লিয়াং রিছিল একজন ছাত্রনেতা এবং যুব সমন্বয়ক হিসাবে কাজ করেন। তিনি বর্তমানে গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশন (জিএসএফ) এর সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। আসছে ৯ সেপ্টেম্বর 'শালবনের চিৎকার ' নামে সাংস্কৃতিক সমাবেশ হবে মধুপুরের আমলিতলা স্কুল মাঠ প্রাঙ্গণে , প্রাসঙ্গিক এই বিষয় এবং ছাত্র সংগঠনের একজন নেতা হিসাবে গারো নিউজ ২৪ 'এর প্রতিবেদক তপন হাগিদক এর সাথে সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের তুলে ধরা হল।
প্রশ্নঃ প্রথমেই জানতে চাইবো আপনি কেমন আছেন? আপনার সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কেও সংক্ষেপে জানতে চাই।
- ধন্যবাদ আপনাকে, আমি বেশ ভালোই আছি এবং কাজের মধ্য দিয়েই থাকতে চেষ্টা করছি।
আমি আমার এলাকায় আইটি সেক্টর ও এডভোকেসি নিয়ে কাজ করি।তাছাড়া আমাদের মান্দি ছেলে-মেয়েদের জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করছি, জানেনই তো এখন ইনফরমেশন টেকনোলজি এর যুগ...
সাংগঠনিক কাজ বলতে মধুপুরের ভূমিগত ইস্যুতে জর্জরিত সে সমস্যা সমাধানে মাঠে থাকার জন্য সর্বাত্মক ভাবে থাকার চেষ্টা করছি। অন্যান্য অধিকার ইস্যুতেও কাজ করছি.. নিশ্চয় ফেসবুকেও দেখেন?
প্রশ্নঃ সামাজিক মাধ্যম দেখলাম 'শালবনের চিৎকার' নামে সাংস্কৃতিক সমাবেশ নাকি মধুপুরে হচ্ছে, এটা মূলত কিসের জন্য এবং আয়োজক কারা? নাকি আপনার সংগঠন জিএসএফ এর?
- দেখুন আপনি নিশ্চয় জানেন মধুপুরে খাসজমির নামে আদিবাসীদের তাড়ানোর পায়তারা চলছে। মধুপুরের ভূমিতে গারোদের বসবাস দীর্ঘদিনের হাজার পনেরোশো এবং ( অনেক বেশিই) বছরের সে সুদীর্ঘ এক ইতিহাস.. .. সেটা নিশ্চয় অবগত আছেন।
শালবনের সাথে আমাদের নাড়ির সম্পর্ক, শালবন বাঁচলে আমরা বাঁচবো আমাদের পাশাপাশি এখানকার জীববৈচিত্র্য বাঁচবে। শালবনের নামে বন বিভাগ আর সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে আমরা নিজেদের অস্তিত্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি...
আর হ্যাঁ, এটা মূলত জিএসএফ এর কোন প্রোগ্রাম না, মধুপুরের আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে সামগ্রিক সাংস্কৃতিক সমাবেশ।
আমাদের গারো আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে রাজপথের পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চা প্রতিবাদের প্রতীক। 'শালবনের চিৎকার' সংস্কৃতি সমাবেশ এর মাধ্যমে আমাদের অধিকার আদায়ের কথা বলতে চাই কিন্তু আমরা এখন দেখছি নানান বাঁধার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি...
প্রশ্নঃ বাধার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন বলতে বিষয়টা পরিষ্কার করে বলবেন?
- দেখেন যখন আমরা ঘোষণা দিলাম ৯ তারিখ সেপ্টেম্বর এ 'শালবনের চিৎকার' নামে সাংস্কৃতিক সমাবেশ করতে চাইছি ঠিক তখন একই দিনে জলছত্র স্পোর্টিং ক্লাব এর আয়োজনে কৃষিমন্ত্রী জনাব আব্দুর রাজ্জাক এসে নাকি ফুটবলের ফাইনাল খেলায় উপস্থিত থেকে সমাবেশ করবেন!
এতে কী পরিষ্কার কিছু দেখতে পারছেন? এত তারিখ থাকতে ৯তারিখই কেন জবাব দিতে পারবেন? আমি আপনাকে জলছত্র স্পোর্টিং ক্লাব এর অন্যতম সমন্বয়ক স্হানীয় আওয়ামীলীগ রাজনীতির সাথে জড়িত তুষার রেমার ফোন নম্বর দিবো... আপনিই জেনে নিয়েন।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর 'শালবনের চিৎকার' আয়োজনে বাধাগ্রস্ত করার জন্যেই মন্ত্রী নিজেই জলছত্র স্পোর্টিং ক্লাবে ফুটবল খেলার ফাইনাল দিবেন... সমাবেশ করবেন বলে মনে করছি। এতো ডেট থাকতে ৯ তারিখই কেন?
