গারো সমাজের সংক্ষিপ্ত সাতকাহন সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গারো সমাজের সংক্ষিপ্ত সাতকাহন

গারো সমাজের সংক্ষিপ্ত সাতকাহন

এক

গারো সমাজে 'ম্যাজিস্ট্রেসী পাওয়ার' বা 'নির্বাহী ক্ষমতা' ছেলেদের একছত্র অধিকার! গারো সমাজে নারীরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির মত এবং পুরুষরা প্রধানমন্ত্রীর মত ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন।

দুই

এই সমাজে মেয়েরা রাজকন্যা, ছেলেরা একেক টা রাজপুত্র। রাজকন্যারা বড় হয়ে 'রাষ্ট্রপতির মত' সর্বোচ্চ সম্মানের জায়গায় আসীন হন, এবং রাষ্ট্রের তথা পরিবারের শোভা বর্ধন করেন। রাষ্ট্রপতির কোন ক্ষমতা নেই জেনেও রাষ্ট্রের সকল নাগরিক যেমন তাঁকে শ্রদ্ধা করেন, তেমনি পরিবারেও মা'কে সকলেই নিঃশর্ত সম্মান করেন। 
          Kushal Bhowmick, সহকারী অধ্যাপক, সাদাত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, করোটিয়া, টাঙ্গাইল 

এই সমাজে বলতে গেলে একজন নারী নাম মাত্র সম্পদ এবং সম্পত্তির মালিক হন। এর দেখাশুনা থেকে শুরু করে, বিলি - বন্টন, এমন কি বেচা - কেনা পর্যন্ত সবই করেন পুরুষরাই। এখানে নারীদের ভূমিকা একেবারেই গৌণ। আমরা কথায় কথায় বলি, আমাদের পরিবারের প্রধান মা! প্রকৃত পক্ষে গারো সমাজে বাবাই পরিবার প্রধান।


তিন

পরিবারের সকল সিদ্ধান্তের মালিকও পুরুষরাই; নারীদের কাছে শুধুমাত্র মতামত গ্রহণ করে থাকেন। শুধু নিয়ম রক্ষার জন্য পরিবারকত্রিকে (দ্বিতীয় পরিবার প্রধান, নক্রম থাকলে তৃতীয় পরিবার প্রধানকে) বিষয় টি জানানো হয়, যেমন জানানো হয় রাষ্ট্রপতিকে! রাষ্ট্রপতির যেমন কোন সংসদীয় বিলে সই না করে পারেন না, তেমনি পরিবারে সাধারণত নারী কোন পুরুষের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন না।

চার

জম্ম নেওয়া মাত্রই একজন গারো ছেলে রাজপুত্র হয়েই জম্মান। তিনি শুধু মাত্র রাজপুত্র হয়েই জম্মান না, তিনি হয়ে উঠেন একজন 'চ্রা'। আর গারো সমাজে একজন চ্রা পূর্ণ মন্ত্রীর সমমর্যাদাপূর্ণ। তাঁর জন্য বরাদ্দ থাকে আলাদা মর্যাদার আসন। পরিবারে মাছের মুড়ো, মুরগীর রান, সব থেকে ভাল জিনিষ মেয়েদের জন্য নয়, সেগুলো বরাদ্ধ থাকে ছেলেদের জন্যই।

পাঁচ

রাজপুত্ররা বড় হয়ে 'প্রধানমন্ত্রীর মত" প্রতাপশালী হন। বিচারে - শালিসে, সমাজে - নমাজে, বাজারে - বানিজ্যে, কোর্টে - কাচারিতে পুরুষরাই যান। বিচারিক রায় দেওয়ার ক্ষমতা গারো নারীদের শূণ্য। একজন চ্রা ছাড়া কোন বিচার-শালিস হয় না। কারণ নির্বাহী ক্ষমতার পুরোটাই থাকে রাজপুত্রদের হাতে। এটা তাঁদের জম্মগত অধিকার, সে বুদ্ধিমান হোক আর গবেট মূর্খ হোক। যত আইন দেখাই গারো সমাজের বাস্তবতা এটাই। এটাই প্রথাগত আইন। তাই অনেক চ্রা তাঁদের ক্ষমতার অপব্যবহার অহরহ করে কখনও কখনও পরিবারে অশান্তির কারণও হন।

ছয়

স্পষ্টতই গারো সমাজ মাতৃতন্ত্র(Matriarchal) নয়, এটি মাতৃসূত্রীয়(Matrilineal)। আমি দৃঢ় কণ্ঠে আবারও বলি, গারো সমাজ 'মাতৃতান্ত্রিক সমাজ' নয়। মা পরিবারের প্রধান নন, বাবাই পরিবার প্রধান। বিষয় টি আমি "গারো সমাজের আসল সৌন্দর্যঃ তাঁদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য" নামের এক লেখায় পরিষ্কার করেছি।
গারো সমাজে মাতৃতন্ত্রই নেই, এবং যা নেই আমরা না বুঝেই তা 'সংস্কারের' কথা বলি, পরিবর্তনের কথা বলি। আমি সংস্কারের পক্ষে, কিন্তু সংস্কারের কথা বলার আগে কী সংস্কার করব তা বুঝাটা জরুরী।

এই ধরুন - আমরা নারীদের ক্ষমতা হ্রাস করে বিল এনে সমাজ সংস্কার করতে চাই। কিন্তু নারীদের কোন 'নির্বাহী ক্ষমতা'ই নেই। তাহলে এখানে কী সংস্কার করব?

