এক
"শুধু দুই বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই!"
জনৈক মেধাবী ছাত্রের এমন পোস্টার ফেইসবুকে দেখে আমি অবাক হই নাই! কারণ এমন পোস্টার আমি প্রায় ৩০ বছর আগে সাটিয়েছিলাম বড় মগ বাজারের আসে পাশে। তবে কথা গুলো ছিল একটু ভিন্ন! আমি লিখেছিলাম ...
"ফ্রি পড়াতে চাই! "
এতে সাড়াও পড়েছিল। কেন ফ্রি পড়াতে চেয়েছিলাম? উদ্দেশ্য ছিল একটি। সেটি হল ফ্রি পড়িয়ে প্র্যাকটিস করে নেয়া । সেমিনারী (খ্রিস্টানদের যাজক হতে যেখানে পড়াশুনা করতে হয়) থেকে বেরিয়ে এসেছি বলে বাড়িতে জায়গা হয় নাই! আমার একটা বিশ্বাস ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নিতে পারলে বাবার মন গলতে পারে, বাড়ি যাবার অনুমতি মিলতে পারে ভেবেই ভর্তি পরীক্ষার জন্য ভাল প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমি ধরেই নিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে বাড়িতে আর জায়গা হবে না! কিংবা ভর্তি হতে পারলেও টাকার অভাবে আমার পড়াশুনা হবে না যদি ২-১ টা টিউশনি জোগাড় করতে না পারি!
মডেলঃ হৃদি চিসিম দমিতাই ফ্রি পড়াতে চাইলাম। একটা ফ্রি পড়াতে গিয়ে যদি আরেক টা ১০০০ টাকার টিউশনি জোগাড় করে নিতে পারি! একটা টিউশনি জোগাড় করতে পারলে আসে পাশে আরেকটা পাওয়া যাবেই বলে আমি খুব কনফিডেন্ট ছিলাম!
দুই
আমি তখনও মিথ্যা কথা বলা শিখি নি! তাই ছাত্র-ছাত্রীর বাবা মা যখন ইন্টারভিউ নিতেন তখন সত্যি কথা বলে দিতাম। আমার টিউশনি না হবার কারণ ছিল ----
১) আমি বাবা-মা'য়ের অবাধ্য ছেলে, তাই আমার কাছে ছাত্রছাত্রী পড়াবেন না
২) আমি মাদ্রাসা ফেরত ছাত্র (সেমিনারি কী জিনিস বুঝাতে না পারলে আমি সহজ করে বলতাম খ্রিস্টানদের মাদ্রাসা!) নিশ্চয়ই ভাল কাজ করে বাইরে আসে নাই
৩) তুমি পার্টটাইম কর যেখানে, সেখানকার টেলিফোন ব্যবহার করেছ, কিন্তু অফিসকে না জানিয়েই! আল্লাহ!
তিন
আমি বাংলা - জার্মান সম্প্রীতি তে পার্টটাইম করতাম। সপ্তাহে ৩-৪ দিন গেইট পাহারা দিতাম এবং পাশাপাশি রিশিপসনিস্ট গিরি করতে হয়। কাজেই আমার অফিসের টেলিফোন ব্যবহার করে টিউশনির বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম! কিন্তু অফিসের কাউকে না জানিয়েই! সকাল ৮-২ টা পর্যন্ত যখন ডিউটি করতাম তখন ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতাম , স্যার আমাকে আপনার ছেলে-মেয়ে পড়াতে নিলেন না কেন, জানতে পারি প্লিজ?
তখন ছাত্র - ছাত্রীর বাবা - মা উপরের ঐ কথাগুলো বলতেন। তখন মনে হত, " দুর্জন বিদ্যান হলেও পরিত্যাজ্য" ভাব সম্প্রসারণ যে পড়তাম সেটা ঠিক! বাবা মায়ের কথা না শুনে সেমিনারি থেকে চলে এসেছি বলে আমি 'দুর্জন' এর কাতারে পরে গেলাম! আরেক টা হল 'মাদ্রাসা' থেকে বের ক্রে দিয়েছে মানে 'কিছু একটা' তো করেছি!
