াবহ খারাপ। ভয়ানক বিপদে আছি রে! তুই কেমন আছিস?

-ভালো। কী খবর বল?

-মেয়েটাকে নিয়ে খুব পেরেশানে আছি। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। তুই কি একদিন আমাদের বাসায় আসবি?

-মেয়েকে নিয়ে পেরেশানে মানে?

-নূরি চলে যাওয়ার পর মেয়েটা একা হয়ে পড়েছে! খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। আর কথা বলছে না একদম...

-নূরি ভাবি চলে গেছে মানে? কি বলিস!

-তোর ভাবি আর নেই! সে আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।

এই বলে তাহসান হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিল। আমি যেন দিশাহীন হয়ে পড়লাম। কী বলে তাকে একটু সান্ত্বনা দেব, বুঝে উঠতে পারলাম না! তাই আমিও ফোন ধরে চুপ থাকলাম। 

     প্রচ্ছদ অংকনঃ হেনরি হিমালয় নকরেক, মেন্টর, নকরেক আইটি ইন্সটিটিউট 

একটু পর বললাম, ‘দোস্ত, আমাদের একদিন সবাইকেই এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। এইটা ছিল জাস্ট ভাবির চলে যাওয়ার সময়। আমরা তার জন্য বেহেশত কামনা করে প্রার্থনা ছাড়া আর কী করতে পারি? তুই একটু শান্ত হ!’

তাহসান চুপ করে রইল। কোনো কথা বলল না।
মনের অজান্তে বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। আমি কিছুটা নস্টালজিক হয়ে পড়লাম। ভাবি আমাদের ইয়ারমেট ছিল। আমরা কত আড্ডা করেছি, মজা করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়। তাহসানের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও, ভাবির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ ছিল। চন্দ্রমুখী নূরি ভাবি আর নেই ভাবতেই গলা ধরে এল। শেষবার যখন কথা হয়েছিল নূরি ভাবি বলেছিল, ‘তোদের মান-অভিমান আর কত দিন চলবে? শুধু অভিমান নাকি রাগও আছে তোর?’ ‘ছোটখাটো রাগও আছে’, শুনে বলেছিল—‘শোন মেঘ, রাগ থাকা আর এটাকে পুষে রাখা বিপজ্জনক।’
-যেমন?
-রাগ বা Anger-এর আগে D বসে গেলে কী হয়? D+Anger = Danger, রাইট? তোরা দুজনই ছোটখাটো বিষয়ে রিঅ্যাক্ট করিস বেশি! আমাদের জীবনটা আমাদের যাপিত জীবনের কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা কেমন রেসপন্স করি, তার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে যে, আমাদের জীবন কত সুন্দর হবে, নির্ভার কিংবা জটিল হবে। জীবনে ভালো থাকার জন্য Action দরকার, Reaction-এর দরকার খুব একটা নেই। বুঝেছিস?
-হু!
-হু মানেটা কী?
-হু, মানে হু!
-আচ্ছা তোর ওই অজগর, কাঠুরে আর তার কুড়ালের গল্পটা মনে আছে?
-আছে ভাবি
-তোর কাছেই প্রথম এই গল্পটা আমি আর তাহসান শুনেছিলাম! বিয়ের পর নিউইয়র্ক এসে তাহসানের সঙ্গে রাগ করে আমি যখন দেশে ফেরত যেতে চেয়েছিলাম, তুই এই গল্পটা বলেছিলি!

    বন্ধু তাহসানের মেয়ে পুতুলের প্রতীকী ছবি 
তুই বলেছিলি, অজগর কুড়ালের ওপর রাগ করে তাকে ছোবল মারতে গিয়ে, শোধ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিল! অজগর সাপটা যদি রিঅ্যাক্ট না করে শান্ত হয়ে চলে যেত, সে বেঁচে যেত। গল্প থেকে নিজে যদি কিছু না শিখিস, অন্যকে এই গল্পগুলো বলিস কেন, মেঘ?