আবার ধরা যাক - জমির সমান ভাগ করতে চাই। কিন্তু গারো সমাজে জমি কীভাবে বন্টন হয়, কেন হয় তা-ই যদি না জানি, কীভাবে সমান ভাগ করার সংস্কার চাইতে পারি?

গারো সমাজে আইন ধরে ধরে চর্চা হয় না। সবকিছুই চারিপাশের সকল মানুষের সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন, তার উপরই বেশীর ভাগ নির্ভর করে।

উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, কোন পরিবারের সবার সাথে ভাল সম্পর্ক থাকলে স্ত্রী মারা যাবার পরও নতুন স্ত্রী হওয়ার জন্য কেউ একজন এক পায়ে রেডি থাকেন। সবাই তাঁর জন্য একটা নতুন বউ খুঁজে দেওয়ার ব্যস্ত হয়ে পড়েন - ছেলের বয়স যতই হোক। এর বিপরীত হলে?

সকল চ্রা, তাঁর বোনেরা সবাই মিলে বউ হারা ছেলেকে তাড়ানোর জন্য উঠে পড়ে লাগেন। কখনও কখনও অন্যায় ভাবেও। মাতৃতন্ত্রে মা'য়ের ক্ষমতা থাকে সীমাহীন। গারো সমাজে কোন নারীর এক বিন্দু 'নির্বাহী ক্ষমতা' নেই! এখানে রাজপুত্র - রাজ কন্যারা মায়ের পদবী বা টাইটেল গ্রহণ করে থাকেন। নারীদের পরিবারে সর্বোচ্চ সম্মানের আসনে বসিয়ে দিয়ে, ক্ষমতাহীন করে ভুলিয়ে রাখা হয়েছে, যেমন করে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে রাখা হয়েছে! অনেক টা নারীদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়ার মত। এখানে ভাল কাজ হলে রাষ্ট্রপতির কোন ক্রেডিট নেই, সকল ক্রেডিট প্রধানমন্ত্রীর! খারাপ হলে সকল দায় রাষ্ট্রপতির।

সত্যি কথা বলতে গেলে খারাপ শোনাবে। তবুও বলি, গারো সমাজ নারীদের সুকৌশলে, গভীর রাজনীতি করে, মাতৃতন্ত্রের লোভ দেখিয়ে ক্ষমতাহীন করে রেখেছে। সমাজের চতুর্দিকে তাকিয়ে দেখবেন, তাঁরা কোথাও কোন পদে নাই, পদবীতে নাই, বিচারাসনে নাই, সং নকমা পদে নাই, ওয়ানগালার নকমাতে নাই, নেতৃত্বে নাই, খেলাধুলায় নাই, আন্দোলনে কোন উল্লেখযোগ্য পদে নাই, কোন সংগঠনে, সভা - সমিতিতে উপর সারির পদে নাই, বেচা - কেনাতে নাই, সরকারী - বেসরকারি কোন বিশেষ বড় চেয়ারে নাই, মিশনারি হলেও বিশেষ কোন দায়িত্বে নাই। কেবল জমিটা নাম মাত্র তাঁদের সামনে ঝুলিয়ে রাখা, ছেলে-মেয়েদের পদবীটা নামের পাশে রাখা। বিষয়গুলো কেউ ভাবেন না, ভাবেন কি?

ইদানীং একটু পরিবর্তন আসছে। তবে তা খুব ধীর... 

গারোসমাজ আসলে কী দিয়েছে, দিচ্ছে তাঁর মা - বোনদের?

কী দায়িত্ব আমরা দিচ্ছি তাঁদের?

শুধু ঘর - কন্যার কাজ করা? পড়াশুনা শেষে ভাল ছেলের সাথে ঘর করবে, সে নিশ্চয়তাই তো দিতে পারে নাই, পেরেছে কী?

উচ্চ শিক্ষিত ছেলেদের চোখ কম পড়াশুনা, কম স্মার্ট, কম কথা বলা, বুদ্ধি -শুদ্ধি কম মেয়ের দিকে!

বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা বেশ কিছু ছেলেরা তাঁদের সঙ্গীদের নাচতে দিবেন না, গাইতে দিবেন না, বন্ধুদের সাথে কথা বলতে দিবেন না - ঠিক যেন ছাত্র শিবির!

