সালাশ মানখিন গারো জনগোষ্ঠীর মধ্যে চিত্রশিল্পী হিসাবে সুপরিচিত এক মুখ। গারোদের দ্বারা প্রকাশিত ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ সিংহভাগই সালাশ মানখিনের দখলে থাকায় তাঁকে নিয়ে অনেকের আগ্রহের কমতি নেই। মানুষের আগ্রহ ও শিল্প সাহিত্যকে সবসময়ই সন্মান জানিয়ে গারো নিউজ২৪ গারোদের মধ্য থেকে উঠে আসা তরুণদের গল্প তুলে ধরতে প্রত্যয়ী।
তাই আজকের অতিথি চিত্রশিল্পী সালাশ মানখিন এর সাথে কথোপকথনের চুম্বক অংশ তুলে ধরেছেন প্রতিবেদক তপন হাগিদক।প্রশ্নঃ প্রথমেই আপনার নিজের সম্পর্কে এবং চিত্র ও ভাষ্কর্য শিল্পী হিসাবে উঠে আসার গল্পটা সংক্ষেপে জানতে চাইবো। - আমি আমার ছোটবেলায় নরম মাটি দিয়ে পুতুল বানিয়ে খেলতাম। মাটি দিয়ে হাতি, ঘোড়া, পাখি বানানোর চেষ্টা করতাম। মাটি, কলাপাতা, কাঠি দিয়ে একটা অবয়ব গড়ে যে অনেক মজা পেতাম সেটার অনুভূতি অন্যরকম যা মুখে বলে বুঝাতে পারবো না। মাটিতে দাগ টেনে যে কোন কিছু আঁকতেই অনেক পছন্দ করতাম ফুল, ফল, মাছ, হাঁস কত কী! তারপর যখন বড় হলাম তখন ঢাকায় এসে ভর্তি হলাম বুলবুল একাডেমি ফাইন আর্ট(বাফা)তে। চার বছর খেয়ে না খেয়ে অভাবে, অনটনে পড়লাম, শিখলাম এই আর কী! হাহাহা
প্রশ্নঃ প্রতিটি অভিভাবকই তো চান তাঁর সন্তান ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, বিসিএস ক্যাডার কিংবা বড় চাকুরিজীবী হোক। সে রকম পরিস্থিতিতে আপনার অভিভাবক আপনাকে সে সময় কী হতে পরামর্শ দিতেন? - আমি আসলে অনেক ছোটবেলায় আমার বাবাকে হারাই। আমাকে প্রকৃতপক্ষে সে রকম চাপ কিংবা পরামর্শ কেউ দিতো না। তবে আমার মা, আমার বন্ধুবান্ধব প্রতিবেশীর অনেকেই আমার পছন্দকে সমর্থন দিতো। আমি যে আঁকতাম, মাটি দিয়ে কিছু পতুল-তুটুল বানাতাম পছন্দ করতো। আর আমার তো বলতে গেলে ঐ পড়াশোনা করাটাই একদম ভালো লাগতো না। আমি আমার পছন্দকেই সবসময় গুরুত্ব দিয়ে এসেছি।
প্রশ্নঃ একজন চিত্রশিল্পী এবং ভাষ্কর্য গড়ার কারিগর হতে কী করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন? অনেক মান্দি ছেলেমেয়েরা জানতে চায়। - শিল্প গড়তে চাইলে আগে শিল্পী হতে হয়, মন মানসিকতা ফুল-ফল, গাছ-পালা, লতা-পাতার মত প্রকৃতি হতে হয়। আগে শিল্পী, পরে শিল্প গড়ে উঠে। যারা প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য ধরাকে ভালোবাসে তারাই মূলত শিল্পী।
আমি কী করতে চাই আমার পছন্দকে আগে সন্মান জানানো শিখতে হবে। শিল্পী হতে চাইলে কষ্টকে আলিঙ্গন করে আস্বাদন করা শিখতে হবে। এটা আট-দশটা অন্য পেশাদের মতন নয়।
এখানে প্রচুর কষ্ট কিন্তু ফল মিষ্ট আর জীবনকে উপভোগ করবার মহাসমুদ্র। না খেয়ে অর্থকষ্ট সুনিশ্চিত কিন্তু সাময়িক বলা যাবে না....
যদি কারো পছন্দ হয় ব্যাপারটা তবে আসুক আমাদের মান্দিদের জন্যেই অনেক ভালো হবে। আমাদের মান্দিদের মধ্যে এখন ছাত্রছাত্রী কিন্তু অভাব নাই পাবলিক কিংবা প্রাইভেট ভার্সিটিতেও হাহাহা প্রশ্নঃ আপনার বর্তমান কর্ম ব্যস্ততা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই। - আমি বর্তমানে আমার গ্রামেই কাজ করছি, ময়মনসিংহ শহরের জন্য মিউজিয়াম 'আমা আচিক রাসঙ' এর জন্য কাজ করছি। অঙ্কণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। ভাষ্কর্য ও ক্যারিকেচার কাজটাও শেষের দিকে তবে আরো একমাসের মতন সময় লাগতে পারে। পরিকল্পনা বলতে করোনার কারনে ২০২০ সালে একক এক্সিবিশন দিতে পারি নাই। আমার চিত্রকর্ম প্রস্তুত এবং কিছুটা বাকিও আছে বলতে গেলে সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। আমি চিত্রশিল্পী কনক চাপা চাকমাকে অনেক পছন্দ করি। উনার কাজ আমার ভিষণ ভালো লাগে।
আমি শিগ্রই গুলশান বারিধারা মানে ডিপ্লোমেটিক জোন-এ আমার চিত্রকর্মের একক এক্সিবিশন দিবো। আমি সেরকম প্রস্তুতি হাতে নিয়েছি। ঐটা সময় হলেই সবাইকে জানিয়ে দিবো এখনি কিছু বলতে চাই না।
প্রশ্নঃ এবার একটু ডিফারেন্ট প্রশ্নে যাবো। আপনি গাছপালা প্রকৃতি প্রেমের অনেক কথা তো বললেন, অনেক মেয়েরাই হয়ত জানতে চায় শিল্পীরা প্রেমিক হিসাবেই বা কেমন?
- শিল্পীরা প্রেমিক একদম বিশ্বপ্রেমিক। শিল্পীদের সাথে প্রেম না করলে মিশলে তো কেউ জানতে পারবেনা তাই না?
শিল্পিরা একদম সলিড পরিষ্কার বাক্যে বিশ্বাসী হয়। এরা কচি মেয়েদের সাথেও প্রেম করতে চায়, গাছ-ফুল, লতা-পাতা বাদ তো যায়ই না, এমনকি বৌদির সাথেও প্রেম করতে চায়।
প্রেম না করলে প্রেমিক না হলে মোটকথা শিল্পী হওয়া সম্ভব না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for supporting