মান্দি সমাজে ইনফরমেশন টেকনোলজির (IT) ভবিষ্যতঃ নতুন প্রজম্মের জন্য দিক নির্দেশনা সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মান্দি সমাজে ইনফরমেশন টেকনোলজির (IT) ভবিষ্যতঃ নতুন প্রজম্মের জন্য দিক নির্দেশনা

ধান ভানতে শীবের গীত 

আবিমার জলছত্র-গাছাবাড়িতে আমাদের স্নেহাস্পদ ডিকন প্রদীপ ফিলিপ ম্রং এর যাজক অভিষেক হতে যাচ্ছে ১৪ জানুয়ারি ২০২২। এই উপলক্ষে একটি স্মরণিকা পাবলিশ হবে। স্মরণিকার সম্পাদক মণ্ডলী আমাকে একটা শিরোনাম দিয়ে দিয়েছেন। কেউ যখন বলে দেন এই টপিকের উপর লিখবেন, তখন লিখতে একটু কষ্ট হয়ে যায়! সময়ও একটু বেশি লাগে! স্নেহের সবুজ ম্রং আর বিপুল রিছিল স্যার-এর অনুরোধে লেখাটি 'দ্য গারো নিউজ টুয়েন্টিফোর' এর পাঠদের সাথে শেয়ার করলাম। স্মরণিকাতে ভুল বশতঃ ড্রাফট কপি ছাপা হয়েছে! এজন্য আমরা দুঃখিত ... 

সিলেটের মাধবকুণ্ডে ভ্রমণ বিলাস সমিতির - ডু'রেং 

Information & Technology (IT) তে পৃথিবী এগিয়ে গেছে বহুদূর। বাংলাদেশেও এর ঢেউ আঁচড়ে পড়েছে। বাংলাদেশও হাটি হাটি পা পা করে একটু একটু এগিয়ে যাচ্ছে ইনফরমেশন টেকনোলজির আকাশ সমুদ্রে। এক্ষেত্রে বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার অনেক ভাল ভাল পদক্ষেপ নিয়েছে। যার ফল এই বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ!  বাংলাদেশ বেশ কোমর বেঁধেই নেমেছে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, এমপি, এবং তাঁর আইটি উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় এর অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণযোগ্য।  

আই টি জগতে আমার পদার্পণ

১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর পরই ইন্টারনেট দুনিয়ার সাথে পরিচিত হই। দেশী-বিদেশী কমপিউটার জগৎ নিয়ে লেখা ম্যাগাজিন পড়া শুরু করি। আমি আর অনুপম তখন কম্পিউটার বিষয়ক ম্যাগাজিন পড়তে শুরু করি।  কম্পিউটারে টাইপ করতে শিখি। ইন্টারনেট ব্রাউজ করে বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইটগুলো মনযোগ দিয়ে পড়ি। বন্ধু প্রশান্ত চিরান এর কাছেই টাইপ, কাট, পেস্ট শিখি প্রথম। অবশ্য এস এস সি পাশ করে ৩ মাসের টাইপিং কোর্স করেছিলাম টাইপ রাইটার দিয়ে। তারপর ভিশন চিসিম মামা ছিলেন আমার এমএস ওয়ার্ড আর এক্সেল এর শিক্ষক। তিনি আমাকে ফ্রি বেতনে শিখিয়েছিলেন! 

Prof. David J. Malan, PhD, Professor of Computer Science, Harvard University. Photo taken in 2019 while visiting Harvard University. I was attending an online course on Web programming with Python & JavaScript from HarvardX!

১৯৯৭-২০০৭ সালের মধ্যে জলছত্রে আমি এবং অনুপম ৪ টি ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলাম। সেগুলো হলোঃ ১৯৯৭ সালে সাইবার সল্যিউশান,  ২০০০ সালে 'ভ্রমণ বিলাস সমিতি',  ২০০১ সালে 'আসকি কম্পিউটার্স' এবং ২০০৭ সালে 'আসকি ডিজিটাল স্টুডিও।'

    ঢাকা-র এক হাই স্কুলের শিক্ষকদের সাথে সহভাগিতা 

ডিজিটাল বাংলাদেশ শুরু হওয়ার আগেই আমরা ডিজিটাল সেবা দেওয়ার যাত্রা শুরু করি! অর্থ আয় আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের ৭ গ্রামের মানুষের সময় বাঁচান, স্বল্প মূল্যে সেবা দেয়া। আমরা মনে হয় আমাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে পেরেছি । অনেকেই বিনামূল্যে কম্পিউটার প্র্যাকটিস করতে পেরেছেন আমাদের 'আসকি কম্পিউটার্স'-এ। 

 সাইবার সলিউশন - আমরা আবার এটি শুরু করতে যাচ্ছি

ভ্রমণ বিলাস সমিতিঃ 

'ভ্রমণ বিলাস সমিতি' বোধ করি পৃথিবীতে একটাই আছে! আমরা জলছত্র-গাছাবাড়ি এবং আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে ধনী-গরীব, ছোট-বড়, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই সারা বছর টাকা জমিয়ে বছরের শেষ কিংবা প্রথম দিকে ৩-৪ দিনের জন্য দেশের দর্শনীয় এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেখতে বেরিয়ে পড়ি। আমাদের স্লোগান ছিল, 'কাজ ত সারা বছর করি, চল কদিন বেড়িয়ে আসি!' 