গারো সমাজে নারীদের সম্পত্তির যে অধিকার সেটি কাগুজে! নাম মাত্র তারা মালিক, কেন তা আমি আগেই বলেছি। কারণ জমি সম্পর্কে গারো মেয়ে কিংবা নারীদের কোন ধারণা আছে আমি আমার পুরো জীবনে দেখি নি। আমার মনে হয় না এঁদের ৯৯ শতাংশ কেউ জীবনে দলিল কেমন তা দেখেছে। কিংবা দেখতে চেয়েছেন। তার কারণ হতে পারে পুরুষদের উপর তাঁদের পূর্ণ আস্থা, অসচেতনতা, নতুবা অজ্ঞতা। উদাসীনতাও হতে পারে!

গারো সমাজে নারীদের যে অধিকার তা শুধু মাত্রই কাগুজে! বাস্তবে তাঁরা অন্যসব সমাজের সাধারণ নারীদের মতই! কিন্তু এই কাগুজে অধিকার তাঁদেরকে অবশ্যই কিছু টা বাড়তি সুবিধা দেয়, সম্মান দেয়, যা অন্য কোন সমাজের নারীদের থেকে এগিয়ে রেখেছে বৈকি! এখন আমাদের কেউ কেউ নারীদের কাগুজে অধিকারটাও কেড়ে নিতে চাইছেন। সব বেচা - বিক্রি করেও আমাদের পোষাচ্ছে না। এবার পায়ের নীচে রাখা চাই, দাসী করে রাখা চাই, বুড়ো বাবা - মা'কে পথে বসানো চাই, তাঁদের ভিক্ষুক বানানো চাই। এতে আমাদের সম্মান বাড়ে। এঁদের সব্বাইকে 'শাটাপ' বলে মুখ বন্ধ করে দেয়া চাই।

আসলে আমরা কী চাইছি? জামাই যাইতে চাচ্ছি না? আপনাদের কে জামাই যেতে বলছে? বউ নিতে পারবে না, এমন আইন কী আছে গারোদের? কোথায় লেখা আছে? হাজার হাজার বছর আগে থেকেই গারো ছেলে জামাই যেমন যায়, নিজের বাড়িতে (বাপের বাড়িতে) বউ ও নিয়ে আসে! আপনার মুরোদ থাকে বউ আনুন, কাড়ি কাড়ি টাকা বানান, অট্টালিকা বানান, বানিজ্য করুন। আপনার উপার্জনের ১০০% আপনার ছেলেদের দিন। এতে কেউ অখুশি হবে না।  

'পুরুষরা কোনমতেই সম্পত্তির মালিক হতে পারবেন না' - কোন আইনে লেখা আছে?

লেখা আছে, 'মাহারী সম্পত্তি'র উত্তরাধিকার শুধু কন্যা সন্তানেরা হইবেন।"

 আমাদের চোখ "মাহারী সম্পত্তির" দিকে যায় কেন?

"স্বোপার্জিত সম্পত্তিতে" তো ছেলেদের উত্তরাধিকার আছে। সেদিকে চোখ পড়ে না কেন?

আপনি নিজে উপার্জন করে আপনার রাজপুত্রকে সমান ভাগ দিন, ৭৫ ভাগ দিন, ১০০% দিন, সমস্যা কোথায়?


আমাদের একটি গল্প বলি ...

আমার বাবা ঠিক না ফেরার দেশে চলে যাবার ৩-৪ দিন আগে আমাকে ডেকে নিয়ে বলল, "আমার সময় শেষ! তুমি আমার সব থেকে শিক্ষিত ছেলে, শ্রেষ্ঠ ছেলে, তুমি বল কোন জমিটা তুমি চাও? তুমি নিজে বেছে নাও বাবা।"

আমি বললাম, তোমরা আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে মাস্টার্স করিয়েছ, আমার পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেছে! ধন্যবাদ। জমিগুলো আমার ছোট ভাই - বোনদের পড়াশুনার জন্য লাগবে। তোমার ছেলে, ছেলের বউ দুজনেই উচ্চ শিক্ষিত। আমাদের জমি দরকার নেই, বাবা। তুমি শুধু আশীর্বাদ কর আমাদের।

বাবা, কেঁদে নিয়ে বলল, "আমি খুব কষ্ট পাব, তুমি যদি কম করে না হলেও ৬০ শতাংশ জমি না নেও। এই জমিই আমার আর তোমার মায়ের আশীর্বাদ। তুমি না করো না। মানুষের তো বাড়ি ভিটাও দরকার, তুমি সেটা রাখবে না?

আমি মায়ের সামনে বললাম, "জমি আমি নিলাম, ৬০ শতাংশ না, মনে করো সব; এবং জমিটা নিয়ে আমি আমার মা'কে দিয়ে গেলাম, আমার ভাইবোনদের দিয়ে গেলাম। আর আরেক টা কথা, 'তুমি আমার শ্রেষ্ঠ ছেলে, এই কথা আর বলবে না, অন্যরা শুনলে খুব কষ্ট পাবে। আমি তোমার সব থেকে খরুচে ছেলে। আমি বেশি পড়েছি, বেশি কষ্ট দিয়েছি, ভাই -বোনদের সবার চেয়ে বেশি নিয়েছি ফেলেছি, আমি আর নিতে চাই না।'

বাবা চোখ মুছে বলল, আমি আজ খুব খুশি। সত্যি খুশি। তুমি সত্যি মানুষ হয়েছ বাবা। তুমি মানুষ হয়েছ, তুমি অনেক বড় হও বাবা, আশীর্বাদ করি।

আমার মা নীরবে চোখ মুছল..

