আমার দেখা একজন সাদা মানুষ সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমার দেখা একজন সাদা মানুষ

 In Memory of Hon'ble State Minister for Social Welfare Affairs, late Pa Advt Promod Mankin MP. Rest in peace Sir...

প্রাক কথন
কলেজ জীবন শুরু করার আগে আমার শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনে দেখা একজন অসাধারণ মানুষকে নিয়ে কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম! সে লেখা আজও শেষ করতে পারি নি। ইচ্ছে করত একটা সাদামাঠা সে কবিতা হবে, হয় নি। আজ আবার সেই মানুষটাকেই নিয়ে লিখছি। একদম সাদা - রঙহীন, গন্ধহীন, রসহীন হবে সে লেখা। লেখায় রঙ চং রাখতে চাই না। আমার কাছে থেকে, দূরে থেকে দেখা না দেখা কিছু কথা। একান্ত ব্যক্তিগত কিছু নিরীক্ষণ থেকে।

এক

তখন দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি। জীবনে প্রথম তাঁকে দেখেছি! বাবা বললেন, "তোমার ফাজং (জ্যাঠা), সালাম করো।" যে লোকটাকে কখনো দেখিই নি, তাঁকে ঝুপ করে সালাম করাটা কিছুটা কষ্টেরই ছিল বটে আমার জন্য। তাই আমি "নমস্কার আংকেল, কেমন আছেন?" বলে কেটে পড়তে চাইলাম। "ভাল, তুমি কেমন আছ? তুমি তো খুব সুন্দর করে নমস্কার দিতে পারো বাবা। কি নাম তোমার?" আরও কিছু কথা চলল। তারপর তিনি বললেন, "তুমি তো খুব সুন্দর করে বাংলা বল! তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। দেখো, আমার মুখের উপরে কালো দাগ আছে, তোমার মুখের নীচে সুন্দর তিলক, দেখেছো? তুমি সুন্দর। এখন ভেতর টাও আরও সুন্দর করবে......"

বললেন, "এমন করে জীবন করিবে গঠন
মরিলে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভূবন।"

স্বর্গীয় এড প্রমোদ মানকিন এর সাথে। প্রথম আলো'র বিশেষ এসাইনমেন্ট 'রাশি মনি হাজং" এর উপর প্রতিবেদন তৈরী করতে বন্ধু কামনাশীষ শেখর, টাঙ্গাইল জেলা সংবাদ দাতা, প্রথম আলো এবং আমি (তৎকালীন মফস্বল সংবাদদাতা, প্রথম আলো), আনুমানিক ২০০০-২০০১! আমি তখন মধুপুর কলেজে অধ্যাপনা করি
আমি তাঁকে প্রথম দেখায় বাঙালি ভেবেছিলাম। ভুল করেও একবারের জন্যও ভাবি নি তিনি গারো! তাই বাংলায় কথা বলছিলাম আমি! তিনি বললেন, "তুমি মান্দি ভাষা জানো না?" পরে মান্দি ভাষায় কথা হয়েছিল!
 তাঁর সাথে শেষ দেখার সময় আইফোনে আমার হাতে তোলা তাঁর শেষ ছবিগুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

সব ছোট ছেলে-মেয়েদের সাথেই তাঁকে এমন আমি দেখেছি। তাঁর রসবোধ অসাধারণ। মানুষকে উৎসাহ দেয়া, প্রশংসা করা তাঁর সহজাত একটা গুণ। আমাদের অনেকের সে গুণ নেই! আজও আয়নার সামনে দাঁড়ালে আমি দেখি আমার ঠোঁটের নীচে কালো দাগ!

দুই

এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে শান্তি নিকেতনে ২ সপ্তাহের হেড স্টার্ট প্রোগ্রামে গেছি। সেখানেই রুবী রেবেকা আরেং এর সাথে পরিচয়। প্রথম দিনেই আমরা খুব ভালো বন্ধু হয়ে যাই। রুবীর গল্প আগেই শুনেছি কাজিন আগাথা দিব্রা’র কাছ থেকে। একই ক্লাশে পড়ত ওরা। রুবী ভালো গান গায়, নাচেও ভাল।

সেই খ্রীস্টিয়ান গঠন প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপণী অনুষ্ঠানে তিনি আসলেন, সেদিনই জানলাম তিনি আমার বন্ধুরও বাবা! তিনি ছোট ছোট কথা বলে মুগ্ধ করে গেলেন আমাদের। বলে গেলেন, "ভাল পড়, ভাল মানুষ হও।" ছোট ছোট কথা, ছোট ছোট স্বপ্নের কথা বলে গেলেন, "তোমাদের বাবা - মা তোমাদের নিয়ে অনেক ছোট ছোট স্বপ্ন দেখেনঃ এই ভাল রেজাল্ট, ভাল মানুষ, ভাল চাকুরী, ভাই-বোন, বন্ধু - স্বজন নিয়ে মিলেমিশে থাকা, এই তো তাঁদের প্রত্যাশা, স্বপ্ন। খুব কী বড় বা কঠিন স্বপ্ন?" এমন সব কথা, আজও কানে বাজে। তাঁর ছোট ছোট কথাগুলো আমাদের অসম্ভব রকম উজ্জীবিত করেছিল।

আমি ভাবতাম, এই মানুষটা শিক্ষকতা ছেড়ে কারিতাসের আঞ্চলিক পরিচালক হলেন কেন? শিক্ষক থাকলে কত মানুষকে উজ্জীবিত করতে পারতেন!