এই সব ভাবছি আর মনটা খুব ভারী হয়ে উঠল! তাহসান বলল, ‘তুই কি একদিন বাসায় আসতে পারবি?’
-ঠিক আছে। আমি নিশ্চয়ই আসব।

দুই.
পরদিন সকালে তাহসানের বাসায় যাওয়ার জন্য বের হলাম। করোনাভাইরাসের কারণে বাস-ট্রেন নিউইয়র্ক শহরে বিরল হয়ে গেছে। আগে প্রতি তিন মিনিট পরপর বাস, ট্রেন আসত! এখন ৩০-৪০ মিনিট পরপর আসছে। প্রথম যখন করোনা-আক্রান্ত রোগী নিউইয়র্কে শনাক্ত হয়, তার ৫৫ দিন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ১১ জন ছিল। তার ১৫-২০ দিন পর এখন তা লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ। আর এখন প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। পুরো নিউইয়র্ক নগরী যেন এক মৃত্যুপুরী! হাসপাতালে করোনা রোগীর ভিড়ে ঠাসাঠাসি। চারদিকে লাশ আর লাশ।
বড় বড় হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি নেওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। সব হোটেলকে সেনাবাহিনী হাসপাতাল বানিয়েছে। নৌবাহিনী তাদের রণতরী দিয়ে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল তৈরি করেছে। সেখানেও তিল ধারণের জায়গা নেই আর। এখন খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাঁটিয়ে অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করে চিকিৎসা চলছে। থেকে থেকে অ্যাম্বুলেন্সের হৃদয় বিদীর্ণ করা চিৎকারে সুনসান নীরবতা যেন ধসে পড়ছে।
বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত চিকিৎসার দেশ, প্রতাপ ও পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্রের দশা যখন এই, খোদা না করুক, একবার শুরু হয়ে গেলে বাংলাদেশের অবস্থা কী হবে ভাবতেই গায়ের সব লোম কাঁটা দিয়ে উঠল! আহারে আমার সোনার দেশ! মানুষ সেখানে এখনো পিকনিকের মুডে আছে। তাদের ৯৯ শতাংশ মানুষ বুঝতেই পারছে না পুরো পৃথিবী কী দুঃসহ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে!
পুরো নিউইয়র্ক শহর লকডাউন করে দেওয়ায় লোকজনের সমাগম খুব একটা নেই। ট্রেনের অনেক বগি খালি। কোনো কোনো বগিতে ৪-৫ জন যাত্রী। কোনোটা একদম জনশূন্য।
মেট্রো-টেক স্টেশনে ট্রেন থামতেই আমাদের বগিতে দুজন পুলিশ উঠল। আমার সামনে বসা মেয়েটিকে কী যেন জিজ্ঞেস করল। তারপর কিছু একটা হাতে ধরিয়ে দিল মনে হয়। এবার আমার সামনে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কোথায় যাচ্ছি। আমি লকডাউন না মেনে কেন বাইরে? আমি বললাম, ‘আমার বন্ধুর স্ত্রী ইহজগৎ ছেড়ে চলে গেছেন। তাই তাঁকে সান্ত্বনা দিতে...
কথা শেষ না হতেই ৫০০ ডলারের জরিমানার টিকিট হাতে ধরিয়ে দিয়ে অসহায় ভঙ্গিতে বললেন, ‘উই আর ভেরি সরি, স্যার! প্লিজ স্টে হোম অ্যান্ড মেইনটেন ফিজিক্যাল ডিস্ট্যান্স। প্লিজ ব্যাক হোম অ্যান্ড কাউন্সিল ইউর ফ্রেন্ড ওভার টেলিফোন।’
পরের স্টেশনে পুলিশ নেমে যেতেই মেয়েটি চোখ মুখ লাল করে বলল, ‘হোয়াট আ ফাক! থ্রি হান্ড্রেড ডলার টিকিট! আম ফাকড-আপ! হোয়াট অ্যাবাউট ইউ হানি?’
-সো আই অ্যাম। ফাইভ হান্ড্রেড ডলার!