ভ্রমণ বিলাস সমিতি'র  - ডু'রেং দল 

'পৃথিবী একটি বই, এবং যারা ভ্রমণ করেন না তারা এর একটি মাত্র পৃষ্ঠা পড়েছেন।'  সেন্ট অগাস্টিন-এর এই  লাইনটি  আমাদের বিশ্বাস এবং অনুপ্রেরণা! এদিক থেকে জলছত্র - গাছাবাড়ির মানুষেরা জীবনের বই বেশি পড়া মানুষ সন্দেহ নেই! তাঁরা দেশের দর্শনীয় স্থান, দেশের মানুষ দেখেছেন বেশী, মিশেছেন অনেক সংস্কৃতির মানুষের সাথে বেশী!

নিজের দেশ টাই যদি না দেখলেন, কি দেখলেন?

"দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া

একটি ধানের শিষের উপর একটি শিশির বিন্দু। " 

        ভ্রমণ বিলাস সমিতির - ডু'রেং কমিউনিটি 

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতার লাইনগুলোর মাঝেই প্রকৃতিকে খুঁজে পাওয়া যায়। অনেকে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বিদেশ ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তাঁদের অনেকেই হয়তো জানেন না দেশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে! 

     কবি ও অধ্যাপক খালেদ হোসাইন পিএইচডি, কবি ও অধ্যাপক ড আবু দায়েন, লেখক থিওফিল     নকরেক নিয়ে রুয়াকোনা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিশিকান্ত জাম্বিল স্যার এবং ছাত্র - ছাত্রীদের সাথে। পিএইচডি থিসিসের জন্য ফিল্ড ভিজিটের এক ফাঁকে । 

      আগে কাজ! ফিল্ড ভিজিটে গারো বর্ণমালা আবিষ্কারক স্বর্গীয় মারটিন রেমা'র সাক্ষাতকার নিচ্ছি আমি 

আমরা চেয়েছি আমাদের এলাকার ছোট-বড় সকলেই সেই দর্শনীয় স্থানগুলো দেখুক! তাঁদের মন, হৃদয়, মনন বড় হোক, পরিশীলিত, পরিমার্জিত হোক চিন্তা-চেতনা, চিত্ত আনন্দে আন্দোলিত হোক সমুদ্রের মত।

      ভ্রমণ বিলাস সমিতির - ডু'রেং কমিউনিটি 

 আমি খুব আনন্দিত এই জন্য যে আমি দেশের বাইরে চলে এলেও এর যাত্রা অব্যাহত আছে। আমি শুধু প্ল্যানিং এর সময় থাকি, শুধু শারীরিক ভাবে উপস্থিত থাকতে পারি না, কিন্তু মন পড়ে থাকে ডু'রেং এর সাথেই! দলের মানুষেরা ফিরে এলে আমি অদের মুখে গল্প শুনি! 

ভ্রমণ বিলাস সমিতির - ডু'রেং কমিউনিটি 

গত ২০-২১ বছরে আমাদের দেশের প্রায় সব কিছু দেখা শেষ! এখন আমরা দেশের বাইরে ভারত-নেপাল-ভুটান ট্যুর করার প্ল্যান করছি। আমরা ভ্রমণ বিলাস সমিতির বাইরের মানুষদেরও ট্যুরে নিই। আমাদের এই মডেল কিন্তু আপনারাও এপ্লাই করতে পারেন! 

  ডু'রেং এর ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা 

এখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যে কেউ যোগ দিতে পারেন। সবাইকে নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা এই দলের নাম দিয়েছি "ডু'রেং"। এই ডু'রেং এর ফেইসবুক পেইজ রয়েছে।    

     বেড়াতে বেড়াতে জাতি সংঘে 
আসকি কম্পিউটার্সঃ 

'আসকি কম্পিউটার্স' - এ আমরা নাম মাত্র কোর্স ফিতে কম্পিউটার এবং ইংরেজি শেখানো শুরু করি ২০০১ সালে। আমার বড় মেয়ে আসকি ক্যাথ্রিন চিসিম এর জন্মের পর পরই। উদ্দেশ্য ছিল এলাকার যুব সমাজকে কম্পিউটারের বেইসিক বিষয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। 

মূল আইটি জগতের সাথে আমার পরিচয়ঃ  

২০০৬-২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্কলারশিপ পেয়ে পেন্সিল্ভেনিয়া স্টেট এর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য  বিখ্যাত ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করতে যাই। সেখানে ৯ টি কোর্স এর মধ্যে "Integration of Information & Technology in the classroom" এর উপর একটা কোর্স  ছিল। 

      ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটিতে বন্ধুদের সাথে 

এই কোর্সে একজন শিক্ষক কীভাবে 'ব্লগিং' করে সেখানে কন্টেন্ট, ছবি, ভিডিও আপ্লোড করে ক্লাসরুম এ সেগুলো ব্যবহার করে ছাত্রদের ক্লাসে বেশি মনোযোগি করা যায়, কীভাবে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েব সাইট তৈরী করা যায়, কীভাবে বেসিক এইচ টি এম এল, সি এস এস ব্যবহার করে ওয়েব পেইজ তৈরী করে শ্রেণী কক্ষে ব্যবহার করা যায় ইত্যাদি শেখান হয়েছিল।