তিন

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নকমান্দিতে প্রায়ই যেতাম। অজানা টানেই। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলাম। পাশাপাশি ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সাইন্স পড়ার জন্য একটা কম্পিউটার ফার্মকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। টাকা টা ক্রেডিট থেকে লোন নেয়া। কদিন পরে সে ফার্মের অফিসে তালা ঝুলতে দেখে খুব হতাশ, বিমর্ষ হয়ে ফিরে গিয়ে ঢাকা নকমান্দিতে কম্পিউটার শিখছি। ভিশন চিসিম আমার ওস্তাদ। দ্রুত টাইপ করতে চেষ্টা করছি। হঠাৎ একদিন তিনি সেখানে এলেন, আমাকে দেখে বললেন,"ওরে বাপরে বাপ! ফাজং তুমি কম্পিউটারও পারো! তোমাদের যুগ কত দ্রুত পাল্টাচ্ছে! ভালমত শেখ, কাজে লাগবে।" পা ছুঁয়ে সালাম করতেই মাথায় হাত রেখে, জড়িয়ে ধরে বললেন, "অনেক বড় মানুষ হও, দোয়া করি।" ৫০ হাজার টাকা হারানোর দুঃখ উবে গেল নিমিষেই।

চার

আমি তখন মধুপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যাপনা করি। বোধ করি ২০০২-৩ সাল। ঢাকা বটমলীর ওয়ানগালায় বন্ধুরা আসবে। তাই আমিও স্বপরিবারে যাচ্ছি। একদিন আগে গেছি। নিপুণ সাংমা দা বলেছেন তাঁর বাসায় থাকতে। মান্দি ড্রাইভার সাথে নিয়েছি যাতে আলাদা রান্নার ধকল পোহাতে না হয় হোস্ট কে! বাসায় ঢোকেই একটু খটকা লাগলো। ড্রাইভার সহ আমরা ৫ জন। বাসায় দেখছি আরো অনেক গেস্ট! মিরপুরের নিপুণদার বাসাটা মাঝারি রকমের। এত মানুষের জন্য জায়গা কোথায়? রাতে অনেক কথা, অনেক গল্প। ঘুমানোর সময় হলে আমি বললাম,"আমি ফ্লোরিং করতে পারি, কোন অসুবিধা নেই!" এই বলেই ফ্লোরে আমি বিছানা প্রস্তুত করা শুরু করে দিলাম। তিনি বললেন "একরাত্রিই তো, তাই না ফাজং? আসো আমরা এক সাথে ঘুমাই! তুমি ফ্লোরিং করবে কেন? উঠো, উঠো!"

এক খাটে দু'জন একরাত্রি! বয়সের অনেক ব্যবধান। কিন্তু আমাদের কোন অসুবিধে হয় না। গল্পে, কথায় কিংবা আলোচনায়। গল্পে গল্পে ঘুমের রাজ্যে। আমি সে রাতেই আবিস্কার করলাম আমরা দু'জনেই ভাল স্নোর করি (নাক ডাকি)!

পাঁচ

সেড এর একটা জাতীয় সেমিনারে গেছি। ২০০৩-৪ সাল। ধানমণ্ডি ২৭ রোডের ডব্লিউ ভি এ সেন্টারে। তিনি প্রধান অতিথি আর আমি কন্ট্রিবিউটর, সাধারণ বক্তা। 'মধুপুর বন ও তার আদিবাসী মানুষের জীবন সংগ্রাম' এই ছিল আমার বলার বিষয়। লাঞ্চ বিরতিতে তিনি মঞ্চ থেকে নেমে আমার খুব প্রশংসা করলেন। বললেন, "তুমি লেকচারার তা জানতাম, কিন্তু এত ভালো লেকচার দিতে পার তাতো জানতাম না! তোমার ইংরেজি উচ্চারণ শুনে আমি মুগ্ধ!" তিনি আমার পাশে এসে বসলেন, ছবি তুললাম আমরা। সাংবাদিক এবং অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন আমাদের অদ্ভূত সুন্দর একটি ছবি আমাকে পাঠিয়েছিলেন! সাংবাদিকদের বললেন, "আমার আরেক ছেলে, কলেজে অধ্যাপনা করে।"

ছয়

ভারতের লোক সভার সাবেক স্পীকার পি এ সাংমা একবার বাংলাদেশে এলেন। ১৯৯৮-৯৯ সাল হবে। আমি মেহেরুন্নেসা মহিলা কলেজে তখন খন্ডকালীন প্রভাষক। ময়মনসিংহ বিশপস হাউজে পা পি এ সাংমাকে সম্বর্ধনা দেয়ার পর আবিমায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা ময়মনসিংহ গিয়েছি। আমি কাছে যাব কি যাব না ভাবছি! তিনি আমাকে ইশারায় কাছে ডেকে পি এ সাংমাকে বললেন, "এ আমাদের মধুপুর আবিমার ছেলে, কলেজে অধ্যাপনা করে। হি ইজ রিয়েলী ডিফরেন্ট এন্ড এ বয় অব ইন্টেগ্রিটি! এ ভেরি প্রমিজিং ইয়াং লিডার!"

আমরা মধুপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হব। পি এ সাংমার গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। আমি গাড়ি বা হোন্ডা নিয়ে আসি নি। সবাই গাড়ি, হোন্ডা হাকিয়ে চলে যাচ্ছে। যাঁদের সাথে এসেছিলাম, আনন্দের আতিশয্যে তারাও আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছে। দেখলাম বিশপ হাউজের গেইটের কাছে গিয়ে পিএ সাংমার গাড়ি থেমে গেছে! তিনি হাত নেড়ে আমাকে কাছে ডাকলেন। জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি যাবে কিসে?" আমি পাবলিক বাসে যাব বলতেই বললেন, "উঠো, উঠো, আমাদের সাথে উঠো। একটু কষ্ট করে যাই এক সাথে!" আসলে গাড়িতে কোন সীট ছিলো না! আমি প্রায় একজনের কোলে করেই আবিমা গেলাম।

বাজ পাখির মত তীক্ষ্ম তাঁর দৃষ্টি! শত শত মানুষ যা দেখতে পান না, তিনি তাও দেখতে পান। এটাই তাঁকে অনেক মানুষ থেকে আলাদা করে।

সাত

২০০১ সাল। সারাদেশে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ফেল করেছে। বি এন পি ক্ষমতায় তখন। সবখানে ভাংচুর, আওয়ামী সমর্থকদের মারধর চলছে। আমাদের এলাকার সব আওয়ামী নেতারা একদম নীরব! চুপচাপ। আমাদের টাঙ্গাইল এক আসনে ড রাজ্জাক এম পি বিপুল ভোটে নির্বাচিত। কিন্তু কোথাও কেউ তাঁকে সংবর্ধনা দিচ্ছে না। কারো সাহস হচ্ছিল না বোধ হয়। অথবা সারা দেশের নির্বাচনী ফলাফলে সবাই নির্বাক! আমরা আজিয়া সংগঠন থেকে তাঁকে সম্বর্ধনা দিচ্ছি। সরকারী দল তাই আমার উপর খুব নাখোশ। তাঁরা এই অনুষ্ঠান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। আমি তা লঙ্ঘন করেছি, তাই আমার শাস্তি আমি এলাকায় বেরুতে পারব না, কলেজে পড়াতে যেতে পারব না। আমাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে 'হাত-পা ভাঙ্গার' নির্দেশ দিয়েছে যুবদল নেতা 'পান্না' ভাই! আমি ড রাজ্জাক কে বললাম স্যার, "আপনি সাহস করে আসলে, আমি আমার আদর্শের জন্য জীবন দিতে পারি! মরে যেতে পারি কিন্তু অনুষ্ঠান হবে। যদি আপনি সাহস করে আমাদের এলাকায় আসেন! বাকীটা জীবন দিয়ে আমি সামলে নেব! "