চার
কথা গুলো এজন্য বলে নিলাম, আমি যা বলতে চাইছি, তা বুঝাতে একটু সহজ হবে। ১৯৯৩-৯৪ সালে কোন সোশাল মিডিয়া ছিল না, আমি যা বলেছি ইন্টারভিউ'র সময় তা দিয়েই আমার চরিত্র, আমি কেমন তা যাচাই করেছিলেন তখনকার অভিভাবকগ্ণ! তাঁরা আমাকে তাঁদের ছেলে-মেয়ে পড়ানোর চাকুরী দেন নি!
আমার চরিত্রের যে দোষ তাঁরা পেয়েছিলেন ---
১) তুমি অবাধ্য ছেলে! তোমার কাছে পড়তে দিলে আমাদের ছেলেমেয়েরাও এটাই শিখবে!
২) মাদ্রাসা ছেড়ে এসেছ! তুমি তো তাহলে ভাল ছেলে না!
৩) না বলেই তুমি অফিসের টেলিফোন ইউজ কর, না জানি আরও কি কি কর! ইত্যাদি
ভাল মত খেয়াল করুন কথাগুলো। খুব সিম্পল কিন্তু সাঙ্ঘাতিক!
পাঁচ
যা পাওয়া গেল তা হল 'ফ্রি' হলেও চরিত্রহীন মাষ্টার রাখব না! টাকা বেশী লাগলেও চরিত্রবান মাষ্টার চাই! এই তো মূল কথা, তাই না?
আমি অনেক ভেবে দেখলাম --- অভিভাবকদের কথা ঠিক! আমি বাবা-মা'য়ের অবাধ্য ছেলে তখন, মিথ্যে কথা তো বলেন নাই! আমি 'মাদ্রাসা' ফেরত, সেটা সত্যি! আমি না বলেই 'চুরি' করে অফিসের টেলিফোন ব্যবহার করেছিলাম, খুবই সত্যি কথা!
ভেবে ঠিক করলাম এবার প্রায়শ্চিত্ত করব! প্রথমে বাপ-মা'য়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখে পাঠালাম। অফিসে জানাইলাম না জানিয়েই ফোন টা ব্যবহার ক্রে ফেলেছিলাম, আমি খুব অন্যায় করেছি। এজন্য দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী!
এতে ২ টা লাভ হল। ১) বাবা লিখে পাঠালেন, "ভার্সিটি চান্স পাইলে সব মাফ! না পাইলে বাড়ি আসবানা আর!" যাক অন্তত একটা সুযোগ আছে। ভালমত পড়াশুনা করলে বাড়িতে যেতে পারব। বাড়ি যেতে পারলেই খরচ টাও আনতে পারব!
২) যেহেতু আয় বাড়ানোর জন্য আমি চেষ্টা করছিলাম, তাই অফিস আমার আরও ২ দিন কাজ বাড়িয়ে দিল। ভেবেছিলাম পার্টটাইম টা চলে যাবে। সততা দেখানোয় পুরস্কার মিলেছিল।
এর কয়েকদিন পর ভর্তি রেজাল্ট হল। ইংরেজি বিভাগে জায়গা হল। ভর্তির আগেই একটা ভাল টিউশনিও হল। ঐ ১ টিউশনিতেই অনার্স, মাস্টার্স পার করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কাটিয়ে এসেছি! ভাল পড়ালে কেউ ভাল মাষ্টার ছাড়তে চান না ! আমি এই টিউশনি আরেকজনকে দিয়ে এসেছিলাম ...