অধ্যাপক ড ডেভিড ইউরিয়াস ও অধ্যাপক ড বারবারা হকিয়ে - এর কাছ থেকে গ্র্যাজুয়েশান এর সার্টিফিকেট গ্রহণ 

 আমাদের শেখান হয়েছিল, "প্রত্যেকের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখা উচিৎ কারণ প্রোগ্রামিং আমাদেরকে চিন্তা করতে শেখায়।" ঐ ক্লাশে বেসিক জাভা প্রোগ্রামিংও শেখায় আমাদের। আমার আইটি অধ্যাপক ড কজলস্কি ছিলেন জার্মান-আমেরিকান। 

      যুক্তরাষ্ট্র  থেকে ফিরে এসে বীর উৎপল নকরেক এর সাথে  

শেখা জিনিষ কাজে লাগাতে না পারায় হাত নিশপিশঃ 

যুক্তরাষ্ট্রে আমার ভাল জব এর অফার ছিল। এখানে থেকে যাওয়ার সেরা অফার বলা যায়। কিন্তু আমি দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই! আমার বন্ধুরা আমাকে অনেক বুঝায়। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলাম। 

দেশে ফিরে আসি। আমি ২০০৭ সালে দেশে ফিরে এসে আমার শেখা বিষয় কোথাও কাজে লাগাতে পারছিলাম না। কারণ তখনও আমাদের দেশে ক্লাসরুমে ইন্টারনেট ছিল না। আমি প্রতি মাসে ১৩০০-১৫০০ টাকা দিয়ে মডেম ব্যবহার করে ক্লাসরুমে ইন্টারনেট ব্যবহার করার চেষ্টা করি মাঝে মাঝে। কিন্তু এর গতি এত স্লো ছিল, বলা বাহুল্য। 

 যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আমাদের কর্পোস খ্রীস্টি হাই স্কুলের ছাত্র - ছাত্রী এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মণ্ডলীর সাথে আমার স্কুল জীবনের কিছু বন্ধুদের নিয়ে 

 তবে তখন বেশ দামি ডিজিটাল ক্যামেরা, ডিজিটাল রানিং ক্যামেরা কিনেছিলাম ঐ কোর্সের জন্যই। একটা দামী ল্যাপ্টপও আমাকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়েছিল পড়াশুনার কাজে ব্যবহার এবং গবেষণা কাজে ব্যবহার করার জন্য।

ময়মনসিংহ ডায়োসিস - এ উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক সেমিনারে কবি জর্জ রুরামের আমন্ত্রণে কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের সাথে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর 

দেশে ফিরে আমি যেখানে একটু সুযোগ পাই সেখানেই ঐ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করি। কিন্তু অনেকেই এতে ভুল বুঝতে শুরু করেন। অনেকেই 'খালি বড় বড় কথা' বলে মনে করতেন। আবার কেউ কেউ 'রাইসংফা' বলতেন!  আমি কিন্তু দমে যাইনি। 

      ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশে উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক সেমিনারে অংশগ্রহণ কারীদের একাংশ 

কিন্তু আমি দমে যাই নি। আমেরিকা থেকে ফিরে আমি বিভিন্ন সেমিনারে গেছি আর আমার বলার কথা আমি বলে গেছি। যারা শুনেছেন লাভবান হয়েছেন, যারা শুনেন নি নিশ্চয়ই আফসোস করছেন!  

      আচিক লিপির সন্ধানে আচিক লিপি আবিষ্কারক মিঃ প্রিন্স ফারুক দিও এবং অনন্যা চিসিম এর বাড়িতে আমার শিক্ষক ড খালেদ হোসাইন এবং আমার ডক্টরাল সুপার ভাইজার ড আবু দায়েন স্যারের সাথে! পিএইচডি শেষ না করেই আমি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসি ... 

আমার যন্ত্রগুলোর সৎ ব্যবহারঃ   

আমি খুব মনে প্রাণে চাইছিলাম আমার কেনা সেই যন্ত্রগুলো আমাদের গ্রাম এলাকায় ব্যবহার করি। আমি চাইছিলাম না প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা দামের কেনা ডিভাইসগুলো পরে থাকুক। কথাগুলো অনুপমকে বললাম। অনুপম বেশ অনুসন্ধিৎসু ছিল এসব ব্যাপারে। কি করা যায় এই নিয়ে আমরা আলোচনা করে একটি ডিজিটাল স্টুডিও করে ফেলি। 

ছবি জর্জ রুরাম | জলছত্র এডিপি এর বাৎসরিক সেমিনারে কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র - ছাত্রীদের সাথে ২০১০ সালে 

তখন আমাদের পাড়ার ছেলে ডমিনিক মৃঃ বেকার ছিলেন। মাঝে মাঝে কুইচা মাছ শিকার করতেন। আমরা তাকেই প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়ে 'আসকি ডিজিটাল স্টুডিও'তে বসিয়ে দিলাম 'ডিজিটাল ক্যামেরা ডিরেক্টর' পদ দিয়ে। 

      ফটো ক্রেডিট ডমিনিক মৃঃ, আসকি ডিজিটাল স্টুডিও  

কদম নকরেক ও তখন কলেজ পাস করে বেকার ছিল। আমরা তাকেও মোবাইল সার্ভিসিং - এ ডিপ্লোমা কোর্স করিয়ে আনি আমরা যেন মোবাইল  সাভিসিং-এর জন্য আমাদের গ্রামের মানুষকে আর ময়মনসিংহ দোউড়াতে না হয়। কদমের জন্য আসকি ডিজিটাল স্টুডিও এর একপাশে বসার জায়গা করে দেই। তার প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয় 'কদম মোবাইল সার্ভিস সেন্টার'।  


যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসাঃ   

যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পত্রিকায় মাঝে মাঝে লিখতাম ২০০৭ সাল থেকেই। আমাকে কিছু পত্রিকার সম্পাদক চিনতেন ভাল লিখিয়ে হিসেবে। 'সাপ্তাহিক এখন সময়' নামে একটা পত্রিকার সম্পাদক আমাকে 'প্রধান সহ-সম্পাদক' হিসেবে যোগদানের আমন্ত্রণ জানালে আমি সেটি গ্রহণ করি।

ফটো ক্রেডিটঃ অনুপম চিসিম। স্বর্গীয় প্রিন্সিপাল মন্টু ক্লেমেন্ট ম্রং, আমার শ্বশুর এবং আমরা দূর্গাপুরের পথে । আমরা বেড়াতে গেলেই তাকে মিস করব 

 ২০১০ সালে আমি আমেরিকাতে চলে আসি। এখানে এসে "Information & Technology " এবং "Web Technology", "Software Engineering" ব্যাপক পড়াশুনা এবং কাজ শুরু করি। 

PeopleNTech থেকে Test Automation, New York Code & Design Academy থেকে  Front End Web Development, Lambda School থেকে Full Stack Software Development & Computer Programming, Coding Dojo থেকে Front End Engineering, Python Full Stack এবং MEAN Stack এর উপর ৩ টি BELT অর্জন করি এবং Ruby on Rails Certified Developer হই। আমি ওয়েব অটোমেশান ইঞ্জিনিয়ারিং - এও সার্টিফাইড ইঞ্জিনিয়ার। 

পৃথিবীর সবচেয়ে দামী প্রোগ্রামিং স্কুলের বুটক্যাম্প-এ অংশগ্রহণ 

উল্লেখ্য, New York Code & Design Academy, Lambda School, Coding Dojo কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখার পৃথিবীর সব থেকে ব্যয়বহুল স্কুল । পৃথিবীর সব চেয়ে নামী বিশ্ববিদ্যালয় MIT, HARVARD ইউনিভার্সিটি যেখানে ৬-৮ হাজার ডলার নেয় সেখানে এই স্কুলগুলোতে প্রতি টা কোর্সের জন্য ১৫-২৫ হাজার ডলার কোর্স ফি দিতে হয়।  Lambda School এবং Coding Dojo পৃথিবীর সব থেকে বড় অনলাইন স্কুলও বটে। পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে এসব স্কুলে পড়তে আসেন। আমি Bank Loan নিয়ে কোর্স গুলো করে ফেলি। টাকাগুলো শোধ করার জন্য আমাকে অতিরিক্ত সময় ফ্রিল্যান্সিং,  রাত জেগে পত্রিকা অফিস পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট, ফলের দোকানে ফল সাপ্লাই, স্ট্যাশনারি - এর মত দোকানগুলোতে এক্সট্রা কাজ করতে হয়েছে! কিন্তু আমি পড়াশুনা ছাড়িনি। 

স্ট্যাশনারি দোকানে সেলস এসোসিয়েট আমি! বড় হওয়ার জন্য কোন কাজই ছোট নয়। এখন আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার 

কিন্তু আমি মনে করি আমার শ্রম, সময়, অর্থ ব্যয় সার্থক হয়েছে। আমি এখন পৃথিবীর সেরা এবং এন্ডভান্সড আইটি স্পেশালিষ্টদের একজন! পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে থেকে আমি সেবা দিতে পারি! 

অসুস্থ্যতায় পিছিয়ে যাওয়া আর হতাশ জীবনঃ  

Coding Dojo থেকে গ্র্যাডুয়েশন করতে দেরী হয় অসুস্থ্যতার কারণে। হতাশ হতে হয় সব ক্ষেত্রে। অসুস্থ্যতার কারণে জবে জয়েন করতে না পারা টা খুব কষ্টের ছিল। তবে কাউকে বুঝতে দেই নাই। কারণ আমি জানি, "দেয়াল ধ্বসে যাওয়ার খবর পেলে মানুষ ইটগুলোও খুলে নেয়।"    

 দীর্ঘ চিকিৎসা এবং অনেকর প্রার্থনায় সুস্থ্য হয়ে ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর মাসে Revature কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করি। এখানে এসেও আমাকে Java Full Stack Software Engineering নিয়ে পড়াশুনা করতে হচ্ছে চাকুরীর পাশাপাশি। এখানে ১৯০০ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের মধ্যে আমি একমাত্র বাংলাদেশী আদিবাসী কাজ করছি। দেশের বাইরে মান্দিদের মধ্যে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সম্ভবত এখনও আমি একাই! 

