টিউশনিতে গেলাম, পড়াচ্ছি। স্টুডেন্টের পুঁচকে ছোট ভাই এসেছে হাতে চকোলেট নিয়ে। এসে আমাকে বলছে, কাও, এটা তুমি কাও।
কয়েকবার না করলাম। তা-ও শোনে না। পুঁচকেটা চকোলেট আমার মুখে লাগিয়ে আবারও বলছে, ‘কাও’। আমার মুখ মেখে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে হাঁ করে খেয়ে নিলাম। না খেলে মুখ নোংরা করে ফেলত, আমি শিওর।
চকোলেট চিবচ্ছি আর পড়া দেখিয়ে দিচ্ছি। খাওয়া শেষ।
পুঁচকের মুখের দিকে চেয়ে দেখি, ওর চোখের জল টলমল করছে। পুঁচকেটা দুই হাত দিয়ে আমার মুখ ফাঁকা করার চেষ্টা করছে। কি বিরক্তিকর অবস্থা! না খেলেও জ্বালা, খেয়েছি তাতেও জ্বালা।
নিজেই হাঁ করলাম। ও মুখের ভেতরে তাকিয়ে দেখে, চকোলেট নেই। মানে খেয়ে ফেলছি। ওর বুঝতে দেরি ভ্যাএএএএ করে কান্না করতে দেরি নেই।
পাশের ঘর থেকে স্টুডেন্টের মা বলছে, ‘কি হয়েছে রে রাজু (আমার ছাত্র)? বিজু কাঁদে কেন?’ স্টুডেন্ট ডাইরেক্ট বলে দিয়েছে, ‘স্যার বিজুর চকোলেট খেয়ে ফেলেছে।
এই কথা শুনে মনে হলও চকোলেট না, আমি বিষ খেয়েছি।
কি লজ্জার ব্যাপার। স্টুডেন্টের ঠাকুমা এসে পুঁচকেটাকে নিয়ে গেল। কান্নার শব্দ বেড়েই যাচ্ছে। স্টুডেন্টের দাদু-দিদিমা পাশের ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করছে, ‘কি হয়েছে দাদা ভাই?’ স্টুডেন্টের ঠাকুমা বলে দিল, ‘বিজুর চকোলেট স্যার খেয়ে ফেলেছে।
এই কথা শুনে নিজেকে তখন ফাঁসির আসামি মনে হচ্ছিল।
এরপর এসেছে স্টুডেন্টের কলেজ-পড়ুয়া পিসি। সে-ও জেনে গেল, ‘বিজুর চকোলেট স্যার খেয়ে ফেলেছে।’
নিজেকে তখন বিরাট মাপের অপরাধী মনে হতে লাগল।
এরপর এসেছে কাজের মহিলা। সে-ও জেনে গেল, ‘স্যার বিজুর চকোলেট খেয়ে ফেলেছে।’ কাজের মহিলা তো বলেই ফেলল, ‘কাইন্দো না বাবু, স্যারকে মাইর দিমু’।
এই কথা শুনে ওই বাড়িতে থাকতেও পারছিলাম না, বের হতেও পারছিলাম না।
কাজের মহিলা বিজুকে কোলে নিয়ে দোকানে যাচ্ছে। বিজু তখনো কাঁদছে। রাস্তায় কেউ জিজ্ঞেস করবে, বিজু কাঁদে ক্যানো? কাজের মহিলা বলবে, স্যার বিজুর চকোলেট খেয়ে ফেলেছে।
আরো লোকের সঙ্গে পথে দেখা হবে, তারাও জানতে চাইবে, বিজু কাঁদে ক্যানো? এভাবে সারা এলাকা জেনে যাবে, ‘স্যার বিজুর চকোলেট খেয়ে ফেলেছে।
পরিশেষে :-আবদারে অন্ধ হয়ে পুঁচকেদের ফাঁদে পড়লেই বেকায়দা
@কালেক্টেড
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for supporting