এলাকা উত্তপ্ত। ক্ষমতাশালী মানুষের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়াতে আমার জীবন বিপন্ন! তাই তিনি হালুয়াঘাট থেকে মিঃ সুভাস জেংচাম, সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার কে সাথে নিয়ে মধুপুর এলেন, সরকারি দলের কিছু নেতা এবং আমাকে নিয়ে জরুরী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন। তিনি আমাকে অনুষ্ঠান আপাতত না করার জন্য পরামর্শ দিলেন। আমি মেনে নিলাম। আমাকে একাকী ডেকে বললেন, "তুমি যে সাহস দেখিয়েছ এতে আমি অবাক! গর্বিত। দেশের কোথাও কেউ এত সাহস নিয়ে কেউ উঠে দাড়ায় নি, তোমরা দাড়িয়েছ! কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারাটাই রাজনীতি। ডু ইট। নেভার থিঙ্ক ইউ আর লুজিং!"

কথাটা খুব ভালো লেগেছিল। কিন্তু বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসতেই সরকারি দলের এক নেতা বললেন, "পিপিলিকার পাখা গজায় ...সাহস থাকলে সম্বর্ধনা দেও, আমরা দেখি তোমার কলিজা কত বড়!" আমি তাঁর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম, ড রাজ্জাক এম পি ফোন দিয়ে অনুষ্ঠানে আসতে বললাম। তাঁকে সম্বর্ধনা দিলাম। সেই থেকে আমি কট্টর আওয়ামী লীগার বলে পরিচিত হলাম। আওয়ামী সিল গায়ে লেগে গেল বেশ ভালোভাবে! সেই থেকে আমি ড রাজ্জাক এম পি এবং তাঁর কাছেও সাহসী সহযোদ্ধা!

আট

আমি দৈনিক প্রথম আলোর মফস্বল সংবাদদাতা হিসেবে যোগদানের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রথম এসাইনম্যান্ট হিসেবে হাজং মাতা রাশিমনির উপর রিপোর্ট করার জন্য টাঙ্গাইল ডিসট্রিক্ট করস্পন্ডেন্ট বন্ধুবর কামনাশীষ শেখর এর সাথে খামারখালি, বহেরাতুলি, মাধবপুর, রানীখং গিয়েছি। তিনি তাঁর মায়ের বাড়িতে তাঁর মাকে দেখতে গিয়েছেন। শুনেছেন সাংবাদিক এসেছেন। তাই আমাদের লোক পাঠিয়ে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মান্দি চা দিয়ে, কাজি দিয়ে আপ্যায়ন করেছেন। বলেছেন,"কোন সাংবাদিক আমার মায়ের বাড়ির পাশে দায়িত্ব পালন করতে এসে না খেয়ে যাবেন, তাই কি হয়? আমি না থাকলেও নিজের বাড়ি মনে করে খেয়ে যাবেন।"

আমাদের প্ল্যান ছিলো আমরা ময়মনসিংহ থাকবো। তিনি বললেন, "আজ আর যেও না, বিরিশিরি অয়াই এম সি গেস্ট হাউজে থেকে, কালকে যাও।" আমরা তাঁর পরামর্শ মত ডা অনিসীম বিলিয়ম সাংমা'র বাড়িতে থেকে গেলাম রাতে। সেরাতেই ময়মনসিংহে বোমা হামলা হল! যদি আমরা সে রাতে ফিরতাম, আমাদের কি হতো, আমরা জানি না!

আমার বন্ধু কামনাশীষ শেখর বলল,"সত্যি ইনি জেন্টেল্ম্যান। সাদা মনের মানুষ!"

নয়

তিনি খুব অসুস্থ্য। বঙ্গ বন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববব্বিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি। কি নিয়ে যাই এই মানুষটির জন্য? ভাবছি। আমি কিছু রজনী গন্ধার স্টিক নিয়ে দেখতে গেলাম তাঁকে। কথা বলছি তাঁর সাথে। এমন সময় ডাক্তার আসলেন তাঁর রেগুলার চেকাপ করার জন্য। আমি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালাম। তিনি ডাক্তার মহাশয় কে বললেন, "মিঃ ডাক্তার, হি ইজ মাই সান, টিচেস ইংলিশ এ্যাট সেন্ট জোসেফ কলেজ।" ডাক্তার বললেন, "নাইস টু মীট ইউ, আই এম এক্স-যোসেফাইট!" ডাক্তার তাঁর চেয়ার আমার জন্য এগিয়ে দিলেন!

একজন মানুষকে আরেকজন মানুষের সাথে অত্যন্ত সম্মানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কাজ টা তিনই খুব যত্নের সাথে করেন, যা আমরা অনেকেই খুব একটা করি না।

দশ

২০০৫ সাল। কবি মত্যেন মানখিনের গ্রামের বাড়িতে তাঁর 'পাথর চাঁপা ফুল' কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উম্মোচন। দেশের বড় বড় লেখক, কবি, সাংবাদিক, বাংলা একাডেমীর পরিচালক, সহ-পরিচালক সেখানে আমন্ত্রিত। আমি আর কবি বচন নকরেকও আমন্ত্রিত সেখানে। তখন কেবল মাত্র কারিতাস থেকে আঞ্চলিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদ থেকে পদত্যাগ করে সেন্ট যোসেফ কলেজে জয়েন করেছি। তাই কারিতাসের অনেক কর্মকর্তারাও আমাকে চিনতে পারছেন না বোধ হয়! হাজার হাজার মানুষ কবি বাড়ির উঠানজুড়ে। যেনো "ঠাই নাই, ঠাই নাই ছোট এ তরী"।

অনুষ্ঠান শুরু। হাজার মানুষ। আমার মত কত মানুষ! সবাই ব্যস্ত। আমাকে কেউ চিনে না ওখানে! কবি বচনকেও না! আমি আর বচন মঞ্চ থেকে অনেক দূরে। বসার জায়গা হয় নি। তাই দাঁড়িয়ে দর্শক সারিতে । মঞ্চ থেকে হাজার মানুষের ভীড়ে আমাকে কারও আলাদা করে চেনার প্রশ্নও আসে না। অবশ্য আলাদা আমার যত্ন - আত্মি হবে সে আশা নিয়েও যাওয়া হয় নি। কিন্তু এই টুকু আশা করেছি, কেউ বলবে, "বাবুল, ভাল আছ? তুমি এত দূর থেকে এসেছ, আমরা খুশি হয়েছি!"