বন্ধু - স্বজনদের আইটিতে আসার আমন্ত্রণ, উৎসাহ দানঃ 

আমি সবাইকেই আইটি নিয়ে পড়াশুনা করার, কোর্স করার উৎসাহ দিয়েছি ২০০৭ সাল থেকেই। এখানে বিপুল সম্ভাবনা আছে সেটা বার বার বলে আসছি। আমি বন্ধু জর্জ নকরেক, অনুপম চিসিম, প্রাঞ্জল নকরেক, সুবীর জেভিয়ার নকরেক, বন্ধু প্রশান্ত চিরান, ফিলিপ মৃ, হিমা রিছিল, বিজয় হাদিমাসহ অনেক গারো ছেলে-মেয়েদের সব সময় এই সেক্টরে পড়াশুনা এবং কাজ করার জন্য উৎসাহ, অনুপ্রেরণা যুগিয়েছি সব সময়। আমার বন্ধু প্রশান্ত চিরান এমনিতেই কম্পিউটারে এক্সপার্ট! অনেক গারো ছেলে-মেয়েকে আমি অনলাইনে কখনও ফ্রি, কখনও স্বল্প মূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, দিচ্ছি এবং যতদিন বেঁচে থাকব দিয়ে যাব। এঁদের প্রায় সবাই এখন এই সেক্টরে কাজ করছেন। 

আমার জন্মস্থানে ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড কানেকশানঃ 

আমার জন্মস্থান গায়রাতে লক্ষাধিক টাকা খরচ করে ইন্টারনেট এর ব্রডব্যান্ড কানেকশান এবং ল্যাপ্টপ কিনে দিয়েছি আমার বাবা-মায়ের ভিটে বাড়িতে। উদ্দেশ্য একটিই - সেখানকার ছাত্র-ছাত্রী, যুবক-যুবতীরা যেন আইটি সেক্টরে আসার অনুপ্রেরণা পায়। সেখানে গ্রামের মানুষের সাথে অনলাইনে কথা বলি অযথাই। গ্রামের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা দেখছে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপাড় থেকে, হাজার মাইল দূরে থেকেও আমি কথা বলছি, ক্লাস নিচ্ছি কত অবলীলায়! মনের অজান্তে একদিন তারাও জড়িয়ে যাবে আইটি জগতের গভীর সমুদ্রে। আমার স্বপ্ন ঐ টুকুই। 


সুবীর জেভিয়ার নকরেক আইটি জগতে সেরাদের সেরাঃ  

সুবীর জেভিয়ার নকরেককে আমি আইটি জগতে আসার জন্য অনেক উৎসাহ দিয়েছি শুরুর দিকে। তিনি এখন সেরাদের সেরা। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং জগতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানের সিইও তিনি। তিনি নিজে আগ্রহী হয়ে নিজে প্রশিক্ষণ নিয়ে "নকরেক আইটি ইন্সটিটিউট' নামে একটি প্রতিষ্ঠান করেছেন। সুবীর "কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়" হয়েছেন ধীরে ধীরে।  

সুবীর বলেছে, "মামা, খালি তুমি পাশে থাকবা।" 

আমি বলেছি, "সাথে আছি সব সময়, জাস্ট গো এহেড!" আমি তাঁকে সব সময় উৎসাহ দেই। 

NITI প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকে আমি সাথে রয়েছি কো-ফাউন্ডার হিসেবে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে গত ৬ বছরে ৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরের ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আমাদের অনেক ছাত্র - ছাত্রী মাসে ১০ হাজার থেকে শুরু করে দুই - আড়াই  লাখ টাকার উপরেও আয় করছে প্রতি মাসে। মিঃ বিন্দু রিছিল, মিসেস ডিনা মৃঃ, মিঃ থিওফিল দিও প্রমুখ তার উজ্জ্বল উদাহরণ। এঁদের অনেকেই এখন মেন্টর হিসেবে নকরেক আইটি তে পড়াচ্ছেন।   

যেখানে আমি শত শত মানুষকে ফ্রি পড়াই প্রতিদিনঃ   

২১ মিনিট স্কুল - এ ওয়েব অটোমেশান ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াই। ছোটদের জন্য "ছোটদের জন্য প্রোগ্রামিং" এবং বড়দের জন্য "সবার জন্য প্রোগ্রামিং" নামে ইউটিউব চ্যানেলে ফ্রি পড়াই। ইংরেজদের জন্য "ফ্রি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং" নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে।  'ইংলিশ উইথ মাস্টার মশাই" নামে আমার ফ্রিতে ইংরেজি শেখার ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে। তবে টাকা নিয়েও ইংলিশ কোর্স করাই। ২০০৭ সাল থেকেই আমি অনলাইনে ইংরেজি পড়াই দেশে এবং বিদেশে। 

ইন্সট্রাক্টরিতে আমি পাইথনজাভা প্রোগ্রামিং, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ইন টেস্ট অটোমেশন পড়াই। পৃথিবীতে আমি প্রথম সেলেনিয়াম টেস্ট অটোমেশান বাংলায় পড়াই। এছাড়া ওয়েব অটোমেশান, BDD Cucumber Framework, Robot Framework বাংলায় অনুবাদ আমি প্রথম করি। এখনও এগুলোর বাংলা বিরল। 

আইটি ক্ষেত্রে মান্দিরা ছেলে -মেয়েরা কি করতে পারে?