তিন.
মনটা খারাপ হয়ে গেল। ঘরবন্দী এক মাসের বেশি। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরে কাজ না করে টিকে থাকা দায়। তাই ৫০০ ডলার এই মুহূর্তে অনেক টাকা। এক সপ্তাহের বাজার চলত। বিনা কারণে বাইরে বেরোলেই ৩০০ থেকে ৫০০ ডলার জরিমানা হচ্ছে শুনেছিলাম। তবুও তাহসানের ওখানে যাচ্ছিলাম; কারণটা ভিন্ন। অভিমান করে পাঁচটি বছর আমরা কেউ কাউকে ফোন করি না। বন্ধুর স্ত্রী মারা গেছে, অভিমান করে বসে থাকা যায়?
বাসায় ফিরে এসে সাবান দিয়ে ভালোমতো হাত ধুয়ে নিলাম। ২০ সেকেন্ডের জায়গায় ৩০ সেকেন্ড। তারপর ‘রাবিং অ্যালকোহল দিয়ে হাত কচলে নিলাম। বাড়তি সাবধানতা। তারপর তাহসানকে ফোন দিলাম। তাহসান কথাই বলতে পারছে না। শুধু কাঁদছে। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। তাহসানকে জিজ্ঞেস করলাম ভাবির কি হয়েছিল?
-তোর ভাবি তো কাজ করত না। বাসায় থাকত। একদিন হঠাৎ ঠান্ডা, জ্বর আর হালকা কাশি হলো। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার বললেন, সিজনাল জ্বর। ৫-৭ দিনে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে ১০৪ ডিগ্রি হয়ে গেল।

        বন্ধু তাহসানের মেয়ে পুতুলের প্রতীকী ছবি 

একটু শ্বাসকষ্ট আর ডায়রিয়াও দেখা দিল। সারা শরীরে ব্যথা শুরু করলে ডাক্তারকে ফোন দিলাম। ডাক্তার বললেন, আমরা চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছি, এখন টেলিফোনেই চিকিৎসা দিচ্ছি। উপসর্গ শুনে ডাক্তার বললেন ৯১১ নম্বরে ফোন দেওয়ার জন্য।

-বলিস কী?
-সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স চলে এল। বেলভ্যু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই সাত দিন চিকিৎসা নিয়ে...
- কাঁদিস না। মানুষের জন্মই হয় মৃত্যুর জন্য। না মরলে সে বেহেশতের স্বাদ নেবে কী করে?
-বন্ধু, মানুষ মারা যাবে, সেটাই সত্যি। কিন্তু এটা কেমন মৃত্যু? যে মৃত্যু সংবাদ শুনে মানুষ পালিয়ে যায়! বন্ধু-স্বজন সবাই দূরে সরে যায়—এ কেমন মানবিকতা? মৃত্যুকে আমাদের কেন এত ভয়? কেউ কি মৃত্যুকে এড়িয়ে যেতে পারবে? তাহলে কেন আমরা একে অন্যের বিপদে এগিয়ে যাচ্ছি না?
-হয়তো-বা পৃথিবীর মানুষের আরেকটু সাহসিকতার সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করা উচিত ছিল। হয়তো আতঙ্কেই বেশির ভাগ মানুষ মারা যাচ্ছে, কে জানে।
-আমার মনে হয় তাই। তোর ভাবি সিডিসি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট ঘেঁটে করোনার উপসর্গ দেখেই নিশ্চিত হয়েছিল যে, তার করোনা পজিটিভ হবে। তারপর আতঙ্কেই বুঝি মারা গেল!
-বলিস কি? কিন্তু তুই যে বলছিলি ভাবি বাসায় থাকত, জব করত না! তাহলে কিভাবে তার করোনা দেখা দিল?
-সম্ভবত আমিই করোনার ক্যারিয়ার! আমি অনেকটা নিশ্চিত আমারও করোনা আছে! কিন্তু কী করব? আমাদের মেয়েটার বয়স মাত্র সাত বছর। আমাদের কেউ নেই নিউইয়র্কে! আমি আসলে চাইছিলাম, পুতুলকে বউদির কাছে...
-তাহসান! কাউকে বলবি না, আমি কাউকেই বলিনি। তোর বউদির সঙ্গে আমি আর থাকি না। আমরা গত মাস থেকে আলাদা বাসায় থাকি। আলাদা থাকি মানে, তোর বউদি নিজেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।
-বলিস কি!
-দুঃখজনক, কিন্তু সত্যি।
-তুই একা থাকিস?
-নাহ।
-তাহলে কি তুই আবার...
-না, না! বড় মেয়ে আমার কাছে চলে এসেছে। বাপ-বেটির সংসার।
-আমি যে কী করব ভেবে পাচ্ছি না। মেয়েকে কোথাও, কারও কাছে দিয়ে যেতে পারলে হাসপাতালে গিয়ে টেস্ট করাতাম। আমি নিশ্চিত আমার থেকেই তোর ভাবি...