হঠাৎ দেখলাম তিনি একজনকে মাইকে কিছু একটা ঘোষণার জন্য ফিস ফিস করে কিছু একটা বলছেন। লোকটি বোধ করি তাঁর কথা বুঝতে পারেন নি। পরে তিনি নিজেই তাঁর প্রধান অতিথির আসন ছেড়ে উঠে গিয়ে মাইকে ঘোষণা দিলেন,"সম্মানিত সুধী, আমাদের মাঝে এই মাত্র উপস্থিত হয়েছেন কবি, লেখক, ঢাকা সেন্ট যোসেফ কলেজের অধ্যাপক (যদিও আমি তখন প্রভাষক মাত্র) এবং সাংবাদিক ......

আমি সেদিন অনেক টা কেঁদেই ফেলেছিলাম। খুব সাধারণ, ছোট মানুষদেরও তিনি অসাধরণ করে সম্মান দেখান, যা আমি কোন মানুষের মধ্যে এই বিশেষ গুণ লক্ষ করি নি। সাধারণ মানুষ তো বটেই, ধর্মীয় নেতাদের মধ্যেও মানুষকে সম্মান করার মানসিকতা বিরল দেখা যায়!

এগারো

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ পূর্তি উৎসব উদযাপন উপলক্ষে এপাড় ওপাড় বাংলার ৪০ জন তরুণ কবিদের নিয়ে আমার আর তৃপ্তি চিসিম এর সম্পাদনা এবং কবি আব্দুস সাত্তার এর প্রকাশনায় 'খুঁজি ফিরি তোমাকেই' ২০১২ সালের একুশের বই মেলায় একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পায়। যে কোন কারণেই হোক তাঁর সাথে আমার একটা মান - অভিমান, দূরত্ব, ভুল বুঝাবুঝি চলছিল। আসলে আমি তাঁর সাথে বেশ চরম একটা বেয়াদবী করেছিলাম! তারপরও ভাবছিলাম তাঁকে দিয়েই আমাদের বইটার মোড়ক উম্মোচন করাই! মনে মনে ভাবছিলাম, বইটির মোড়ক উম্মোচনের জন্য অনুরোধ করি, তিনি হয় তো রাজী হবেন না। তবুও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফোন দিলাম।

তিনি খুব সবাভাবিকভাবেই কথা বললেন। যেন কিছুই হয় নি, কিছুই ঘটে নি! মনেই রাখেন নি তাঁর সাথে আমার বেয়াদবী করার কথা। তিনি একবাক্যে প্রধান অতিথি হওয়ার জন্য রাজী হয়ে গেলেন!

বারো

২০১২ সাল। তিনি স্বস্ত্রীক আমেরিকা সফরে আসছেন। জাতি সংঘে একটা অধিবেশনে ৭-৮ জন বাংলাদেশের এম পি কে নেতৃত্ব দিবেন তিনি। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে সে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি সে খবর জানি আগে থেকেই। কারণ আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রের 'সাপ্তাহিক এখন সময়' পত্রিকার প্রধান সহ-সম্পাদক এর দায়িত্ব ছিলাম। আমি তাঁর ফোন নাম্বার জুয়েল আরেং এর কাছ থেকে জোগার করে নিয়েছি। ফোন দিলাম। উদ্দেশ্য ছোট হিসেবে বড় মানুষের কাছে স্যরি বলে নেওয়া।

- হ্যালো
- নমস্কার স্যার
- নমস্কার, কে বলছেন?
- স্যার আমি বাবুল ডি' ন ক রেক ...
- ও মাই গড! বাবুল ডি' ন ক রেক হাউ হ্যাভ ইউ গট মাই সেলফোন নাম্বার মাই বয়?
- হ্যাভ ইট ফ্রম জুয়েল ...
- থ্যাংক ইউ ফর কলিং মী বাবুল... ভেরি হ্যাপী টু নৌ ইউ আর হিয়ার। সো, হোয়াট আর ইউ ডুইং মাই বয়?
- আই অ্যাম ডুইং টু পার্টটাইম জবস এন্ড স্টাডিং টু ...
- ড্যাটস গ্রেট! ড্যাটস গ্রেট! আই অ্যাম রিয়েলি প্রাউড অব ইউ ... ইউর আজং ইজ অলসো উইথ মী; ডু ইউ অয়ান্ট টু টক টু হার?
- ইফ পসিবল, প্লিজ ...
[বাবুল ডি' ন ক রেক ফোন করেছে, কথা বল, এই বলে ফোনটা দিয়ে দিলেন...]
- হ্যা বাবুল, কি খবর? কেমন আছ?
- ভাল আছি। তোমরা কেমন আছ আজং?
- ভাল, খুব ভাল ...
- তোমার বউ - বাচ্ছা কি এখানে?
- না, আমি একা।
- একা কেন? তোমার বউ -বাচ্চাকেও নিয়ে আসার চেষ্টা করো না কেন বাবা?
- চেষ্টা করছি।
- খুব ভাল হবে। অবশ্যই ওদেরকে নিয়ে আসবা ...
- ঠিক আছে। কিন্তু মাঝে মাঝে আমার দেশে চলে যেতে ইচ্ছে করে আজং, কিচ্ছু ভাল লাগে না ...
- না, না। তোমার জন্য এখানেই সব থেকে ভালো হবে। দেশে থেকে তুমি এখানে অনেক নিরাপদ! কখনও আর ফিরে যাওয়ার কথা ভাববে না। কিসাংচা আর দাআ নিফিল্লেতাবো নে বাবা? ভুল সিদ্ধান্ত রানাবে! ভুল হবে কিন্তু। ভাল থেকো ... এই বলে তিনি আবার তাঁর হাতে ফোন দিলেন।

আরও অনেক কথা হল।

যদিও আমি ফোন দিয়েছিলাম দেখা করে ভুল বুঝাবুঝির অবসান করার জন্য, স্যরি বলার জন্য। কিন্তু ফোনে কথা বলে মনেই হল না তাঁরা কিছু মনে রেখেছেন!