আইটি ক্ষেত্রে আমাদের মান্দি ছেলে-মেয়েদের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। মান্দি ছেলে-মেয়েরা এখানে যে যা স্বপ্ন দেখবেন তাই হতে পারবেন। তবে স্বপ্ন পূরণের জন্য লেগে থাকতে হবে, ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, কাজ করতে হবে অনেক।

     আজিয়া গেট টুগেদার ২০১০! থমথমানি নক, পীরগাছা সেন্ট পৌলস মিশন, আবিমা  

তাঁরা এস এস সি এবং এইচ এস সি পরীক্ষা দেওয়ার পরই নকরেক আইটি ইন্সটিটিউট-এ ভর্তি হয়ে এক বা একাধিক বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে আন্তর্জাতিক জব মার্কেট প্ল্যাসে গুলোতে কাজ শুরু করতে পারে। 

       আজিয়া গেট টুগেদার ২০১০! থমথমানি নক, পীরগাছা সেন্ট পৌলস মিশন, আবিমা  

এতে দেখা যাবে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা নিজেদের খরচেই পড়াশুনা চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি পরিবারকেও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে  পারবে বলে আমার বিশ্বাস। 

মান্দি ছেলে-মেয়েরা আইটি জগতের কি কি বিষয় শিখতে পারেন? 

তাঁরা গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, সাইবার সিকিউরিটি, টেস্ট অটোমেশন শিখে নিতে পারেন ৩-৬ মাস কোর্স করেই।  ইংরেজি না জানলে একটা কোর্স করে নিলে ভাল হবে। নকরেক আইটি ইংরেজির কোর্সও করায়। 

এখন সুযোগ আছে শেখার, এখন শেখা না শেখা আপনাদের ব্যাপার । তবে আগেই বলে রাখি , "সময় পার হয়ে গেলে হবে না সাধন।" 

    নিজের গ্রামে এক শিক্ষা সেমিনারে 

এর জন্য কি কি লাগবে?

এর জন্য মিনিমাম এস এস সি পাশ করা লাগবে। তবে প্রবল আগ্রহ থাকলে এস এস সি পাশ না করলেও চলবে। একটা ল্যাপ্টপ লাগবে যার দাম ২৫-৩০ হাজার। কোর্স ফি ৫-১০ হাজার। 

জলছত্র শান্তি নিকেতনে কলেজ - বিশ্ব বিদ্যালয় এর ছাত্র - ছাত্রীদের সাথে সহভাগিতা। ফটো ক্রেডিট ডমিনিক মৃঃ , আসকি ডিজিটাল স্টুডিও 

অর্থাৎ কারো যদি অদম্য ইচ্ছা আর ৪০ হাজার টাকা থাকে, তিনি ইচ্ছে করলেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন। যাদের টাকা নেই তাদের জন্যও আমরা টাকার ব্যবস্থা করার রাস্তাও করে দেই! 

আর কি চান? 

      সেমিনারে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় রুমের বাইরে অনেকেই। অপর পাশে এমন ! 

কেন আইটি বেইজড স্কিল শিখব?

ইদানীং পত্র পত্রিকায় প্রায়ই দেখি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ(সম্মান), এম এ পাশ করে কেউ কেউ ১০-১২ হাজার টাকার কাজ করছেন, কেউ কেউ আবার তাও পাচ্ছেন না। কেউ কেউ হতাশায় আত্মহত্যার মত পথ বেছে নিচ্ছেন। কেউ কেউ ডিপ্রেশনে ভুগে নেশার জগতে ডুবে যাচ্ছেন।  আমি মনে করি, এরা যদি পড়াশুনার পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, সাইবার সিকিউরিটি শিখে নিতেন, কোনদিন মরে যাওয়ার চিন্তা করার সময়ই পেতেন না! 

  আপ্পা - আচ্চুদের সাথে 

শেষ কথাঃ 

আমার বিশ্বাস, আগামী ১-৫ বছরের মধ্যে গারো ছেলে-মেয়েদের মধ্যে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা ফেইসবুক, গুগল, নাসা, আমাজন, পেপাল, এ্যাপল, মাইক্রোসফট, আইবিএম এর মত জায়ান্ট কোম্পানিগুলোতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কিংবা আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করতে যাবেন। 

মনে রাখবেন, শেখার কিংবা পড়াশুনার কোন শেষ নেই, নির্দিষ্ট বয়সও নেই। যারা টেকনোলজি নিয়ে কাজ করতে চান তাঁদের অনবরত নিজেদের আপডেট করতে হয়, পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হয়। যেদিন শেখা বন্ধ করে দিবেন, সেদিন থেকেই ধীরে ধিরে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মার্কেট থেকে ছিটকে পড়তে হয়।


   বেদুরিয়া গ্রামে আজিয়ার মত বিনিময় ও আলোচনা সভা ২০১০ 

আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বলে বসে থাকি না। নিজেকে আপডেট করি প্রতিদিন। এই যেমন চাকুরীর পাশাপাশি আমি এখন Nucamp-এ  Cloud  Computing বিষয় নিয়ে Complete Software Engineering পড়ছি। এই পড়াশুনা শেষ হবে আগামী নভেম্বর ২০২২ সাল। 

দেশে ফেরার স্বপ্নঃ    

ভবিষ্যতে দেশে ফিরে গিয়ে গরীব মানুষের জন্য মধুপুরের শালবনে বিশ্ব মানের একটি আইটি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি! 