পাঠক প্রতিক্রিয়া 

পড়েছি প্রথম গল্পটা। পুরোটা এখনও পড়া হয় নি। পড়ব। যাঁরা হারিয়ে যাওয়া দিনের কথা সুন্দর ও সরল ভাষায় পড়তে চান তাঁদের জন্য এই ই-বই খুবই ভালো লাগবে। সঙ্গে আছে বোনাসও। বাবুলদার লেখায় দৃশ্যপট ড্রোনের চোখে দেখা নয়। তা সোজা আলো ফেলে ক্লোজ আপ শটে গল্পের চরিত্রদের মনোজগতে। তাদের পারষ্পরিক চরিত্রগত টানাপোড়েন, সময়ের বদলে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া সময়ের জন্য একটা সুপ্ত বেদনা বোধ লেখক বাবুল ডি নকরেকের গল্পের প্রধান ইউএসবি। কাহিনীমূল গল্পধারার থেকে এই কাহিনীসূত্র ধরে গল্পের পাত্রপাত্রীদের এগিয়ে চলা পাঠকদের নতুন কিছুর সন্ধান দেবে সেকথা বলাই যায়। - Durjoy Bose

চার.

পুতুল এখন আমাদের এখানে। চার-পাঁচ বছরের বাচ্চা মেয়েটা মনে হয় বাস্তবতা মেনে নিয়েছে। চুপচাপ সারা দিন কার্টুন আর নাটক দেখে। মাঝরাতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। মেয়েটার জন্য কষ্টে বুকটা চৌচির হয়ে যায়। 

বন্ধু তাহসানের মেয়ে পুতুলের প্রতীকী ছবি 

ওর দিকে তাকালে বুকটা ফেটে যায়। একবার ভাবলাম, গিন্নিকে ফোন দিয়ে ঘটনা বলি আর পুতুলকে ওদের কাছে পাঠিয়ে দিই। আবার ভাবলাম, পিচ্চিটার আর যন্ত্রণা না বাড়াই। আমাদের এখানেই সে মানিয়ে নিয়েছে।

পাঁচ.
তাহসান যা ভেবেছিল, তাই। তার করোনা টেস্টের রেজাল্ট পজিটিভ। একদম ভেঙে পড়েছে সে। আমি যত বলছি শক্ত হতে, সে ততই যেন দুর্বল হয়ে পড়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছে ঠিক, কিন্তু সুস্থ হওয়ার জন্য দোয়া চাইছে না। ওপারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রতিদিন।
তাহসানকে শেষ দেখা দেখতে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। সে ট্যাক্সি চালাত। আমি বলতাম, ট্যাক্সি চালানো বাদ দে। আইটি প্রশিক্ষণ নে। আর ১০টা মানুষের মতো হেরে যাওয়ার জন্য আমাদের জন্ম হয়নি। তাহসান বলত, ‘এই দেশে আমাদের জেনারেশন কিছু করতে পারবে না। তুই খামোখা আইটি-ফাইটি নিয়ে বসে থাকিস না। এই নিয়েই আমাদের দূরত্ব বাড়ে।’
শেষবার যখন ফোনে কথা হয়, তখন সে বলছিল—গত মাসেই পিপল এন টেকে সফটওয়্যার টেস্ট অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছিল সে। নতুন জবে জয়েন করেই আমাকে ফোন দিয়ে ‘সারপ্রাইজ’ দেবে বলে প্ল্যান করেছিল। কী করার? "ম্যান প্রপোজেস, বাট গড ডিসপোজেস।" সে যাই হোক। তাহসান স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। ‘স্বপ্নেরা মরে না কখনো।’
তাহসানের স্বপ্ন নিশ্চয়ই পুতুলের মাঝে বেঁচে থাকবে! স্বপ্নটা একটু একটু করে বড় হবে। তাহসান দেখে যেতে পারেনি বলে তার দুঃখ থাকবে হয়তো। আসলে স্বপ্ন পূরণটা দেখে যেতে পারল কি পারল না, সেটা খুব একটা বড় বিষয় নয়, স্বপ্ন বেঁচে আছে সেটাই বড় বিষয়।

