উন্নয়ন ডি শিরা
মান্দিরা কী কবিতা পড়ে— এমন তীর্যক প্রশ্ন একবার আমাদের অগ্রজ এক কবির দিকে ছুড়ে মেরেছিলাম। তিনি লেখক সুলভ ভঙ্গিমায় বললেন, 'পাঠক কবিতা পড়ুক বা না পড়ুক কবির কাজ কবিতা লিখে যাওয়া, বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থার ত্রুটি-বিচ্যুতি, সঙ্গতি-অসঙ্গতি, প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ, প্রকৃতি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে লেখা। কবিতা পড়ার সাথে কবিতা লেখার নৈতিক সম্পর্ক নেই।' তাঁর কথা যুতসই লেগেছে। কবিতা পড়ুক বা না পড়ুক কবির কাজ কবিতা লিখে যাওয়া, সমাজ বৃহৎ সৃষ্টির প্রকৃতির প্রতি কবির দায়বদ্ধতা আছে, সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কবি নিয়ত কবিতা লিখে চলেন; লিখে যাবেন।
মান্দি সমাজেও এমন একজন কবি আছেন যিনি সমাজ দায়বদ্ধতার বোধ থেকে নিয়ত কবিতা লিখে চলেছেন, উপুর্যপরি তরুণদের উৎসাহিত করছেন লেখালেখিতে। মান্দি সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, সমস্যা - সম্ভাবনা, স্বদেশের কথা খুঁজে পাওয়া যাবে তাঁর কবিতায়; তাঁর কবিতায় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, করতোয়ার পাশাপাশি কংশ, নিতাই, সিমসাং উচ্চারিত হয়েছে সমানভাবে— তিনি কবি মতেন্দ্র মানখিন।ময়মনসিংহ ধোবাউড়ার বর্ডারঘেঁষা নয়াপাড়ায় নিভৃত জীবনযাপন তাঁর।
কবি নয়াপাড়াস্থ বাসভবনের নাম রেখেছেন 'ছায়াকানন'। ছায়াকানন থেকে তিনি মাতৃসূত্রীয় গারো সমাজের প্রতিটি ঘরে কবিতার গোলাপ ফোটানোর ইচ্ছে সযতনে পুষে রাখেন। নিজ ঘরের দেয়াল জুড়ে কবিতা কিংবা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ পদ লিখে রেখেছেন। শয়নেস্বপনে মজেছেন কবিতায়। এজন্য প্রায়শই সংসারে পালন করা হয় না দায়িত্বশীল ভূমিকা, ঘরণী তুষি হাগিদককে নিতে হয় বাড়তি দায়িত্ব। ভাবি তিনি সহনশীলতা না হলে হয়তো আমরা এমন সৃষ্টিশীল কবিতা পেতাম না! এ কারণে কবির সঙ্গীনিকে ধন্যবাদ।
মান্দি ভাষায় একটি গান আছে এমন— 'বাংআ জাবুছুম দুখনি সাগাল বালজ্রয়ে, রেবাজক চিংআ দা•আলো সেংআসাখোনা, বাংআ বুসুগ্রুম হাব্রি বুরুঙ রামাখো রিয়ে সকবাজক চিংআ দা•আলো রামা গিত্তালোনা' এই গানে গারো জাতির কঠিন ইতিহাস বাস্তবতার কথা ফুটে উঠেছে। এই গানটির রচয়িতা কবি মতেন্দ্র মানখিন। আজ তাঁর জন্মদিন। জন্মদিনে রইলো প্রাণঢালা শুভেচ্ছা, অকৃত্রিম ভালোবাসা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for supporting