      বন্ধু ও সহযোদ্ধা প্রশান্ত চিরানের আঁকা লগো তে আজিয়া'র পতাকা 

আমি আমার সকল কাজে আবিমাবাসীর সহযোগিতা সব সময় পেয়েছি। আশা করি সহযোগিতা পাব এই কাজেও। 

      আজিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০০৯! এ ধারা অব্যাহত থাকুক 

        জাতি সংঘের সামনে! যেখানে থাকি আছি শান্তিতে ও সংগ্রামে  

যে কোন পরামরশের জন্য Email: beaboss@bossdevelopers.org

নকরেক আইটি ইন্সটিটিউট এর সাথে কথা বলতে ফোন করুনঃ ০১৯২৪ ৯৩ ৫৩ ৫৪ 

@বাবুল ডি' নকরেক,

শিক্ষক, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, গল্পকার, গীতিকার ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক 

পুনশ্চঃ  Nucamp নিউ ইয়র্কের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অন্যতম বিখ্যাত অনলাইন-অফলাইন স্কুল।  Complete Software Engineering কোর্স করতে এখানে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার মত খরচ হয়। তুলনা মূলক ভাবে খরচ কম New York Code & Design Academy, Lambda School, Coding Dojo এর তুলনায়। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'মধুপুর সরকারী কলেজঃ অবসরকালে যেমন কেউ বিদায় দেন না,তেমনি কেউ বিদায় পান না' - এমনই হৃদয় বিদারক স্ট্যাটাস অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক ও সিনিয়র সাংবাদিক জয়নাল আবেদীনের, নেট দুনিয়ায় তোলপাড়

জেফিরাজ দোলন কুবি, ময়মনসিংহ থেকে 'মধুপুর সরকারী কলেজঃ অবসরকালে যেমন কেউ বিদায় দেন না, তেমনি কেউ বিদায় পান না' - এমনই হৃদয় বিদারক ফেইসবুক স্ট্যাটাস ঝড় তুলেছে নেট দুনিয়ায়! মধুপুর সরকারী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন-এর স্ট্যাটাসে ঐ কলেজের কিছু বর্তমান, প্রাক্তন কলেজ শিক্ষক এবং ছাত্র - ছাত্রীরা কমেন্ট করেছেন। কেউ কেউ দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সেখানে কিছু অভিভাবকগণও তাঁদের অভিমত প্রকাশ করেছেন। সব মিলিয়ে ঠিক মোক্ষম সময়ে স্ট্যাটাসটি সবার মনে এবং হৃদয়ে দাগ কাটতে পেরেছে মনে করছেন সবাই। অনেকে একে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন। যিনি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তিনি ঐ কলেজের সহকারী অধ্যাপক (অবসর প্রাপ্ত), ইতিহাস বিভাগ। তিনি ৪০ বছরেরও অধিক সময় ধরে কাজ করছেন দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র করেস্পন্ডেন্ট হিসেবে। লেখাটি গুরুত্ব পেয়েছে এই কারণেও। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, " টাঙ্গাইলের মধুপুর সরকারি কলেজ (বর্তমানে) এমন একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানকার শিক্ষক এবং স্টাফরা অবসরে গেলে কেউ কাউকে কখনো বিদায় সংবর্ধনা দেন না এবং প্রতিদানে কেউ সংবর্ধনা পান না! এজন্য অধ্যক্ষদের ভাগ্য...

নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিলেন সিমব্রি অর্ণি সাংমা

জেফিরাজ দোলন কুবি ময়মনসিংহ থেকে,  বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিয়েছেন সিবব্রি অর্ণি সাংমা। তিনি ৫ জানুয়ারী, ২০২২ ঢাকার নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে যোগদান নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে সাংমা গত ৮ জানুয়ারী পতেঙ্গা নাভাল একাডেমীতে ৩ বছর মেয়াদী দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণে যোগ দেন। অর্ণি গারো আদিবাসীদের মধ্যে সর্বপ্রথম নৌবাহিনীর কমিশন্ড র‍্যাংক-এ সুযোগ পেলেন।      বাবা-মা ও বোনদের সাথে  অর্ণি  নৌবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী নৌবাহিনীর নেভাল একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ১৮ মাস ও মিভশিপম্যান হিসেবে ১৮ মাস আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সাব-লেফটেন্যান্ট পদে নিয়মিত কমিশন প্রদান করা হয়ে থাকে।     গারোদে র পোশাক পরতে ভালোবাসেন  অর্ণি সাইমন স্বর্ণেন্দু সাংমা ও সুচরিতা রেমার জেষ্ঠ সন্তান সিমব্রি অর্ণি সাংমা ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী। অর্ণি ময়মনসিংহের ভিক্টোরিয়া মিশন প্রাইমারী স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে কৃতিত্বের সাথে মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি ও মুমিনুননেসা সরকারী মহিলা কলেজে হতে এইচএসসি...