পাঠক প্রতিক্রিয়া 

পড়লাম খুব মন দিয়ে। খুব ভালো লেগেছে। তবে মনে কিছু প্রশ্ন এসেছে গল্পটা পড়ে। এখন মেঘের কি অবস্থা? মেঘ কি এখন সুস্থ? পুতুল এখন কোথায়? পুতুলের মা বাবা যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে পুতুল কি করোনায় আক্রান্ত হয় নাই? পুতুলকে কি টেস্ট করা হয়েছিল? যাই হোক, পুতুলের জন্য শুভ কামনা। স্বপ্নেরা মরে না, স্বপ্নেরা বেঁচে থাকুক অসংখ্য পুতুলদের মাঝেই।

- Bilon Ruga

ছয়.
গত তিন-চার দিন ধরে ঠান্ডা, জ্বর, কাশি বাড়ছে তো বাড়ছেই। আজ ডাক্তারের কাছে যাব ভাবছি। আমার অসুখে বড় মেয়েটা খুব অস্থির হয়ে পড়েছে। তার ধারণা, আমার বন্ধু তাহসান আমাকে ইনফেকটেড করে দিয়ে গেছে। মেয়েটা কাছে এসে বলল, ‘বাবা, আমি ৯১১ কল করেছি। এখনই অ্যাম্বুলেন্স আসবে তোমাকে নিতে। তুমি তৈরি হও।’
আমি কিছু বলার আগেই বলল, ‘মা হাসপাতালে চলে গেছে আগেই। মা-ই আমাকে ৯১১-এ কল দিতে বলে দিয়েছে। আমি দুঃখিত, বাবা। আমাদের এ ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। তুমি একদমই কথা শুনো না, নিজের যত্ন নাও না।’
আকাশ বাতাস ভারী করে অ্যাম্বুলেন্স আসছে। বাসার সামনে এসে থামল মনে হলো। আমিও তাহসানের মতো একটু প্যাসিমিস্টিক হয়ে পড়েছি মনে হয়। ঠিক এই মুহূর্তে আমার মন প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে চলে গেছে। অনেক প্রিয় মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। তাদের সঙ্গে আর কোনো দিন দেখা হবে না ভাবতেই পুরো হৃদয়টা হাহাকার করে উঠল।
আমার একটা ছোট্ট স্বপ্ন ছিল। শালবনের ভেতর একটা আন্তর্জাতিক মানের আইটি বেইজড স্কুল- কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় হবে। মুহূর্তেই বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেল যেন। আমি যদি মরে যাই, স্বপ্ন বেঁচে থাকবে তো? আমার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্য থেকে কি স্বপ্নের বীজটায় জল ঢালবে কেউ? ভাবছি।
না, না। এত সহজে ভেঙে পড়লে চলবে না। আমাকে শক্ত থাকতে হবে। বাঁচতে হবে। নূরি ভাবি আর তাহসানের স্বপ্ন পুতুলকে মানুষ করতে হবে। করোনার সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হতে হবে পুতুলদের জন্য।
স্ট্র্যাচারে করে তুলে অ্যাম্বুলেন্সের দরজা বন্ধ করে দিল।