** লিয়াং রিছিলের অভিযোগের ভিত্তিতে জনাব তুষার রেমাকে কল করা হলে অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন..... 'দাদা এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি নিজেই তো একজন আদিবাসী নেতা, আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে কথা বলি। আপনি খোঁজ নিলে জানবেন, আমাদের মধুপুরের নানান ইস্যুতে মাঠে ছিলাম। কিন্তু লিয়াং এমন ভাবে বলছেন যেনো আমি আদিবাসী বিরোধী কেউ! ঘটনা আসলে দীর্ঘদিন থেকেই জলছত্র স্পোর্টিং ক্লাব আয়োজনের ফুটবল খেলার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। আমি ও আমাদের ক্লাবের সদস্যরা মাননীয় মন্ত্রীর কাছে ফাইনালে আসার ডেট চেয়েছিলাম... তখন আগামী মাসের ২৩ তারিখের কথা হলে আমরা তারিখ এগুনোর কথা বলি। তখন তিনি বিবেচনা করে ৯ তারিখের কথা বলেন। কিন্তু ৯ তারিখ যে আমলিতলায় 'শালবনের চিৎকার' হবে মনেই ছিলো না।ব্যাপারটা ইকটু সাংঘর্ষিক হয়ে গেছে তাই কেউ যেনো ভুল না বুঝেন অনুরোধ থাকবে। বিষয়টি আমি ফেসবুকে ব্যাখ্যা করেছি দাদা পড়ে দেখতে পারেন।" প্রশ্নঃ এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাবো, আপনি ও মধুপুরের অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতারা বক্তব্যে ও সামাজিক মাধ্যমে প্রায়ই একটা হুশিয়ারি দেন, 'দালালেরা হুশিয়ার সাবধান' এই দালাল মূলত কে বা কারা? বলবেন! - আসলে দালাল তো তাঁরাই যে সকল আদিবাসীদের আড়ালে নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরে নিজের অস্তিত্বকে হুমকির মধ্যে নিয়ে যায়। ১৯৬২ সালের গারো রাজা পরেশ চন্দ মৃ এর কথা ও ভাবনা কী আমরা ভূলে গেছি? কেন গঠিত হয়েছিল জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ? আমাদের একত্রিত থাকবার জন্য একসাথে বাঁচবার জন্য... নিজেদের অধিকারের জন্য। কিন্ত কিছু দালাল আছেন যাদের দলীয় কার্যক্রমের আড়ালে আমরা বিব্রত হই, অধিকার আদায়ের প্রশ্নে পিছিয়ে যেতে হয়... তাদেরকে ঘৃণাভরে এগিয়ে যাবার জন্যেই দালালদের হুশিয়ারি দেওয়া হয়। প্রশ্নঃ সংবাদ পত্রে প্রকাশ আপনি নাকি বন বিভাগের মামলা খেয়েছিলেন, সে সম্পর্কে জানতে চাই। - আসলে আপনি জানেন, অধিকার আদায় প্রশ্নে হামলা-মামলা দিয়ে জব্দ করা এক কৌশল। দোখলায় লেক খননের প্রতিবাদ করায় আমাকে, জনাব জন যেত্রা, মিঃ চিরানকে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয় বলে জানতে পারি। থানায় গিয়ে কপি চাইলে এফআইআর করা না কী কোন কপি পাইনি.... এই হল ঘটনা। বনবিভাগ অধিকার আদায়ের মুখ বন্ধ করতে চায়। কিন্তু তাঁরা সফল হবে না। প্রশ্নঃ এই যে আপনি একজন ছাত্রনেতা এবং যুব সমন্বয়ক, আগামী কুড়ি বছর পর নিজেকে এবং নিজের জাতির নেতৃত্বকে কোন পর্যায়ে দেখতে ভালোবাসবেন? - দেখুন এটা একটা পরিষ্কার হিসেব, আমাদের মধুপুরের ভূমিগত ইস্যুতে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজী তো নই ই... দেশের যে কোন আদিবাসীদের ন্যায্য ইস্যুতে পাশে থাকবোই। আগামী কুড়ি বছর পর কী দেখবো? প্রজন্মের প্রয়োজনে নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। প্রজন্মই কথা বলবে সে লক্ষেই আমরা কাজ করছি। আমরা সেই পীরেন স্নালের আত্মত্যাগের কথা কী ভুলে গেছি? একজন অজয় মৃ সেই ক্রান্তিলগ্নে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন? সে রকম শক্তির উপর ভর করেই প্রজন্মের নেতৃত্ব উঠে আসবে আমার বিশ্বাস....
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for supporting