আমার মা আজও বেঁচে আছে। বাবা চলে যাওয়ার পর আমার মা বাবার শ্রাদ্ধের আগের দিন বলল, সবাই জমি চাইছে, তোমার দাদারা। তুমি চাইছ না কেন? বাড়ি ভিটা করার জন্য তুমিও কিছু চাও তোমার বোনদের সামনে, ভাইদের সামনে। আমি দিব, তোমাকে বেশিই দিব।

আমি মা'কে বলেছি, আমার সম্পত্তির দরকার নেই। ওটা বাবার কাছ থেকে নিয়ে তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। দেয়া জিনিষ ফেরত নিতে হয় না, তোমরাই শিখিয়েছ; কিন্তু আমি এই পরিবার থেকে যা পেয়েছি, এটাই আমার সারা জীবনের সম্পদ। তুমি যারা চাইছে তাঁদের দিয়ে দাও।

মা বললেন, তুমি এত বোকা! মানুষের বাড়িভিটাও তো দরকার, মারা গেলে কবরের জন্যও তো জায়গা দরকার! আমি জানি মা, আমি পৃথিবীর সব চেয়ে বড় বোকা সন্তানদের একজন। পৃথিবীর সব চেয়ে বড় বোকা ভাইদের একজন। কিন্তু আমি পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষদের একজন।

আমি মাথা উচু করে বাবা - মায়ে'র বাড়ি যাই। আমার ভাই - বোন, মা আমি বাড়ি গেলে সেরা সম্মানটাই দেয়। সবাই পিঁড়িতে বসে, বড় চেয়ারটাই আমাকে এগিয়ে দেয়। এখনও মাছের মুড়ো, মুরগীর রান, কলিজা আমার জন্যই বরাদ্ধ থাকে! আমি কিছু বললে, তারা সবার মতামতকে উপেক্ষা করে হলেও আমার মতের প্রাধান্য দেয়।

আমার জমি জমা লাগে না।

আমার জন্য তো সাড়ে ৩ হাত জমি লাগবে মাত্র! সেটা ঈশ্বর দেখবেন।

আমার শ্বশুর মশাই ট্যাকনিক্যাল স্কুলের রিটায়ার্ড প্রিন্সিপাল। শ্বাশুড়ি মা হাই স্কুলের রিটায়ার্ড টিচার। ২০ বছরের সংসার জীবনে কম হলেও ৫০ বার ডেকে নিয়ে তাঁদের জমির দলিল দস্তাবেজ দেখিয়েছেন। ৫০% জমি নিয়ে নিতে বলেছেন। কোন কোন জমিটা চাই জিজ্ঞেস করেছেন।

বলেছেন, আমাদের মাত্র ২ মেয়ে। আমরা মারা যাওয়ার পর যেন এ নিয়ে মনোমালিন্য না হয়! আমরা সেটা নিশ্চিত করতে চাই। আমি সব সময়ই বলেছি, সেটা কোনদিন হবে না। আপনারা যতদিন বেঁচে আছেন, জমি আপনাদের। আমাদের এখন জমি লাগছে না, যখন লাগবে চেয়ে নিব! আপনার ছোট মেয়ে, ছোট জামাই আমাদের জমির ভাগ না দিলেও জমি নিয়ে অন্তত আমাদের রিলেশান খারাপ হবে না। কারণ বিয়ের আগে আপনাদের এত জমি আছে, আমার জানাই ছিল না!

শ্বশুর মশাই হাসতে হাসতে বলেন, ইয়াদে বাদাগা কথাহায়া! (এইটা আবার কেমন কথা!) আমার শ্বশুর বাড়িতে পৃথিবী উল্টে গেলেও আমার মতের বাইরে কোন কাজ হয় নি, মনে হয় না হবে আগামীতেও। কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমার মতামত সবসময়ই চাওয়া হয়। যদিও আমি কখনই কোন পরিবারে নাগ গলাতে যাই না।

আমি তো জমি চাই না, কিন্তু জমি তো আমার পিছু ছাড়ছেই না। সবাই জমি গছায়া দিতে চান। মা, বাবা, শ্বশুর থেকে শুরু করে শ্বাশুড়ি! কদিন পরে শ্যালিকা, ভায়রা ভাই এরাও তাই চাইবে, আমি জানি।

আসল কথা হল, আমার রিলেশান আমার বাড়ির মানুষদের সাথে কেমন, তার উপর সবকিছুই নির্ভর করে। তাঁরা সবাই জানে, ওগুলো কারো প্রয়োজনে তাঁদের কাজেও লাগবে।