আমার দেখা একজন সাদা মানুষ

  In Memory of Hon'ble State Minister for Social Welfare Affairs, late Pa Advt Promod Mankin MP. Rest in peace Sir... প্রাক কথন কলেজ জীবন শুরু করার আগে আমার শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনে দেখা একজন অসাধারণ মানুষকে নিয়ে কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম! সে লেখা আজও শেষ করতে পারি নি। ইচ্ছে করত একটা সাদামাঠা সে কবিতা হবে, হয় নি। আজ আবার সেই মানুষটাকেই নিয়ে লিখছি। একদম সাদা - রঙহীন, গন্ধহীন, রসহীন হবে সে লেখা। লেখায় রঙ চং রাখতে চাই না। আমার কাছে থেকে, দূরে থেকে দেখা না দেখা কিছু কথা। একান্ত ব্যক্তিগত কিছু নিরীক্ষণ থেকে। এক তখন দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি। জীবনে প্রথম তাঁকে দেখেছি! বাবা বললেন, "তোমার ফাজং (জ্যাঠা), সালাম করো।" যে লোকটাকে কখনো দেখিই নি, তাঁকে ঝুপ করে সালাম করাটা কিছুটা কষ্টেরই ছিল বটে আমার জন্য। তাই আমি "নমস্কার আংকেল, কেমন আছেন?" বলে কেটে পড়তে চাইলাম। "ভাল, তুমি কেমন আছ? তুমি তো খুব সুন্দর করে নমস্কার দিতে পারো বাবা। কি নাম তোমার?" আরও কিছু কথা চলল। তারপর তিনি বললেন, "তুমি তো খুব সুন্দর করে বাংলা বল! তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। দেখো, আমা...

সর্বাধিক পাঠ করা লেখা

নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিলেন সিমব্রি অর্ণি সাংমা

জেফিরাজ দোলন কুবি ময়মনসিংহ থেকে,  বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিয়েছেন সিবব্রি অর্ণি সাংমা। তিনি ৫ জানুয়ারী, ২০২২ ঢাকার নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে যোগদান নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে সাংমা গত ৮ জানুয়ারী পতেঙ্গা নাভাল একাডেমীতে ৩ বছর মেয়াদী দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণে যোগ দেন। অর্ণি গারো আদিবাসীদের মধ্যে সর্বপ্রথম নৌবাহিনীর কমিশন্ড র‍্যাংক-এ সুযোগ পেলেন।      বাবা-মা ও বোনদের সাথে  অর্ণি  নৌবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী নৌবাহিনীর নেভাল একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ১৮ মাস ও মিভশিপম্যান হিসেবে ১৮ মাস আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সাব-লেফটেন্যান্ট পদে নিয়মিত কমিশন প্রদান করা হয়ে থাকে।     গারোদে র পোশাক পরতে ভালোবাসেন  অর্ণি সাইমন স্বর্ণেন্দু সাংমা ও সুচরিতা রেমার জেষ্ঠ সন্তান সিমব্রি অর্ণি সাংমা ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী। অর্ণি ময়মনসিংহের ভিক্টোরিয়া মিশন প্রাইমারী স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে কৃতিত্বের সাথে মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি ও মুমিনুননেসা সরকারী মহিলা কলেজে হতে এইচএসসি...

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নিলেন ১১ মেধাবী গারো শিক্ষার্থী

ফৈবি কুবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জায়গা করে নিয়েছেন ১১ জন গারো কৃতি শিক্ষার্থী। তাঁরা ২০২০-২০২১ সেশনে ভর্তি হবেন। ডেলা চিরান দৃষ্টি মানখিন যারা বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করলেন তারা হলেন : দৃষ্টি মানখিন (নৃবিজ্ঞান), জেসিকা নকরেক স্বস্তি(আইন), পাপিয়া চিছাম(আইন), ডেলা চিরান (ফিন্যান্স), রিংচি মৃঃ (একাউন্টিং), স্পন্দন রেমা( কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), ইফ্রোইম রেমা (কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), নিঃস্ব রংদী( অর্থনীতি), রুদ্র ম্রং( সমাজবিজ্ঞান), ইসুদুর পল রংদী(পপুলেসন সাইন্স) এবং সাগাল সিমসাং(দর্শন)। পুনশ্চঃ সবার ছবি পাওয়া যায় নি। পাওয়া মাত্র আমরা সবার ছবি দিয়ে দিব ... সংবাদ টি শেয়ার করে বন্ধু - স্বজনদের জানিয়ে দিন

ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাটে ২ গারো আদিবাসী ছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকারঃ ধর্ষকেরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে

ময়মনসিংহ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক,  গত ৩০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটের গাজিরভিটা ইউনিয়নে দুইজন গারো আদিবাসী ছাত্রী গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছে।  ধর্ষিতা ছাত্রীদের বয়স ১৩-১৪ হবে।  জানা গেছে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে রাতের বেলা বাড়ি ফেরার পথে ঐ দুই জন স্কুল ছাত্রী ছয় বখাটে যুবকদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়।  ধর্ষকদের একজনের নাম মোঃ রিয়াদ বলে জানা গেছে। রিয়াদ কচুয়াকুড়া গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল মান্নানের পুত্র এবং বাকী ৫ জন ধর্ষক রিয়াদের বন্ধু বলে জানা গেছে।  এদের বয়স ২০-২৫ এর মধ্যে হবে বলে জানা গেছে।  হালুয়াঘাট থানার ওসি জানিয়েছেন, তাঁরা আসামীদের খুব শীঘ্রই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনবেন।  তবে এলাকাবাসী বলছেন, বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সামাজিক এবং ছাত্র সংগঠনগুলো এখনও অনেক টা নীরব। এই সংগঠনগুলো প্রতিবাদ করলেই কেবল ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন।  বাগাছাস-গাসু-টিডব্লিওএ এর নেতাদের নীরবতায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন এলাকাবাসী। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সেরেজিং সাংমা(ছদ্মনাম) তাঁর ক্ষোভ এবং হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, "বাগাছাস...