সাত.
ইমার্জেন্সি গেটে গিয়ে দেখলাম, আমার গিন্নি দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে দৌড়ে এল। হাউমাউ করে কেঁদে উঠল...
তার কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠল। চিৎকার করে কাঁদছে ...
আমি এবার ভাবছি অন্য কথা। নূরি ভাবি এক মেয়ে জন্ম দিয়ে জলময়ূরীর মতো চলে গেল। তাহসানের বউদিও অনেকটা জলময়ূরীর মতোই চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু পারল না। ফিরে এসেই কান্নাকাটি—যেন আমি মারা গেছি!
মানুষ যত মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছায়, তত তার বাঁচার আকাঙ্ক্ষা বাড়ে। আমারও এখন বাঁচতে ইচ্ছে করছে। তবে মৃত্যু ভয় আমার নেই। সমাজে, রাষ্ট্রে কিংবা পৃথিবীতে কেউ অপরিহার্য নয়। আমিও নই—ভাবতেই নিজেকে নির্ভার লাগছে।
কান্না থামছে না। আমি বললাম, ‘কান্না থামাও।’
তার কান্না আওয়াজ যেন আরও বেড়ে গেল।
কান্নার বিকট আওয়াজে চোখ মেলে দেখি পুতুলের খালা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী বিষয়?
সে বলল, দেশের অনেক প্রিয় মুখ চোখের সামনে ভাসছে। আমার খুব কান্না পাচ্ছে...

@বাবুল ডি' নকরেক 

পুনশ্চঃ গল্পটি দৈনিক প্রথম আলো'তে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলো'তে গল্পটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।


দৃষ্টি আকর্ষণঃ  
১। বাবুল ডি' নকরেক - এর ছোট গল্প গুচ্ছের ই-বুক এখন গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে! বইটি ক্রয় করতে এখানে ক্লিক করুন। 
২। বাবুল ডি' নকরেক -এর লেখা 'Web Development & Dream Career' অডিও সহ ইবুক পাওয়া এখন গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে! বইটি ক্রয় করতে এখানে ক্লিক করুন ।
 ৩। বাবুল ডি' নকরেক এর "সবার জন্য পাইথন প্রোগ্রামিং" কোর্সে ভর্তি হতে এখানে ক্লিক করুন। 
৪।  বাবুল ডি' নকরেক এর "জাভা প্রোগ্রামিং ফর নন-প্রোগ্রামার্স" কোর্সে ভর্তি হতে এখানে ক্লিক করুন

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'মধুপুর সরকারী কলেজঃ অবসরকালে যেমন কেউ বিদায় দেন না,তেমনি কেউ বিদায় পান না' - এমনই হৃদয় বিদারক স্ট্যাটাস অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক ও সিনিয়র সাংবাদিক জয়নাল আবেদীনের, নেট দুনিয়ায় তোলপাড়

জেফিরাজ দোলন কুবি, ময়মনসিংহ থেকে 'মধুপুর সরকারী কলেজঃ অবসরকালে যেমন কেউ বিদায় দেন না, তেমনি কেউ বিদায় পান না' - এমনই হৃদয় বিদারক ফেইসবুক স্ট্যাটাস ঝড় তুলেছে নেট দুনিয়ায়! মধুপুর সরকারী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন-এর স্ট্যাটাসে ঐ কলেজের কিছু বর্তমান, প্রাক্তন কলেজ শিক্ষক এবং ছাত্র - ছাত্রীরা কমেন্ট করেছেন। কেউ কেউ দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সেখানে কিছু অভিভাবকগণও তাঁদের অভিমত প্রকাশ করেছেন। সব মিলিয়ে ঠিক মোক্ষম সময়ে স্ট্যাটাসটি সবার মনে এবং হৃদয়ে দাগ কাটতে পেরেছে মনে করছেন সবাই। অনেকে একে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন। যিনি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তিনি ঐ কলেজের সহকারী অধ্যাপক (অবসর প্রাপ্ত), ইতিহাস বিভাগ। তিনি ৪০ বছরেরও অধিক সময় ধরে কাজ করছেন দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র করেস্পন্ডেন্ট হিসেবে। লেখাটি গুরুত্ব পেয়েছে এই কারণেও। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, " টাঙ্গাইলের মধুপুর সরকারি কলেজ (বর্তমানে) এমন একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানকার শিক্ষক এবং স্টাফরা অবসরে গেলে কেউ কাউকে কখনো বিদায় সংবর্ধনা দেন না এবং প্রতিদানে কেউ সংবর্ধনা পান না! এজন্য অধ্যক্ষদের ভাগ্য...

নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিলেন সিমব্রি অর্ণি সাংমা

জেফিরাজ দোলন কুবি ময়মনসিংহ থেকে,  বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিয়েছেন সিবব্রি অর্ণি সাংমা। তিনি ৫ জানুয়ারী, ২০২২ ঢাকার নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে যোগদান নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে সাংমা গত ৮ জানুয়ারী পতেঙ্গা নাভাল একাডেমীতে ৩ বছর মেয়াদী দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণে যোগ দেন। অর্ণি গারো আদিবাসীদের মধ্যে সর্বপ্রথম নৌবাহিনীর কমিশন্ড র‍্যাংক-এ সুযোগ পেলেন।      বাবা-মা ও বোনদের সাথে  অর্ণি  নৌবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী নৌবাহিনীর নেভাল একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ১৮ মাস ও মিভশিপম্যান হিসেবে ১৮ মাস আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সাব-লেফটেন্যান্ট পদে নিয়মিত কমিশন প্রদান করা হয়ে থাকে।     গারোদে র পোশাক পরতে ভালোবাসেন  অর্ণি সাইমন স্বর্ণেন্দু সাংমা ও সুচরিতা রেমার জেষ্ঠ সন্তান সিমব্রি অর্ণি সাংমা ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী। অর্ণি ময়মনসিংহের ভিক্টোরিয়া মিশন প্রাইমারী স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে কৃতিত্বের সাথে মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি ও মুমিনুননেসা সরকারী মহিলা কলেজে হতে এইচএসসি...

আমার দেখা একজন সাদা মানুষ

  In Memory of Hon'ble State Minister for Social Welfare Affairs, late Pa Advt Promod Mankin MP. Rest in peace Sir... প্রাক কথন কলেজ জীবন শুরু করার আগে আমার শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনে দেখা একজন অসাধারণ মানুষকে নিয়ে কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম! সে লেখা আজও শেষ করতে পারি নি। ইচ্ছে করত একটা সাদামাঠা সে কবিতা হবে, হয় নি। আজ আবার সেই মানুষটাকেই নিয়ে লিখছি। একদম সাদা - রঙহীন, গন্ধহীন, রসহীন হবে সে লেখা। লেখায় রঙ চং রাখতে চাই না। আমার কাছে থেকে, দূরে থেকে দেখা না দেখা কিছু কথা। একান্ত ব্যক্তিগত কিছু নিরীক্ষণ থেকে। এক তখন দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি। জীবনে প্রথম তাঁকে দেখেছি! বাবা বললেন, "তোমার ফাজং (জ্যাঠা), সালাম করো।" যে লোকটাকে কখনো দেখিই নি, তাঁকে ঝুপ করে সালাম করাটা কিছুটা কষ্টেরই ছিল বটে আমার জন্য। তাই আমি "নমস্কার আংকেল, কেমন আছেন?" বলে কেটে পড়তে চাইলাম। "ভাল, তুমি কেমন আছ? তুমি তো খুব সুন্দর করে নমস্কার দিতে পারো বাবা। কি নাম তোমার?" আরও কিছু কথা চলল। তারপর তিনি বললেন, "তুমি তো খুব সুন্দর করে বাংলা বল! তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। দেখো, আমা...