তিনি আমেরিকায় নিউ ইয়র্কে ২ দিন, তারপর কানেক্টিকাট এবং ম্যারীল্যান্ড এ ছিলেন ২ সপ্তাহ। আমরা কেউ আর সময় বের করতে পারি নি দেখা করে কথা বলার। যা কথা হয়েছে ৩-৪ বার, তা শুধুমাত্র ফোনেই। সে বার ১৬ ডিসেম্বর ওয়াশিংটন ডিসি'র আওয়ামী লীগ এর অনুস্টানে চীপ গ্যাস্ট করার জন্য তাঁকে ফোন দিলাম। কিন্তু তিনি সময় দিতে পারেন নি। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

তের

কিছুদিন আগেই আমি ফেইসবুকে তাঁকে নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম। লেখাটা ছিল এমন

"তৃতীয়বারের মত প্রতিমন্ত্রী হবার (হ্যাট্রিক) পর মাননীয় তাঁকে প্রতিবারের মত ফোন দিচ্ছিলাম অভিনন্দন বলার জন্য। এবার অবশ্য নিউ ইয়র্ক থেকে। আমার মত হাজার হাজার মানুষ ঠিক ঐ মুহূর্তে ফোন দিচ্ছিল নিশ্চয়ই, এটা বুঝার জন্য দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হয় না। সব সময়ই ফোন ব্যস্ত ছিল। অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে ফোনে পাওয়া গেলো না!

ভাবলাম ছোট একটা এস এম এস দেই! আবার ভাবলাম, এস এম এসও তো হাজার খানেক আসতে পারে! এগুলো পড়ার জন্যও তো অনেক সময় দরকার। এখন তো অবশ্যই হাজার হাজার নেতা - কর্মী, বন্ধু - স্বজনকে সময় দিতে হচ্ছে, ইচ্ছায় - অনিচ্ছায়। ধৈর্যও তো দরকার। যাকগে। আর ফোন দিলাম না ...

কিন্তু মনটা একটু কেমন কেমন করে। এত বড় একটা সাফল্য, অনেক জাঁদরেল মন্ত্রী এই নতুন ক্যাবিনেটে নেই। একজন মান্দি নেতার সাফল্যে অভিনন্দন টুকুও যদি দিতে না পারলাম, কেমনে চলে?

যাক, অভিনন্দন পাঠাই। সে টা তিনি পড়ার সময় পান বা না পান। তিনি রেস্পন্স করেন বা না করেন। তিনি নির্বাচিত হয়ে তৃতীয়বারের মত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করে আমাদেরকে আবারও বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন। আমরা বলতে পারি, আমাদের গারোদের মধ্যেও একজন প্রতিমন্ত্রী আছে! আমরাও আইন প্রণয়ন করি, দেশ শাসনে আমরাও ...

এসব ভাবতে ভাবতে সেলফোন থেকে ছোট ম্যাসেজ পাঠালাম ...

Congratulations Sir.

- Babul Nokrek, USA

যখন পাঠিয়েছি তখন বাংলাদেশে অনেক রাত। আমি অভিনন্দনের উত্তর আশা করি নি।

পরের দিন রাত ১০:৩০ মিনিটে ইউরোপ থেকে আমার দুই বন্ধু ভ্যালারী ভেল্টম্যান এবং শালোমি ইন্দিরাকে নিয়ে ব্যাবিলন বার-এ গেছি। নিউ ইয়র্কে এসে এই বার দেখে যেতে না পারলে নাকি তাঁদের আমেরিকা ভ্রমণটাই মাটি হয়ে যাবে! আমার জন্য তো এই বারে যাওয়া আকাশ কুসুম কল্পনার মত! বন্ধুদের কাছে শুনেছিঃ এখানে মাঝারি আয়ের মানুষেরা ঢোকার সাহস করে না!

বন্ধুরা এসেছে, যেতে চাচ্ছে, তাই সাহস করে যাওয়া। দরকার হলে একমাস চা - নাস্তা খাওয়া ছেড়ে দেব, এই হিসেবও কষে রেখেছি! ওরা ৫ দিনের জন্য নিউ ইয়র্ক এসেছে। একটা ভাল দিক হল, আমেরিকা - ইউরোপের বন্ধুরা সব কিছুতে শেয়ার করে। কেউ কারোর বিল দেয় না। তাই সাহস টা একটু বেশি আমারও। গেলাম, দেখলাম স্বপ্নের ব্যবিলন!

ঠিক রাত ১২ টা বাজার ১৫ মিনিট আগেই আমি বললাম, স্যরি আমাকে উঠতে হবে। ঠিক ১২ টায় বেরিয়ে এলাম।
১২:০১ মিনিটে আমার সেলফোনে একটা ম্যাসেজ আসল ...

"Thank You Babul Nokrek for congratulation from far a place like America. I am happy to receive it. Through you, Babul, I humbly extend my sincere thanks and gratitude to every welwisher and benefactors of mine staying in USA. Thanks again.


- Promod Mankin MP, State Minister for Social Welfare...

আমি খুব গর্ব করে ওদের দুজনকে ম্যাসেজ টা দেখালাম। বললাম ,"তিনি আমাদের গারো এম পি। চার চারবার এম পি হয়েছেন। এক মাত্র খ্রীস্টান এম পি এখনও। গতকাল তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে একটা ম্যাসেজ দিয়েছিলাম। তার উত্তর এটি।"

তাঁরা খুব সারপ্রাইজড! একজন মন্ত্রী একজন সাধারণ নাগরিকের এস এম এস দিয়ে অভিনন্দনের উত্তরও যত্নের সাথে দিতে পারেন, তা তাঁদের যেন বিশ্বাসই হতে চায় না! তাই তাঁদের একসাথে অনেক প্রশ্ন, "একজন মন্ত্রী এস এম এস এর উত্তর দিলেন? কি বল তুমি! কত হাজার মানুষ এখন অভিনন্দন বলছে! উনার উত্তর দেওয়ার এখন সময় আছে? এত সিন্সিয়ার মন্ত্রী? হি মাস্ট বি এ গুড মিনিস্টার!"