ছয়
শিরোনামের ছাত্র টি রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স - এ সারা দেশে প্রথম হয়েছেন বলেছিলেন! কিন্তু দেখা গেল তাঁর কলেজেই সে ২২ তম। সারাদেশে হয় তো ১০০ তে নেই।
ছাত্র জীবনে শুধু খেটেছেন গাধার মত, পড়াশুনা করেছেন খুব, ভাল রেজাল্ট করেছেন সত্যি। বিজ্ঞাপন টা নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে আমি ছেলেটার খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। প্রথমেই তাঁর ফেইসবুক অয়ালে গিয়ে থমকে গেলাম! এত বিচ্ছিরি তাঁর সব পোস্ট! জঘন্য, নোংরা! একজন মেধাবী মানুষের স্ট্যাটাসগুলো এত কুৎসিত! একে কে চাকুরী দিবে?
একটা স্ট্যাটাস পোস্ট দেখিনাই যে টা মানুষের জন্য! সব তাঁর নিজের জন্য এবং একটাই ধারণা পাওয়া যায় ছেলেটির চরিত্র 'বিশেষ কিছু না !'
সাত
স্কুল - কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র - ছাত্রীদের বলি, তোমার ফেইসবুক অয়াল দিয়েই এখন তোমার চরিত্র বিচার করবে । সো, কীপ ইট নীট এন্ড ক্লিন (ফুল স্টপ)।
ছাত্র - ছাত্রী থাকতেই নিজের স্কিল ডেভেলপ করবে। ভাল ছাত্র - ছাত্রী হলেই কোম্পানিগুলো তোমার উপর হামলে পড়বে না। ভদ্র লোকের যদি একটা ভাল স্কিল থাকত, এতদিনে দাঁড়িয়ে যেত।
তাই বলি, এখন ইউটিবে সব কিছুর ভিডিও টিউটোরিয়ালস পাওয়া যায়। তুমি ইচ্ছে করলেই গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং এগুলোর যে কোন একটি স্কিল ডেভেলপ করতে পার।
একা একা শিখতে পারছ না? হেল্প দরকার? সাহায্য চাও? জাস্ট কল নকরেক আইটিঃ +880 1941-274290
Emil : nokrekitofficial@gmail.com
আবারও বলি, পড়াশুনার পাশাপাশি একটা স্কিল ডেভেলপ কর । তা না হলে ঐ আলমগিরের মত দশা তোমার জীবনেও নেমে আসতে পারে। তোমারও এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে দুই বেলা ভাত চাইতে হতে পারে !
তুমি কি এমন পোস্টারের সংখ্যা বাড়াতে চাও? ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে তৈরী করতে চাও? চয়েজ ইজ ইয়রস!
বিজ্ঞাপনঃ
আপনি কি প্রকাশক হতে চান? আমার লেখা থেকে বাছাই করা সেরা গল্প নিয়ে 'জলময়ূরী' ছোট গল্পগুচ্ছের আরেক টি পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত! কেবল একজন প্রকাশকের অপেক্ষায়!
বইটির ৭ ফরমা (১১২) পৃষ্ঠার হবে।
গল্পগুলো ইতোপূর্বে দেশ সেরা পত্রিকা 'প্রথম আলো' এবং কলকাতার সাহিত্য সাময়িকীতে ছাপা হয়েছে!
আগ্রহী যে কেউ যোগাযোগ করতে পারেন এই ইমেইল এড্রেস-এঃ amiogolpoboltechai@gmail.com
------------------------------------------------------
দৃষ্টি আকর্ষণঃ
১। বাবুল ডি' নকরেক - এর ছোট গল্প গুচ্ছের ই-বুক এখন গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে! বইটি ক্রয় করতে এখানে ক্লিক করুন। ২। বাবুল ডি' নকরেক -এর লেখা 'Web Development & Dream Career' অডিও সহ ইবুক পাওয়া এখন গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে! বইটি ক্রয় করতে এখানে ক্লিক করুন । ৩। বাবুল ডি' নকরেক এর "সবার জন্য পাইথন প্রোগ্রামিং" কোর্সে ভর্তি হতে এখানে ক্লিক করুন। ৪। বাবুল ডি' নকরেক এর "জাভা প্রোগ্রামিং ফর নন-প্রোগ্রামার্স" কোর্সে ভর্তি হতে এখানে ক্লিক করুন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for supporting