সর্বাধিক পাঠ করা লেখা

নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিলেন সিমব্রি অর্ণি সাংমা

জেফিরাজ দোলন কুবি ময়মনসিংহ থেকে,  বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিয়েছেন সিবব্রি অর্ণি সাংমা। তিনি ৫ জানুয়ারী, ২০২২ ঢাকার নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে যোগদান নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে সাংমা গত ৮ জানুয়ারী পতেঙ্গা নাভাল একাডেমীতে ৩ বছর মেয়াদী দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণে যোগ দেন। অর্ণি গারো আদিবাসীদের মধ্যে সর্বপ্রথম নৌবাহিনীর কমিশন্ড র‍্যাংক-এ সুযোগ পেলেন।      বাবা-মা ও বোনদের সাথে  অর্ণি  নৌবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী নৌবাহিনীর নেভাল একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ১৮ মাস ও মিভশিপম্যান হিসেবে ১৮ মাস আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সাব-লেফটেন্যান্ট পদে নিয়মিত কমিশন প্রদান করা হয়ে থাকে।     গারোদে র পোশাক পরতে ভালোবাসেন  অর্ণি সাইমন স্বর্ণেন্দু সাংমা ও সুচরিতা রেমার জেষ্ঠ সন্তান সিমব্রি অর্ণি সাংমা ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী। অর্ণি ময়মনসিংহের ভিক্টোরিয়া মিশন প্রাইমারী স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে কৃতিত্বের সাথে মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি ও মুমিনুননেসা সরকারী মহিলা কলেজে হতে এইচএসসি...

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নিলেন ১১ মেধাবী গারো শিক্ষার্থী

ফৈবি কুবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জায়গা করে নিয়েছেন ১১ জন গারো কৃতি শিক্ষার্থী। তাঁরা ২০২০-২০২১ সেশনে ভর্তি হবেন। ডেলা চিরান দৃষ্টি মানখিন যারা বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করলেন তারা হলেন : দৃষ্টি মানখিন (নৃবিজ্ঞান), জেসিকা নকরেক স্বস্তি(আইন), পাপিয়া চিছাম(আইন), ডেলা চিরান (ফিন্যান্স), রিংচি মৃঃ (একাউন্টিং), স্পন্দন রেমা( কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), ইফ্রোইম রেমা (কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), নিঃস্ব রংদী( অর্থনীতি), রুদ্র ম্রং( সমাজবিজ্ঞান), ইসুদুর পল রংদী(পপুলেসন সাইন্স) এবং সাগাল সিমসাং(দর্শন)। পুনশ্চঃ সবার ছবি পাওয়া যায় নি। পাওয়া মাত্র আমরা সবার ছবি দিয়ে দিব ... সংবাদ টি শেয়ার করে বন্ধু - স্বজনদের জানিয়ে দিন

ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাটে ২ গারো আদিবাসী ছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকারঃ ধর্ষকেরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে

ময়মনসিংহ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক,  গত ৩০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটের গাজিরভিটা ইউনিয়নে দুইজন গারো আদিবাসী ছাত্রী গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছে।  ধর্ষিতা ছাত্রীদের বয়স ১৩-১৪ হবে।  জানা গেছে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে রাতের বেলা বাড়ি ফেরার পথে ঐ দুই জন স্কুল ছাত্রী ছয় বখাটে যুবকদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়।  ধর্ষকদের একজনের নাম মোঃ রিয়াদ বলে জানা গেছে। রিয়াদ কচুয়াকুড়া গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল মান্নানের পুত্র এবং বাকী ৫ জন ধর্ষক রিয়াদের বন্ধু বলে জানা গেছে।  এদের বয়স ২০-২৫ এর মধ্যে হবে বলে জানা গেছে।  হালুয়াঘাট থানার ওসি জানিয়েছেন, তাঁরা আসামীদের খুব শীঘ্রই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনবেন।  তবে এলাকাবাসী বলছেন, বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সামাজিক এবং ছাত্র সংগঠনগুলো এখনও অনেক টা নীরব। এই সংগঠনগুলো প্রতিবাদ করলেই কেবল ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন।  বাগাছাস-গাসু-টিডব্লিওএ এর নেতাদের নীরবতায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন এলাকাবাসী। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সেরেজিং সাংমা(ছদ্মনাম) তাঁর ক্ষোভ এবং হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, "বাগাছাস...