সাত

আমরা সংস্কার চাইছি, কিসের? আইনের? সেটা চাইতেই পারি। সব আইন শতভাগ কাজের তা হয় না। যা কল্যাণকর নয় তা সংশোধন যোগ্য। কিন্তু সেটা ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া চাই।

জমির ৪০%-৬৭% যে নকনা মেয়েকে দেয়া হয়, তা কেন দেওয়া হয় আমি আমার সারা জীবনে কোথাও আলোচনা করতে, লিখতে দেখি নি! সমাজ সংস্কার, আইন সংস্কারের সভা - সেমিনার, মোটা মোটা প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে দেখেছি গারো বুদ্ধিজীবিদের। কিন্তু সেখানে সমাজের ভেতরের কোন বিষয় উঠে আসে নি! এসেছে বিভিন্ন বইয়ের রেফারেন্স, বুদ্ধিদীপ্ত যুক্তি, আইনের অনেক ধারা। কিন্তু দাকবেওয়াল উপেক্ষিত থেকেছে। যা এসেছে সেগুলো সব কাগুজে কথা - বার্তা। 


সমাজ আপন গতিতে এগিয়ে চলে। রীতিনীতির সংস্কার হয় বিরামহীন। এই যে মধুপুরের বাবা-মায়েরা তাঁর সন্তানদের সম্পত্তির ভাগ দিয়ে আসছে, সেটা কি প্রথাগত আইন নয়? আবিমার জন্য অইটাই এখন আইন, অলিখিত আইন। আমার ভাইদের আমার বাবা জমি দিয়েছে, কই আমার কোন বোন, আত্মীয় - স্বজন তো কোন প্রশ্ন তুলে নি! 

আমি মধুপুর কলেজে যখন অধ্যাপনা করতাম, তখন মাঝে মাঝে গ্রাম্য শালিসে গিয়ে চুপ করে বসে থাকতাম, শুনতাম বড়দের গল্প। এমন এক শালিসের শেষে এক আচ্চুকে জিজ্ঞেস করলাম, নকনাকে বেশি সম্পত্তি দেয়া অন্যায় কি না? এই যে ৩৩%, ৪০%, ৬৭% জমি, সম্পত্তি তাঁদের দেওয়া হচ্ছে...

তাঁর উত্তর ছিল এমন, "আপাতঃ দৃষ্টিতে অন্যায় কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সেটা ন্যায়, যৌক্তিক! কেমন?

আচ্চু বললেন, "এই প্রশ্নগুলো যারা করে, তাঁদের জানতে হবে গারো সমাজে জমি-জমা কীভাবে বন্টন হয়। যারা জানে না তারাই চিৎকার চেঁচামেচি করে!"

কিভাবে জমি-জমা বন্টন হয়, আচ্চু?

- ধরো, আমার ৩ মেয়ে আছে! ছেলেও আছে। আমি মারা যাওয়ার পর আমার স্ত্রী এবং চ্রা (আমি জীবিত থাকা কালেও হতে পারে), আমাদের জমিটা ৫ ভাগে ভাগ করবেন। ১০০/৫ = ২০% ভাগে পাবে সবাই। সবাই পেল ২০% জমির সম্পত্তি। আমার স্ত্রীও পেল ২০%। কিন্তু সে আর আমি যেহেতু ছোট মেয়ের (নকনা) কাছে থাকব, সেই ২০% আমি এবং আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নকনা পাবেন। নকনার ভাগ ২০% + মা'য়ের ভাগ ২০% = ৪০% ! নকনা যদি আমাদের দেখাশুনা না করেন, তাহলে বাকী দুই মেয়ের যে কোন একজন নকনা হতে পারে! তবে হ্যাঁ, মেয়ে যদি মাত্র ২ জন থাকে, তবে নকনা ঐ একই হিসেবে ৬৭% পাবে। ১০০/৩ = ৩৩.৫%! নকনা ৩৩.৫%+ মা ৩৩.৫% = ৬৭%! 

- ৫ ভাগ করছেন কেন? ৩ মেয়ে + মা + বাবা?
- নাহ! ৩ মেয়ে + মা + ছেলে 
- তাইলে আপনার ভাগ কই?
- বউয়ের টাই আমার ... হাহাহা , (১০%+১০ = ২০%)
- কিন্তু গারো সমাজে ছেলেরা তো সম্পত্তির মালিক হইতে পারবে না গারো আইন অনুযায়ী!
- কোন শালায় কইসে? তাইলে আমি পাইলাম ক্যামনে? 
- কি জানি, আচ্চু ... 
- আইনে আছে, "মাহারী সম্পত্তি" শুধু মেয়েরা পাবে। কিন্তু বাংলাদেশে "মাহারী সম্পত্তি নাই"। আমি আর আমার বউ যে সম্পত্তি করেছি সে "আ'জিক'সে সম্পত্তি" (স্বোপার্জিত সম্পত্তি)! এই সম্পত্তির ভাগ ছেলেরাও পাবে!

- তাই নাকি! তারপর?  