আমিও কিছু টা ভাব আর কিছুটা অহংকার নিয়ে বললাম, "তিনি আমাদের লোক! ভাল না হলে কি চার চারবার এম পি হন? ৩ তিনবার মন্ত্রী হন?"

- ও! তাই?
- জি
- তুমি কি অর জন্য খুব প্রাউড ফীল করো?
- নিশ্চয়ই। তিনি আমাদের অহংকার। এখন আমরা যে কেউ চোখ বন্ধ করে যে কোন নির্বাচনে নমিনেশন চাইতে পারি, [নমিনেশন না দিলেও স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারি।] এ পথ তিনি আমাদের দেখিয়েছেন।
- তুমিও নির্বাচন করবে না কি?
- হাহাহা ... সে টা তো এখনই বলা যাচ্ছে না, সময়ই কথা বলবে!
- তুমি তো পাক্কা পলিটিশিয়ানদের মত কথা বলছ! খুব ডিপ্লোম্যাটিক তো তুমি!
- কি জানি!

আমি এও বললাম, "উনি প্রতিমন্ত্রী হওয়াতে আমি কিছুটা হতাশ!"

- ক্যানো? ক্যানো?
- আমি আশা করেছিলাম এইবার উনি ফুল মন্ত্রী হবেন!
- আহারে! তুমি দেখো, তোমাদের লোক ফুল মন্ত্রী হবেন। আমরা প্রার্থনা করব!

ওদের সাথে কথা বলতে বলতেই আমিও লিখলাম...

We all Garos in USA are excited! Thank you and we praise the Lord. It is an honour and supreme prestige. Our heads up. We really feel proud for you Sir.

Best regards,

- Babul D' Nokrek, New York, USA

মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয়,
আপনার শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ আমি আমেরিকার সব গারোদের জন্য পৌঁছে দিচ্ছি ফোনে, ফেইসবুকে! এখানে বাংলাদেশের ৪০-৪৫ জন মান্দি থাকেন, জানেন?

আমি জানি, ফেইসবুকে লিখলেও আমার এই লেখা আপনার দৃষ্টি এড়াবে না! আমরা সত্যি প্রাউড ফীল করি, অহংকার করি আপনাকে নিয়ে। মুখে বলতে হয় তো পারি না, দেখাতে পারি না, এক্সপ্রেস করতে পারি না, কিন্তু ভালোবাসি আমরা আপনাকে। আর আপনাকে "আমাদের লোক" বলতেই আমাদের ভালোলাগে! যদিও আপনি জাতি- ধর্ম - বর্ণ নির্বিশেষে সারাদেশের, সকল মানুষের ...

আপনি আমাদের যা দিয়েছেন (গর্ব করার, অহংকার করার মত স্প্যাস) ওতেই আমরা খুশি। আমরা রাষ্ট্র থেকে আমাদের যা পাওয়ার ছিল তার থেকে একটু বেশি প্রাপ্য সম্মান পেয়েছি মনে হয় মাঝে মাঝে!

কিন্তু আরও কত কিছুই তো পেতে মন চায়! এই ধরেন, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি; মধুপুর, হালুয়াঘাট, গাজীপুরে আর বাড্ডা - কালাচাদপুরে আদিবাসী কালচারাল একাডেমি; সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রনালয় ইত্যাদি!

নিকট ভবিষ্যতে অনেক ভাল ভাল কাজ করুন। আমরা বুক উঁচু করে বলব, "এই যে কালচারাল একাডেমী টা দেখছ, এটা এড প্রমোদ মানকিন এম পি করেছেন, তিনি আমাদের লোক।" কিংবা "আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি" আদায়ের জন্য যিনি রাতদিন কাজ করেছেন, তিনি মাননীয় সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এড প্রমোদ মানকিন এম পি, "তিনি আমাদের লোক"।

আমি জানি আপনি আগেও যেমন কাজ করেছেন, সামনে আরও ভালো কাজ করবেন।

অবশ্য, আপনি আর কিছু না করলেও আমরা ইতিহাস তৈরির জন্যই আপনাকে মনে রাখব। আপনাকে নিয়েও হয় তো অনেক কবিতা হবে, গল্প লেখা হবে, একাধিক বই লেখা হবে একদিন। ইতিহাস তো লেখা হয়েই গেছে।

আপনি ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। শতায়ু হোন। "

শেষ কথা

আমি আমার লেখার কোন ব্যাখ্যা দিচ্ছি না। খুব প্লেইন এন্ড সিম্পল করে তাঁর সাথে আমার ব্যাক্তিগত দেখা-সাক্ষাত, কথোপকথন খুব সংক্ষিপ্ত আকারে লিখেছি। খেয়াল করলে পাঠক দেখবেন, একজন খুব ছোট মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, দরদ, সম্মান, আন্তরিকতা, নির্ভেজাল ভালোবাসা, সাদা - কালো স্নেহময় হাত। সহজ - সরল অথচ এক অসাধারণ মানুষ তিনি। যিনি কারো বিপদে ছুটে গেছেন। ধৈর্য ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা শুনেছেন। কেউ অন্যায় করলে খুব কষ্ট পেয়েছেন, কিন্তু ভুলেও গেছেন স্যরি বলার আগেই।

আমরা যখন আমাদের বাবাকে নিয়ে খুব গর্ব করতাম, অহংকার করতাম। কিন্তু আমাদের বন্ধু রুবী রেবেকা আরেংকে (মুরুব্বির মত সৎ পরামর্শ দিতে যার জুড়ি নেই, তাই সে আমার বয়সে একটু ছোট হলেও রুবী দি) ছাত্র জীবনে বাবাকে কাছে না পাওয়ার অনুযোগ করতে শুনেছি! দীর্ঘশ্বাস ছিলো তার! বিষয় টা খুব পরিষ্কার। দল নিয়ে, মানুষের সমস্যা নিয়ে, সেমিনার সিম্পোজিয়াম নিয়ে দেশে বিদেশে ব্যস্ত থেকেছেন আজীবন। পরিবারের মানুষের জন্য, নিজের জন্য হয় তো সময়ই দেওয়া হয় নি! কত নির্ঘুম রাত হয় তো কেটে গেছে মানুষের কথা ভেবে, আমরা জানি না। কত শ্রম, সময়, ঘাম ঝরেছে, আমরা দেখি নি! আমরা শুধু তাঁর সাফল্য দেখেছি, তাকে সাংসদ হতে দেখেছি, মন্ত্রী হতে দেখেছি। আসলে বাস্তবতা এমনই। আমরা মানুষের সংগ্রাম করে বড় হওয়াটা দেখি না, দেখি শুধুই তাঁর সাফল্য। সমাজ ব্যর্থ মানুষদের মনে রাখে না। সফল হলেই মাথায় নিয়ে নাচে! সাফল্য অর্জনে কতবার ব্যর্থ হতে হয়, কত সাধনা করে একটা পর্যায়ে মানুষ পৌঁছে, তা আমাদের দৃষ্টি সীমানার বাইরেই থেকে যায়।

প্রকৃত অর্থেই তাঁর জীবন টা এমন ...

"আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী 'পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা,
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে |"

আমার কাছে তিনি সাদা মনের মানুষ। আমরা তাঁর সমালোচনা করি দূরে বসে। কলম চালাই। নিন্দা করি। সহযোগী হই না, সহযোদ্ধা হই না। কখনও ভাবি না, সব সময় নেতিবাচক সমালোচনা করে আমরা নিজেদেরই ক্ষতি করছি। কত ভালো গুণ থাকে, কত ভালো কাজ হয়, সেগুলো আমাদের অনেকের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়! আমরা পড়ে থাকি একটা খুঁত নিয়ে!

আমার মনে হয় মানুষ টা হাজারো মানুষের ভীরেও একা! একা হাটেন স্রোতের বিপরীতে! তাঁর বন্ধু, নেতা -কর্মী, শুভানুধ্যায়ী অসংখ্য, কিন্তু মন খুলে কথা বলতে পারেন, সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারেন, পরামর্শ করতে পারেন, এমন একান্ত কাছের মানুষ নেই! একদম নেই! তাঁর মত দূরদর্শী চিন্তা করতে পারেন, কোন ইস্যু নিয়ে আড্ডা, আলোচনা করতে পারেন, এমন সমকক্ষ মানুষ নেই! একদম নেই! এটা আমার ধারণা মাত্র। ভুল প্রমাণিত হলেই আমি খুশি হব।

আসলে আমরা তাঁকে সঠিক মূল্যায়ন করতে পারি নি। তাঁর প্রাপ্য সম্মান আমরা দেখাতে পারি নি। মানুষ কেউ ভুলের উর্ধে নন, দেবতা নন। ভাল -মন্দ মিলিয়েই মানুষ। তিনিও তাই। তিনি বিশাল বটবৃক্ষ। আমাদের ছায়া দেন, আশ্রয় দেন, শোভা বর্ধন করেন।

তাঁর বিবাহের সুবর্ণ জয়ন্তীতে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন, প্রণাম। আমি আজং-ফাজং দুজনের শতায়ূ কামনা করি।

মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয়,

আপনি সুস্থ্য থাকুন সব সময়। আরও অনেক ভালো ভালো কাজ করুন। আপনি আমাদের অহংকার করার মত, গর্ব করার মত অনেক মুহূর্ত দিয়েছেন পুরো জাতিকে, আপনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আপনার কাজ আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে অন্তকাল।

NB: I wrote this article 2 years ago on his 50 years anniversary on a special request of his lovely daughter and my friend Ruby Rebeca Areng. Hon'ble State Minister for Social Welfare Affairs Advt Promode Mankin MP is no more with us! No words to condole. It's a great loss to the whole nation. It's irreparable. RIP Sir.

I faced a lot of music from many FB friends, Garo writers and intellectuals then just for writing my feelings towards him. Many tried to find oiling! Now I can see reverse feelings of the people. Many will write status, poetry, articles now! Did we evaluate him when he was with us? Did we pay him his due tribute? Did we?

Garo nation now will understand what they lost!

May God grant him eternal rest and peace....

[পুনশ্চঃ মূল লেখাটি আরও একটু দীর্ঘ! এই লেখাটি কিঞ্চিত সংক্ষিপ্ত আকারে তাঁর বিবাহের সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রকাশিত সুভ্যেনীরে ছাপা হয়েছে। আমি যথা সাধ্য তথ্য সঠিক দিতে চেষ্টা করেছি। লেখাটি শেয়ার দিলাম। মতামত দেওয়ার অধিকার সবার আছে। কিন্তু তা যেন কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আহত করার জন্য না হয়! লেখাটির কোন অংশ কাউকে আহত করলে আমি খুবই দুঃখিত, নিজ গুনে ক্ষমা করবেন। কাউকে বড় বা ছোট করার উদ্দ্যেশে লেখা হয়নি।]


NB: In the pic: Advt Promod Mankin Sir, Journo friend Kamonashish Shekhor, The Daily Prothom Alo & me, 2002 in Ranikhong. We went there to carry out an assignment on Hajong mata Rashimoni for the Daily Prothom Alo!




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'মধুপুর সরকারী কলেজঃ অবসরকালে যেমন কেউ বিদায় দেন না,তেমনি কেউ বিদায় পান না' - এমনই হৃদয় বিদারক স্ট্যাটাস অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক ও সিনিয়র সাংবাদিক জয়নাল আবেদীনের, নেট দুনিয়ায় তোলপাড়

জেফিরাজ দোলন কুবি, ময়মনসিংহ থেকে 'মধুপুর সরকারী কলেজঃ অবসরকালে যেমন কেউ বিদায় দেন না, তেমনি কেউ বিদায় পান না' - এমনই হৃদয় বিদারক ফেইসবুক স্ট্যাটাস ঝড় তুলেছে নেট দুনিয়ায়! মধুপুর সরকারী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন-এর স্ট্যাটাসে ঐ কলেজের কিছু বর্তমান, প্রাক্তন কলেজ শিক্ষক এবং ছাত্র - ছাত্রীরা কমেন্ট করেছেন। কেউ কেউ দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সেখানে কিছু অভিভাবকগণও তাঁদের অভিমত প্রকাশ করেছেন। সব মিলিয়ে ঠিক মোক্ষম সময়ে স্ট্যাটাসটি সবার মনে এবং হৃদয়ে দাগ কাটতে পেরেছে মনে করছেন সবাই। অনেকে একে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন। যিনি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তিনি ঐ কলেজের সহকারী অধ্যাপক (অবসর প্রাপ্ত), ইতিহাস বিভাগ। তিনি ৪০ বছরেরও অধিক সময় ধরে কাজ করছেন দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র করেস্পন্ডেন্ট হিসেবে। লেখাটি গুরুত্ব পেয়েছে এই কারণেও। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, " টাঙ্গাইলের মধুপুর সরকারি কলেজ (বর্তমানে) এমন একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানকার শিক্ষক এবং স্টাফরা অবসরে গেলে কেউ কাউকে কখনো বিদায় সংবর্ধনা দেন না এবং প্রতিদানে কেউ সংবর্ধনা পান না! এজন্য অধ্যক্ষদের ভাগ্য...

নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিলেন সিমব্রি অর্ণি সাংমা

জেফিরাজ দোলন কুবি ময়মনসিংহ থেকে,  বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিয়েছেন সিবব্রি অর্ণি সাংমা। তিনি ৫ জানুয়ারী, ২০২২ ঢাকার নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে যোগদান নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে সাংমা গত ৮ জানুয়ারী পতেঙ্গা নাভাল একাডেমীতে ৩ বছর মেয়াদী দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণে যোগ দেন। অর্ণি গারো আদিবাসীদের মধ্যে সর্বপ্রথম নৌবাহিনীর কমিশন্ড র‍্যাংক-এ সুযোগ পেলেন।      বাবা-মা ও বোনদের সাথে  অর্ণি  নৌবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী নৌবাহিনীর নেভাল একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ১৮ মাস ও মিভশিপম্যান হিসেবে ১৮ মাস আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সাব-লেফটেন্যান্ট পদে নিয়মিত কমিশন প্রদান করা হয়ে থাকে।     গারোদে র পোশাক পরতে ভালোবাসেন  অর্ণি সাইমন স্বর্ণেন্দু সাংমা ও সুচরিতা রেমার জেষ্ঠ সন্তান সিমব্রি অর্ণি সাংমা ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী। অর্ণি ময়মনসিংহের ভিক্টোরিয়া মিশন প্রাইমারী স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে কৃতিত্বের সাথে মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি ও মুমিনুননেসা সরকারী মহিলা কলেজে হতে এইচএসসি...

সর্বাধিক পাঠ করা লেখা

নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিলেন সিমব্রি অর্ণি সাংমা

জেফিরাজ দোলন কুবি ময়মনসিংহ থেকে,  বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিয়েছেন সিবব্রি অর্ণি সাংমা। তিনি ৫ জানুয়ারী, ২০২২ ঢাকার নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে যোগদান নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে সাংমা গত ৮ জানুয়ারী পতেঙ্গা নাভাল একাডেমীতে ৩ বছর মেয়াদী দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণে যোগ দেন। অর্ণি গারো আদিবাসীদের মধ্যে সর্বপ্রথম নৌবাহিনীর কমিশন্ড র‍্যাংক-এ সুযোগ পেলেন।      বাবা-মা ও বোনদের সাথে  অর্ণি  নৌবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী নৌবাহিনীর নেভাল একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ১৮ মাস ও মিভশিপম্যান হিসেবে ১৮ মাস আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সাব-লেফটেন্যান্ট পদে নিয়মিত কমিশন প্রদান করা হয়ে থাকে।     গারোদে র পোশাক পরতে ভালোবাসেন  অর্ণি সাইমন স্বর্ণেন্দু সাংমা ও সুচরিতা রেমার জেষ্ঠ সন্তান সিমব্রি অর্ণি সাংমা ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী। অর্ণি ময়মনসিংহের ভিক্টোরিয়া মিশন প্রাইমারী স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে কৃতিত্বের সাথে মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি ও মুমিনুননেসা সরকারী মহিলা কলেজে হতে এইচএসসি...

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নিলেন ১১ মেধাবী গারো শিক্ষার্থী

ফৈবি কুবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জায়গা করে নিয়েছেন ১১ জন গারো কৃতি শিক্ষার্থী। তাঁরা ২০২০-২০২১ সেশনে ভর্তি হবেন। ডেলা চিরান দৃষ্টি মানখিন যারা বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করলেন তারা হলেন : দৃষ্টি মানখিন (নৃবিজ্ঞান), জেসিকা নকরেক স্বস্তি(আইন), পাপিয়া চিছাম(আইন), ডেলা চিরান (ফিন্যান্স), রিংচি মৃঃ (একাউন্টিং), স্পন্দন রেমা( কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), ইফ্রোইম রেমা (কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), নিঃস্ব রংদী( অর্থনীতি), রুদ্র ম্রং( সমাজবিজ্ঞান), ইসুদুর পল রংদী(পপুলেসন সাইন্স) এবং সাগাল সিমসাং(দর্শন)। পুনশ্চঃ সবার ছবি পাওয়া যায় নি। পাওয়া মাত্র আমরা সবার ছবি দিয়ে দিব ... সংবাদ টি শেয়ার করে বন্ধু - স্বজনদের জানিয়ে দিন

ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাটে ২ গারো আদিবাসী ছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকারঃ ধর্ষকেরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে

ময়মনসিংহ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক,  গত ৩০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটের গাজিরভিটা ইউনিয়নে দুইজন গারো আদিবাসী ছাত্রী গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছে।  ধর্ষিতা ছাত্রীদের বয়স ১৩-১৪ হবে।  জানা গেছে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে রাতের বেলা বাড়ি ফেরার পথে ঐ দুই জন স্কুল ছাত্রী ছয় বখাটে যুবকদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়।  ধর্ষকদের একজনের নাম মোঃ রিয়াদ বলে জানা গেছে। রিয়াদ কচুয়াকুড়া গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল মান্নানের পুত্র এবং বাকী ৫ জন ধর্ষক রিয়াদের বন্ধু বলে জানা গেছে।  এদের বয়স ২০-২৫ এর মধ্যে হবে বলে জানা গেছে।  হালুয়াঘাট থানার ওসি জানিয়েছেন, তাঁরা আসামীদের খুব শীঘ্রই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনবেন।  তবে এলাকাবাসী বলছেন, বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সামাজিক এবং ছাত্র সংগঠনগুলো এখনও অনেক টা নীরব। এই সংগঠনগুলো প্রতিবাদ করলেই কেবল ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন।  বাগাছাস-গাসু-টিডব্লিওএ এর নেতাদের নীরবতায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন এলাকাবাসী। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সেরেজিং সাংমা(ছদ্মনাম) তাঁর ক্ষোভ এবং হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, "বাগাছাস...