উন্নয়ন ডি শিরা,
দেশে আদিবাসী আছে কি নেই— এই তর্ক বেশ পুরনো। সারাবছর সুনসান নীরবতা থাকলেও ৯ আগস্ট এলে এই তর্ক বেশ জোরালো হয়ে হঠে। টিভি, পত্র-পত্রিকা সহ বিভিন্ন মাধ্যমে এ নিয়ে বিতর্ক হয়। আর এই তর্ক যেন না উঠে কিংবা উঠলেও জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে যেন প্রচার না পায় সেজন্য সরকার নির্দেশনা পত্র জারি করেছে। যা আদিবাসী অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে পদানত করে রাখার কৌশল মাত্র।
তাছাড়া সংবিধানে বলা আছে কোনো শব্দ বা ধারা নিয়ে বিতর্ক হলে এর সমাধান উচ্চ আদালত করবেন। আদিবাসী শব্দ ব্যবহারে উচ্চ আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তাহলে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কীভাবে আদিবাসী শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়? তাঁদের এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া সংবিধান লঙ্ঘন নয় কী?
একসময় বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হরহামেশাই ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করতো। দলটির ২০০৮ সালের দিন বদলের সনদে অনেকবার আদিবাসী শব্দের ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর পাল্টে যায় সব ভোল। হঠাৎ করেই আদিবাসী শব্দে অনীহা দেখানো শুরু করে।
কেবল আওয়ামী লীগই নয়, বিএনপিও ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারে কোনো অস্বস্থিবোধ করেনি। আসলে যতক্ষণ পর্যন্ত আদিবাসী শব্দ আদিম, পাহাড়ি, গেঁয়ো অর্থে ব্যবহৃত হতো ততোক্ষণ সরকার/বড় দলগুলোর কোনো সমস্যা হয়নি, কিন্তু যখন আদিবাসী শব্দ আন্তর্জাতিক আইনের অধীন প্রতিশ্রুত কিছু অধিকারকে নির্দেশিত করলো ঠিক তখনি শুরু হল বিপত্তি, অস্বীকারের ইতিহাস; দাবিয়ে রাখার তৎপরতা, আদিবাসী বিরোধী প্রচারণা। জেঁকে বসলো ভয়। সতর্কতার সাথেই ক্ষমতাঅলারা আদিবাসী শব্দের ব্যবহার থেকে বিরত থাকলো।
আদিবাসী স্বীকৃতির অর্থ হল অধিকার প্রদান— আর অধিকার বাস্তবায়নে থাকে অর্থনীতি/বাজেটের গভীর সম্পৃক্ততা। যে আর্থিক ব্যয় সরকার আদিবাসীদের পেছনে করতে আগ্রহী নয়। তার আঙ্গিকেই দেশের সংখ্যাগড়িষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়ে না আদিবাসী সংখ্যা।
এবারের (২০২২) জনশুমারি ও গৃহগণনায় গারো জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৭৬, ৮৪৬ জন। এই সংখ্যা একইসাথে যেমন হাসায় তেমনি সংক্ষুব্দও করে তোলে। ঢাকা ও এর আশেপাশের কয়েকটি জেলায় যে পরিমাণ গারো জনগোষ্ঠী জীবন-জীবিকার তাগিদে অবস্থান করেন, সেই সংখ্যা সরকারের দেখানো জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for supporting