এ- এই নকনা মেয়ের বাড়িতে বুড়ো বাবা - মা থাকেন। এঁদের অনেকেই দায়িত্ব ছাড়ার পরেও ২০-৪০ বছর বেঁচে থাকেন। এঁদের অন্ন - বস্ত্র - বাসস্থান, চিকিৎসা সব কিছুর ভার নকনা মেয়ে এবং নক্রম বহন করে। বুড়া - বুড়িরা ছোট ছেলেদের মেয়েদের মত হয়ে যায়। তাঁদের চাহিদা মেটানো, তাঁদের অনেক আবদার, তাঁদের ব্যবহার - দুর্ব্যবহার সহ্য করেন তাঁরা। বুড়ো বাবা - মাকে ভাল রাখার জন্যই এই বিধি - ব্যবস্থা। এটা না হলে গারো সমাজে বুড়ো- বুড়ি ভিক্ষুকের সংখ্যা হত সীমাহীন! তাঁরাও বাঙালিদের মত ন্যাড়া-ল্যাংটা হয়ে ভিক্ষা করত, শিক্ষিত মানুষরা বৃদ্ধাশ্রমে থাকত। আমাদের গারো সমাজে 'বৃদ্ধাশ্রম' আছে? আছে? 

এটা কী তোমাদের ভাল লাগত?

আমি শুধু বললাম, অহ ...

আরো কিছু বিষয় আছে, আচ্চু বললেন...

কী সেটা?

- গারোদের দাকবেওয়াল সাংঘাতিক!

- সেটা কেমন?

- সবাই সবার বিয়ে, শ্রাদ্ধ, সামাজিক অনুষ্ঠানে কিছু না কিছু নিয়ে-দিয়ে সাহায্য করে থাকেন। সারা জীবন আমার জন্য বন্ধু - বান্ধব, আত্মীয় - স্বজন যা আনবে, সাহায্য করবে, সেটার হিসেব থাকে। সেগুলো শোধ করতে হয়। কেউ একটা খাসী দিলে, ওয়াক দিলে সেটা কোন না কোন অনুষ্ঠানে পাল্টা দিয়ে শোধ করতে হয়। আমি যদি সারাজীবনে তা শোধ করতে না পারি, আমার নকনা মেয়ে এবং তার জামাইকে আমার মৃত্যুর পরেও তা শোধ করতে হয়। এই যে বিশাল দায়িত্ব, বিশাল খরচ সেটা কি সব ছেলে - মেয়ে দিবে? দিবে না। তাই যে এই দায়িত্ব নেয়, তাকে বেশি দিতে হয়। শুধু তাই না, অন্য ছেলেদের বিপদে আপদে বাবা-মায়ের মত সকল ছেলে - মেয়ের প্রতি তাদেরকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাঁদের ছেলে-মেয়ে (নাতি-পুতি) তাঁদের ভাল - মন্দ দেখাশুনা করতে হয়। সেগুলো আইনে নেই। কিন্তু সেগুলো দাকবেওয়াল হয়ে গেছে...

- অহ ... আসলে আমি এগুলো জানতাম না আচ্চু। ধন্যবাদ। আরেকদিন এসে গল্প শুনব।

বুড়া আচ্চু এবার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তো কলেজের প্রবেসার (প্রফেসার, গ্রামে কলেজে অধ্যাপনা করলেই সবাই প্রফেসার হয়ে যান, আমি যতই বলি আমি প্রভাষক, সবাই বলবেন, ঐ হইল একটা!), তুমিই কও, "এখানে অন্যায় কোথায় হয়? আইন গুষ্টি কিলাও, কিন্তু মানুষ হিসেবে জমির ভাগ করতে চাইলে তুমি কেমনে করতা?"

আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম। এতটাই মন্ত্রমুগ্ধ হলাম, আমি হতবাক, বাক্রুদ্ধ ! এত এত সুন্দর আমাদের দাকবেয়াল! আমাদের পড়াশুনা না জানা বাপ-দাদারা, আচ্চু - আম্বিরা হাজার বছর পূর্বেও কত উচু মাপের জীবন দর্শন নিয়ে চলতেন, কত মানবিক ছিলেন তাঁরা, আমি ভাবতে থাকি!    

আচ্চুর দ্বিতীয় বার একই প্রশ্নে সম্বিৎ ফিরে পেলাম আর ভেতর টা হু হু করে উঠল ... 

এখন রাজপুত্রদের যদি বলা হয়, "জমির ভাগ ৫০% কিংবা 'নির্বাহী ক্ষমতা দু'টোর একটি বেছে নাও!"

বলুন তো তাঁরা কোন টা বেছে নিবেন?

আমার তো মনে হয় ১০০% জমির ভাগ দিয়ে দিলেও রাজপুত্রেরা 'ম্যাজিস্ট্রেসী পাওয়ার' বা ' নির্বাহী ক্ষমতা' ছাড়তে চাইবেন না, চাইবেন কি?


লেখকের আরও লেখাঃ  

"গারোদের সমাজ ব্যবস্থা কি মাতৃ - তান্ত্রিক না মাতৃ - সূত্রীয়?" লেখাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন!

 

"গারো সমাজের আসল সৌন্দর্যঃ তাঁদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য" লেখাটি পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'মধুপুর সরকারী কলেজঃ অবসরকালে যেমন কেউ বিদায় দেন না,তেমনি কেউ বিদায় পান না' - এমনই হৃদয় বিদারক স্ট্যাটাস অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক ও সিনিয়র সাংবাদিক জয়নাল আবেদীনের, নেট দুনিয়ায় তোলপাড়

জেফিরাজ দোলন কুবি, ময়মনসিংহ থেকে 'মধুপুর সরকারী কলেজঃ অবসরকালে যেমন কেউ বিদায় দেন না, তেমনি কেউ বিদায় পান না' - এমনই হৃদয় বিদারক ফেইসবুক স্ট্যাটাস ঝড় তুলেছে নেট দুনিয়ায়! মধুপুর সরকারী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন-এর স্ট্যাটাসে ঐ কলেজের কিছু বর্তমান, প্রাক্তন কলেজ শিক্ষক এবং ছাত্র - ছাত্রীরা কমেন্ট করেছেন। কেউ কেউ দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সেখানে কিছু অভিভাবকগণও তাঁদের অভিমত প্রকাশ করেছেন। সব মিলিয়ে ঠিক মোক্ষম সময়ে স্ট্যাটাসটি সবার মনে এবং হৃদয়ে দাগ কাটতে পেরেছে মনে করছেন সবাই। অনেকে একে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন। যিনি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তিনি ঐ কলেজের সহকারী অধ্যাপক (অবসর প্রাপ্ত), ইতিহাস বিভাগ। তিনি ৪০ বছরেরও অধিক সময় ধরে কাজ করছেন দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র করেস্পন্ডেন্ট হিসেবে। লেখাটি গুরুত্ব পেয়েছে এই কারণেও। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, " টাঙ্গাইলের মধুপুর সরকারি কলেজ (বর্তমানে) এমন একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানকার শিক্ষক এবং স্টাফরা অবসরে গেলে কেউ কাউকে কখনো বিদায় সংবর্ধনা দেন না এবং প্রতিদানে কেউ সংবর্ধনা পান না! এজন্য অধ্যক্ষদের ভাগ্য...

নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিলেন সিমব্রি অর্ণি সাংমা

জেফিরাজ দোলন কুবি ময়মনসিংহ থেকে,  বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিয়েছেন সিবব্রি অর্ণি সাংমা। তিনি ৫ জানুয়ারী, ২০২২ ঢাকার নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে যোগদান নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে সাংমা গত ৮ জানুয়ারী পতেঙ্গা নাভাল একাডেমীতে ৩ বছর মেয়াদী দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণে যোগ দেন। অর্ণি গারো আদিবাসীদের মধ্যে সর্বপ্রথম নৌবাহিনীর কমিশন্ড র‍্যাংক-এ সুযোগ পেলেন।      বাবা-মা ও বোনদের সাথে  অর্ণি  নৌবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী নৌবাহিনীর নেভাল একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ১৮ মাস ও মিভশিপম্যান হিসেবে ১৮ মাস আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সাব-লেফটেন্যান্ট পদে নিয়মিত কমিশন প্রদান করা হয়ে থাকে।     গারোদে র পোশাক পরতে ভালোবাসেন  অর্ণি সাইমন স্বর্ণেন্দু সাংমা ও সুচরিতা রেমার জেষ্ঠ সন্তান সিমব্রি অর্ণি সাংমা ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী। অর্ণি ময়মনসিংহের ভিক্টোরিয়া মিশন প্রাইমারী স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে কৃতিত্বের সাথে মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি ও মুমিনুননেসা সরকারী মহিলা কলেজে হতে এইচএসসি...

আমার দেখা একজন সাদা মানুষ

  In Memory of Hon'ble State Minister for Social Welfare Affairs, late Pa Advt Promod Mankin MP. Rest in peace Sir... প্রাক কথন কলেজ জীবন শুরু করার আগে আমার শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনে দেখা একজন অসাধারণ মানুষকে নিয়ে কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম! সে লেখা আজও শেষ করতে পারি নি। ইচ্ছে করত একটা সাদামাঠা সে কবিতা হবে, হয় নি। আজ আবার সেই মানুষটাকেই নিয়ে লিখছি। একদম সাদা - রঙহীন, গন্ধহীন, রসহীন হবে সে লেখা। লেখায় রঙ চং রাখতে চাই না। আমার কাছে থেকে, দূরে থেকে দেখা না দেখা কিছু কথা। একান্ত ব্যক্তিগত কিছু নিরীক্ষণ থেকে। এক তখন দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি। জীবনে প্রথম তাঁকে দেখেছি! বাবা বললেন, "তোমার ফাজং (জ্যাঠা), সালাম করো।" যে লোকটাকে কখনো দেখিই নি, তাঁকে ঝুপ করে সালাম করাটা কিছুটা কষ্টেরই ছিল বটে আমার জন্য। তাই আমি "নমস্কার আংকেল, কেমন আছেন?" বলে কেটে পড়তে চাইলাম। "ভাল, তুমি কেমন আছ? তুমি তো খুব সুন্দর করে নমস্কার দিতে পারো বাবা। কি নাম তোমার?" আরও কিছু কথা চলল। তারপর তিনি বললেন, "তুমি তো খুব সুন্দর করে বাংলা বল! তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। দেখো, আমা...

সর্বাধিক পাঠ করা লেখা

নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিলেন সিমব্রি অর্ণি সাংমা

জেফিরাজ দোলন কুবি ময়মনসিংহ থেকে,  বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিয়েছেন সিবব্রি অর্ণি সাংমা। তিনি ৫ জানুয়ারী, ২০২২ ঢাকার নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে যোগদান নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে সাংমা গত ৮ জানুয়ারী পতেঙ্গা নাভাল একাডেমীতে ৩ বছর মেয়াদী দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণে যোগ দেন। অর্ণি গারো আদিবাসীদের মধ্যে সর্বপ্রথম নৌবাহিনীর কমিশন্ড র‍্যাংক-এ সুযোগ পেলেন।      বাবা-মা ও বোনদের সাথে  অর্ণি  নৌবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী নৌবাহিনীর নেভাল একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ১৮ মাস ও মিভশিপম্যান হিসেবে ১৮ মাস আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সাব-লেফটেন্যান্ট পদে নিয়মিত কমিশন প্রদান করা হয়ে থাকে।     গারোদে র পোশাক পরতে ভালোবাসেন  অর্ণি সাইমন স্বর্ণেন্দু সাংমা ও সুচরিতা রেমার জেষ্ঠ সন্তান সিমব্রি অর্ণি সাংমা ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী। অর্ণি ময়মনসিংহের ভিক্টোরিয়া মিশন প্রাইমারী স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে কৃতিত্বের সাথে মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি ও মুমিনুননেসা সরকারী মহিলা কলেজে হতে এইচএসসি...

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নিলেন ১১ মেধাবী গারো শিক্ষার্থী

ফৈবি কুবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জায়গা করে নিয়েছেন ১১ জন গারো কৃতি শিক্ষার্থী। তাঁরা ২০২০-২০২১ সেশনে ভর্তি হবেন। ডেলা চিরান দৃষ্টি মানখিন যারা বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করলেন তারা হলেন : দৃষ্টি মানখিন (নৃবিজ্ঞান), জেসিকা নকরেক স্বস্তি(আইন), পাপিয়া চিছাম(আইন), ডেলা চিরান (ফিন্যান্স), রিংচি মৃঃ (একাউন্টিং), স্পন্দন রেমা( কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), ইফ্রোইম রেমা (কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), নিঃস্ব রংদী( অর্থনীতি), রুদ্র ম্রং( সমাজবিজ্ঞান), ইসুদুর পল রংদী(পপুলেসন সাইন্স) এবং সাগাল সিমসাং(দর্শন)। পুনশ্চঃ সবার ছবি পাওয়া যায় নি। পাওয়া মাত্র আমরা সবার ছবি দিয়ে দিব ... সংবাদ টি শেয়ার করে বন্ধু - স্বজনদের জানিয়ে দিন

ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাটে ২ গারো আদিবাসী ছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকারঃ ধর্ষকেরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে

ময়মনসিংহ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক,  গত ৩০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটের গাজিরভিটা ইউনিয়নে দুইজন গারো আদিবাসী ছাত্রী গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছে।  ধর্ষিতা ছাত্রীদের বয়স ১৩-১৪ হবে।  জানা গেছে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে রাতের বেলা বাড়ি ফেরার পথে ঐ দুই জন স্কুল ছাত্রী ছয় বখাটে যুবকদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়।  ধর্ষকদের একজনের নাম মোঃ রিয়াদ বলে জানা গেছে। রিয়াদ কচুয়াকুড়া গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল মান্নানের পুত্র এবং বাকী ৫ জন ধর্ষক রিয়াদের বন্ধু বলে জানা গেছে।  এদের বয়স ২০-২৫ এর মধ্যে হবে বলে জানা গেছে।  হালুয়াঘাট থানার ওসি জানিয়েছেন, তাঁরা আসামীদের খুব শীঘ্রই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনবেন।  তবে এলাকাবাসী বলছেন, বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সামাজিক এবং ছাত্র সংগঠনগুলো এখনও অনেক টা নীরব। এই সংগঠনগুলো প্রতিবাদ করলেই কেবল ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন।  বাগাছাস-গাসু-টিডব্লিওএ এর নেতাদের নীরবতায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন এলাকাবাসী। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সেরেজিং সাংমা(ছদ্মনাম) তাঁর ক্ষোভ এবং হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, "বাগাছাস...